যে আমলে জাদুমুক্ত হলেন মহানবী
হুমায়ুন কবীর
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আমরা যেমন মাঝেমধ্যে অসুস্থ হই, আবার কখনো কেউ আমাদের ক্ষতি করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে, তখন আমরা বিপদে পতিত হই; নবীজি (সা.)-এর জীবনেও এমন হয়েছে। কারণ, তিনিও আমাদের মতো মানুষ ছিলেন। কোরআন মাজিদে এসেছে- ‘হে নবী! আপনি বলে দিন, আমিও তোমাদের মতো একজন মানুষ। তবে আমার প্রতি ওহি নাজিল হয় যে, তোমাদের মাবুদ কেবল একজনই।’ (সুরা কাহাফ : ১১০)। আর আল্লাহতায়ালা কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে নবীজি (সা.)কে শেফা দান করেছেন। সুস্থ করে তুলেছেন। কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি এমন কোরআন নাজিল করেছি, যা মোমেনদের জন্য শেফা ও রহমত।’ (সুরা ইসরা : ৮২)। একবারের কথা, হজরত আশেয়া (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.)-এর ওপর জনৈক ইয়াহুদি জাদু করলে তার প্রভাবে তিনি মাঝেমধ্যে দিশেহারা হয়ে পড়তেন এবং যে কাজটি করেননি, তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। একদিন তিনি আয়েশা (রা.)কে বললেন, আমার রোগ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা আমাকে বলে দিয়েছেন। স্বপ্নে দুইজন ব্যক্তি আমার কাছে এলো, একজন মাথার কাছে এবং অন্যজন পায়ের কাছে বসল। মাথার কাছে বসা ব্যক্তি পায়ের কাছে বসা ব্যক্তিকে বলল, লোকটার কী হয়েছে? অন্যজন বলল, তিনি জাদুগ্রস্ত। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, কে জাদু করেছে? অন্যজন বলল, লাবীদ ইবনু আসাম (বনু যুরাইকের এক ইহুদি মুনাফিক ব্যক্তি)। আবার প্রশ্ন করা হলো, কীভাবে জাদু করেছে? উত্তর দেওয়া হলো, একটি চিরুনীতে। আবার প্রশ্ন করা হলো, তা কোথায়? উত্তর দেওয়া হলো, খেজুর ফলের আবরণীতে ‘যরওয়ান’ কূপে একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। তারপর রাসুল (সা.) সেই কূপে গেলেন এবং বললেন, স্বপ্নে আমাকে এই কূপই দেখানো হয়েছে। তারপর বস্তুটি সেখান থেকে বের করে আনলেন। আয়েশা (রা.) বললেন, কে জাদু করেছে আপনি সেটা ঘোষণা করলেন না কেন? রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা আমাকে রোগমুক্ত করেছেন। আর মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হোক, তা আমি চাইনি। (বোখারি : ৫৭৬৫)। আরেক হাদিসে এসেছে জনৈক ইহুদি রাসুল (সা.)-এর ওপর জাদু করেছিল।
ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিবরীল আগমন করে সংবাদ দিলেন যে, জনৈক ইহুদি জাদু করেছে এবং যে জিনিসে জাদু করা হয়েছে, তা অমুক কূপের মধ্যে আছে। রাসুল (সা.) লোক পাঠিয়ে সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করে আনলেন। তাতে কয়েকটি গ্রন্থি ছিল। তিনি গ্রন্থিগুলো খুলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে শয্যা ত্যাগ করেন। জিবরীল ইহুদির নাম বলে দিয়েছিলেন এবং রাসুল (সা.) তাকে চিনতেন। কিন্তু তিনি আজীবন এই ইহুদি কিছু বলেননি, এমনকি তার উপস্থিতিতে মুখমণ্ডলে কোনোরকম অভিযোগের চিহ্নও প্রকাশ করেননি। কপটবিশ্বাসী হওয়ার কারণে ইহুদি রীতিমত নবীজির দরবারে হাজির হতো। (মুসনাদে আহমাদ : ৪/৩৬৭)। সুরা ফালাক এবং সুরা নাসের শানে নুযুল তথা নাজিল হওয়ার প্রেক্ষাপটে এসেছে, নবীজি (সা.)কে চিরুনীর মধ্যে মোট ১১টা গিঁট দিয়ে জাদু করা হয়েছিল। সুরা ফালাকের পাঁচ আয়াত এবং সুরা নাসের ছয় আয়াত, এই মোট ১১ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা নবীজিকে শেফা দান করেছিলেন। এরপর এই শেফা আল্লাহতায়ালা উম্মতের জন্যও দান করেছেন। এরপর নবীজি (সা.) যতো দিন জীবিত ছিলেন, তিনি নিয়মিত সুরা ফালাক ও সুরা নাসের আমল করতেন। আর কখনো তিনি এমন জাদুগ্রস্ত হননি। এই দুই সুরাকে মুআওবিযাতাইনও বলা হয়। যার অর্থ আশ্রয় প্রার্থনা করার দুই সুরা।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর উভয় হাতে ফুঁক দিতেন এবং সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়তেন। তারপর দেহের যতোটুকু অংশ সম্ভব হয় হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এমন তিনবার করতেন। (বোখারি : ৫০১৭, তিরমিজি : ৩৪০২)। আরেক হাদিসে এসেছে তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সুরা ইখলাস ও এই দুই সুরা (ফালাক ও নাস) পড়বে. সেসব বিপদণ্ডআপদ থেকে নিরাপদ থাকবে। (তিরমিজি : ২৯০৩, সুনানে আবু দাউদ : ১৫২৩)। আল্লাহতায়ালা নবীজি (সা.)-এর জীবন থেকে পাওয়া এই আমল আমাদের সারাজীবন করার তৌফিক দান করুন। আমাদের আশপাশে, এমন কি কাছের মানুষদের মধ্যেও আমাদের জানা অজানা কত শত্রু রয়েছে, তারা আমাদের নানাভাবে ক্ষতি করতে চায়; সকাল-সন্ধ্যা এই আমলের মাধ্যমে আমরা সেসব ক্ষতি থেকে মুক্ত থাকতে পারব ইনশাআল্লাহ।
লেখক : আলেম, মিরপুর-২, ঢাকা-১২১৬।