ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নবীর ভাষায় মায়ের সম্মান

সাঈদ আহমাদ
নবীর ভাষায় মায়ের সম্মান

মহানবী (সা.) মাত্র কয়েক বছর মায়ের সঙ্গ পেয়েছিলেন। তবুও তিনি তাকে খুব ভালোবাসতেন। তার জন্য ব্যাকুল হৃদয়ে কান্না করতেন। এ সম্পর্কে সিরাতের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থগুলোতে একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়।? হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) তার মায়ের কবর জিয়ারত করেন এবং কবরের পাশে কাঁদেন। অতঃপর বলেন, আমি আমার প্রতিপালকের কাছে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চেয়েছি, আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এরপর আমি তার কবর জিয়ারতের অনুমতি চেয়েছি আমাকে তা দেওয়া হয়েছে। তোমরা কবর জিয়ারত করো।

কেন না, তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়। (মুসলিম : ৯৭৬, আবু দাউদ : ৩২৩৪)।

মহানবী (সা.) হিজরতের কয়েক বছর পর সেই পথ দিয়ে আবারও সাহাবীদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি কিছু সময়ের জন্য বিমূঢ় হয়ে গেলেন। সাহাবীদের সেখানে অবস্থানের নির্দেশ দিয়ে তিনি মায়ের কবর পানে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। দীর্ঘক্ষণ মোনাজাত করলেন। উপস্থিত সাহাবীরাও নবীজির এ অবস্থা দেখে কান্না সংবরণ করতে পারলেন? না। যারা জানতেন যে এখানে প্রিয় নবীর সম্মানিত আম্মাজানের কবর তারা তো বুঝলেনই, আর যারা জানতেন না তারা নবীজির জিয়ারত শেষে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন এটি আমার আম্মাজানের কবর। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৩২৯২)। সাধারণত পিতামাতার ইন্তেকালের কয়েক মাসের মধ্যে সন্তানরা সব ভুলে যায়। অথচ মহানবী (সা.)-এর হৃদয়ে মায়ের প্রতি কত টান ছিল উল্লিখিত হাদিস দুটি থেকে তা বোঝা যায়।

ধাত্রী মায়ের প্রতি সম্মান : মহানবী (সা.)-এর আরেক মায়ের নাম ?বারাকাহ বিনতে সালাবা?। তিনি? উম্মে আইমান নামে পরিচিত।? তিনি প্রথমদিকের একজন মুসলিম এবং মহানবীর ধাত্রী মা ছিলেন। ইমাম বোখারি (রহ.) তার অমর কীর্তি সহিহ বোখারির ৩৭৩৫ নং হাদিসের শেষাংশে বলেন, সুলাইমান ইবনে আব্দুর রহমান (রহ.) বলেন, তিনি ছিলেন মহানবীর ধাত্রী। তার সম্মান ও গুরুত্ব বোঝাতে একদা রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, আমার মায়ের ইন্তেকালের পর উম্মে আয়মানই আমার মা।

(তারিখে ইবনে আসাকির : ৮/৫১) ইন্তেকালের আগে রাসুল (সা.) সাহাবীদের বলেছিলেন, উম্মে আইমানের যত্ন নেবে। তিনি একমাত্র নারী যিনি আমাকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত দেখেছেন। প্রিয় নবীর ওফাতের পর প্রথম খলিফা আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ওমর বিন খাত্তাব (রা.) কে বললেন, চলুন আমরা উম্মে আইমানের সঙ্গে দেখা করতে যাই। যেমন দেখা করতে যেতেন নবীজি (সা.)। অতঃপর উভয়ে যখন তার কাছে পৌঁছালেন, তখন তিনি (উম্মে আইমান) কেঁদে ফেললেন। তারা তাকে বললেন, আপনি কাঁদছেন কেন? আপনি কি জানেন না যে, আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তা রাসুলের জন্য দুনিয়া থেকে অধিক উত্তম? উম্মে আইমান বললেন, আমি এজন্য কাঁদছি যে আসমান থেকে অহি আসা বন্ধ হয়ে গেল। উম্মে আইমান তার এই কথার দ্বারা উভয়কেই কাঁদতে বাধ্য করলেন। ফলে তারাও তার সঙ্গে কাঁদতে লাগলেন। (মুসলিম : ২৪৫৪, ইবনে মাজাহ : ১৬৩৫)।

নবীর ভাষায় মায়ের সম্মান : মহানবী (সা.) ছিলেন বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ। তার রহমতের ছোঁয়া পেয়ে পৃথিবীর সব মা দামি হয়েছেন।? পেয়েছেন ন্যায্য অধিকার। এ সম্পর্কে অসংখ্য বর্ণনা আছে।? বিখ্যাত হাদিসটি বর্ণনা করেন হজরত আবু হুরায়রা (রা.)। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমার সর্বোত্তম ব্যবহারের হকদার কে? রাসুল (সা.) বললেন, তোমার মা।

লোকটি আবার বলল, অতঃপর কে? রাসুল (সা.) বললেন, তোমার মা। লোকটি আবার বলল, অতঃপর কে? রাসুল (সা.) বললেন, তোমার মা। লোকটি আবার বলল, তারপর কে? রাসুল (সা.) বললেন, অতঃপর তোমার পিতা। (বোখারি : ৫৫১৪, মুসলিম : ৪৬২১)। পিতা-মাতার সেবা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর মাধ্যমে জান্নাতের টিকিট বুকিং করা যায়।

এ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, নামাজ সঠিক সময়ে আদায় করা এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা আমলসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম আমল। (বোখারি : ৫২৭ মুসলিম : ৮৫, তিরমিযি : ১৭৩)। রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, মানুষ তার পরিবারের জন্য সাওয়াবের নিয়তে যখন খরচ করে, তখন তা হয় তার সদকাস্বরূপ। (নাসায়ি : ২৫৪৫)।

আজ পৃথিবীর সব মানুষ যদি পিতা-মাতার খেদমতে অর্থ খরচ করে তাহলে আর কোথাও বৃদ্ধাশ্রমের কোনো প্রয়োজন হবে না। শান্তি সুখের সৌরভে ভরে উঠবে দুনিয়া ও আখেরাত। নবীর উম্মত হিসেবে সিরাত ও মিলাদের এ মাসে আমাদের মনে রাখা উচিত নবী (সা.) বলেছেন, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।’ এ কথার সহজ অর্থ হলো, মায়ের সেবা করে তার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে জান্নাত পাওয়া যায়।

লেখক : কবি ও আলেম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত