ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মদিনা শরিফের জুমার খুতবা

আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব ও তাৎপর্য

শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল বুয়াইজান
আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব ও তাৎপর্য

অ ন্তর হলো মানুষের ভালো-মন্দের পাত্র, ঈমান ও কুফরির উৎপত্তিস্থল, শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মূল। অন্তর আমাদের শরীরকে পরিচালনা করে। অন্তর বিবেকের নিয়ন্ত্রক। অন্তরের পরিশুদ্ধি পুরো শরীরকে পরিশুদ্ধ করে; আবার অন্তরের কলুষতা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে কলুষিত করে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক শরীরের এমন একটি অঙ্গ আছে, যা শুদ্ধ কিংবা কলুষতা মুক্ত হলে পুরো শরীর তথা জীবনযাপন পরিশুদ্ধ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে এ অঙ্গটি যদি কলুষিত হয়, তাহলে পুরো শরীর কলুষিত হয়ে যায়। সেই অঙ্গটি হলো, কলব তথা অন্তর।’ (মুসলিম : ৪১৭৮)।

কর্মের গ্রহণযোগ্যতা নিয়তের ওপর নির্ভরশীল : অন্তর হচ্ছে পছন্দ ও ইচ্ছাশক্তির উৎস, পরীক্ষা করার ভিত্তি, আমল কবুল হওয়ার মাধ্যম, প্রতিদান ও শাস্তি বৃদ্ধির কারণ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘বান্দার প্রত্যেক কর্মের গ্রহণযোগ্যতা তার নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি তা-ই পাবে, যা সে নিয়ত করে।’ (বোখারি : ১)। নিয়ত হচ্ছে প্রতিদান বৃদ্ধির মাধ্যম। ভালো কাজের নিয়তেও আল্লাহ? প্রতিদান দান করেন। পক্ষান্তরে খারাপ কাজের নিয়ত করলে গোনাহ হয় না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ ভালো কাজের নিয়ত করার পরে তা করতে না পারে, তাহলে তার এ নিয়তের জন্য উত্তম প্রতিদান দেওয়া হবে। আর যদি তা আমলে পরিণত হয়, তাহলে দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রতিদান দেওয়া হবে। পক্ষান্তরে কেউ যদি খারাপ কাজের নিয়ত করে, তাহলে তার শুধু নিয়তের জন্য গোনাহ হবে না; কিন্তু খারাপ কাজ সংগঠিত হয়ে গেলে তার জন্য একটা গোনাহই লেখা হবে।’ (মুসলিম : ৩৫৫)। আমল কবুল হওয়ার জন্য পরিশুদ্ধ নিয়ত শর্ত। ঠিক তেমনিভাবে শাস্তির জন্যও নিয়ত শর্ত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এ ব্যাপারে তোমাদের কোনো বিচ্যুতি হলে তাতে তোমাদের কোনো গোনাহ নেই। তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আহজাব : ৫)।

অন্তর পরিবর্তনশীল : অন্তরগুলো দ্রুত পরিবর্তন হয়। রূপান্তর হয় ভিন্ন ভিন্ন আঙিকে। মিকদাদ বিন আল আসওয়াদ (রা.) বলেন, আমি একটি কথা রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে শোনার পর একজন ব্যক্তি সম্পর্কে ভালো বা মন্দ বলি না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি দেখি- কোনো এক বিষয়ে তার ওপর সিল মেরে দেওয়া হয়েছে। আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আদম সন্তানের অন্তর পাতিলে থাকা ফুটন্ত ও টগবগ করা পানি থেকেও অধিক পরিবর্তন হয়, যখন তাতে উত্তাপ দেওয়া হয়। মানুষের নাম ইনসান রাখা হয়েছে। কারণ, মানুষ ভুলে যায়। অন্তরকে কলব বলা হয়। কারণ, তা দ্রুত পরিবর্তন হয়।’ (মুসনাদে আহমদ : ২৩৯)।

আল্লাহ অন্তরের পরীক্ষা নেন : আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন কষ্ট-ক্লেশ, বিপদাপদ ইত্যাদির মাধ্যমে অন্তরকে পরীক্ষা করেন। যারা ধৈর্যের সঙ্গে আল্লাহর এ পরীক্ষার সময় তার আনুগত্য করে এবং আল্লাহর সঙ্গে কোনো ধরনের নাফরমানি না করে, তারা ইহকাল ও পরকালে সৌভাগ্যবান এবং ঈমানের ওপর অবিচল। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ পার্থিব জীবনে এবং পরকালে মোমিনদের মজবুত বাক্য দ্বারা দৃঢ় করেন। তিনি জালেমদের পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা করতে পারেন।’ (সুরা ইবরাহিম : ২৭)। হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমাদের হৃদয়কে আপনার আনুগত্যের দিকে পরিবর্তন করে দিন। হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমাদের অন্তরকে মৃত্যু পর্যন্ত অবিচল রাখুন।

অন্তর পরিবর্তন হয় আল্লাহর ইচ্ছায় : আমাদের অন্তর হচ্ছে আল্লাহর দুই আঙুলের মাঝখানে। তিনি যখন যেভাবে ইচ্ছা, পরিবর্তন করতে পারেন। উম্মে সালামা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে উম্মুল মুমিনিন! আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন আপনার কাছে থাকতেন, তখন কোন দোয়া বেশি বেশি করতেন?’ তিনি বললেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন- ‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে মৃত্যু পর্যন্ত দ্বীনের ওপর অবিচল রাখুন।’ উম্মে সালামা আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনি এ দোয়া কেন এত বেশি বেশি পাঠ করেন?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘হে উম্মে সালামা! প্রত্যেক আদম সন্তানের অন্তর আল্লাহর দুই আঙুলের মাঝে। যখন তিনি ইচ্ছা করেন, তা অবিচল রাখেন; আবার চাইলে ভ্রষ্ট করে দেন।’ (তিরমিজি : ৩৫২২)। হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত কোরো না। আমাদের ওপর তোমার অনুগ্রহ দান করো। তুমিই সবকিছুর দাতা।’ (সুরা আলে ইমরান : ৮)।

অন্তরের পবিত্রতা জরুরি : অন্তরের যত্ন নেওয়া, অন্তরকে পবিত্র করা এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ করা আবশ্যক। রাসুল (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাকে উত্তম পথে পরিচালিত করুন। অন্তরকে সব ধরনের অনিষ্ট থেকে মুক্ত রাখুন।’ তাই অন্তরের সংস্কার ও আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য তৎপর হওয়া চাই। কারণ, যে ব্যক্তি তার অভ্যন্তর সংশোধন করে, আল্লাহ তার চেহারা সংশোধন করেন। আর যে তার গোপনীয়তা সংশোধন করে, আল্লাহ তার প্রকাশ্যবিষয় সংশোধন করে দেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ?তায়ালা মানুষের শরীর অথবা ধন-সম্পদ দেখেন না। বরং তিনি আমাদের অন্তর এবং আমল দেখেন।’ (মুসলিম : ৬৭০৭)। তাই প্রকাশ্য বিষয় সংশোধন করা চাই। অন্তর পবিত্র রক্ষা জরুরি। আল্লাহর সঙ্গে সব ব্যাপারে সৎ থাকতে হবে। তাহলে আল্লাহতায়ালা কামিয়াবি দান করবেন। দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা অর্জিত হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা তওবা : ১১৯)।

মদিনার মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন- আল মামুন নূর

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত