নামাজের উপকারিতা

ইসমাঈল আমিন

প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলামের অন্যতম রোকন হলো নামাজ। চির সত্যভাষী নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামের ভিত্তি নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচটি জিনিসের ওপর- একত্ববাদের সাক্ষ্য প্রদান, নামাজ, জাকাত, রোজা ও হজ।’ (বোখারি)। আমলের বিবেচনায় প্রথম ও মূল স্তম্ভ এই নামাজ। কারণ, অন্যসব রোকনের তুলনায় নামাজের ভূমিকা ইসলামে সীমাহীন। অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘নামাজ হচ্ছে দিনের খুঁটি। সুতরাং যে তা ছেড়ে দিল, সে দ্বীনকে বরবাদ করল।’ (এহয়াউ উলুমিদ্দিন : ১৮৭)। একটি ভবন যেমন খুঁটি ছাড়া সোজা হয়ে দাঁড়াতে সক্ষম নয়, নামাজ ছাড়া সঠিক মুসলিম হওয়াও সম্ভব নয়। নামাজ কখনো কারো থেকে মাফ হয় না। নামাজ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই মোমিনের প্রিয় আমল ও শান্তির ইবাদত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার চোখের শীতলতা রয়েছে নামাজে।’ (সুনানে নাসাঈ : ৩৯৫০)। এমনকি যখন নামাজের সময় হতো, রাসুল (সা.) বেলাল (রা.)-কে ডেকে বলতেন, ‘নামাজের ব্যবস্থা কর। আমাকে শান্তি দাও।’

আলো ও পথপ্রদর্শক : নামাজে রয়েছে ইহ-পরকালের উপকারিতা। নামাজ যেমন শ্রেষ্ঠ ইবাদত, অনুরূপ এর প্রতিদানও সর্বাধিক মূল্যবান। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় কর। জাকাত দাও। আমিরের আনুগত্য কর। অতঃপর তোমাদের রবের জান্নাতে দাখিল হয়ে যাও।’ (তিরমিজি : ৬১৬)। কেয়ামতের নিরাচ্ছন্ন মুহূর্তে নামাজ হবে আলোর পথপ্রদর্শক। আল্লাহতায়ালার বিশেষ রহমত ছাড়া সেদিন কেউ পা ফেলতে পারবে না। এমন করুণ সময়ে নামাজ আলো হয়ে নামাজিকে পথ দেখাবে। তার জান্নাতি হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যত্নের সঙ্গে নামাজ আদায় করে, কেয়ামত দিবসে সেটা তার জন্য আলো ও প্রমাণ হবে। মুক্তির উপায় হবে।’ (সুনানে বাইহাকি : ২৭২৩)।

সময়ের যথার্থ মূল্যায়ন : আমাদের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় গোনাহে জর্জরিত। রাব্বুল আলামিনের নাফরমানিতে আমরা মত্ত থাকি সবসময়। আমরা যখন নামাজের মাধ্যমে রবের সামনে দাঁড়াই, তিনি সব গোনাহ মাফ করে দেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যখন কোনো মুসলমান নামাজ আদায় করে, তখন তার গোনাহগুলো ঝরা পাতার মতো ঝরে যায়।’ (মুসনাদে আহমদ : ৫/১৭৯)। নামাজ জীবনকে গুছিয়ে একটি রুটিনভিত্তিক জীবন পরিচালনা করতে শেখায়। কারণ, যে ফজরের নামাজ পড়ে, অবশ্যই তাকে রাত শেষে দিনের শুরুতে ঘুম থেকে উঠতে হয়। এ জন্য তাকে রাতে দ্রুত শুয়ে পড়তে হয়। এভাবে পাঁচওয়াক্ত নামাজ সময়মতো আদায় করার জন্য তার সব কাজ নির্দিষ্ট সময়ে করে ফেলতে হয়। ফলে তার সময়গুলো অনর্থক নষ্ট হওয়া থেকে বেঁচে যায়। জীবনে সফলতার প্রথম সিঁড়ি হলো, সময়ের যথার্থ মূল্যায়ন করা। নামাজ সেটা শেখায়।

আত্মশুদ্ধির নিয়ামক : নামাজ আমাদের মন-মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়। একজন নামাজি যখন দিনে পাঁচবার ধ্যান-ধারণাকে রবের প্রতি নিবিষ্ট রেখে নামাজ আদায় করে, এমনিতেই তার নিজের ওপর এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়ে যায়। আর আত্মাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাই সফলতার মূলমন্ত্র। নামাজ নামাজিকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখে। যে নামাজি হক আদায় করে নামাজ পড়ে, আল্লাহ তার অভ্যন্তরে এমন এক অবস্থা সৃষ্টি করে দেন, সে চাইলেও কোনো মন্দ কাজ করতে পারে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ নামাজিকে মন্দ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত : ৪৫)।

লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকা