ইসলামে কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। সামর্থ্যবান প্রত্যেক নারী-পুরুষের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত মোট ৩ দিন কোরবানি করা যায়। তাই কোরবানির যাবতীয় প্রস্তুতি আগে থেকেই সম্পন্ন করতে হয়। শরিয়তে নির্দেশিত ও নির্ধারিত পশুর মাধ্যমে কোরবানি করতে হয়। এখানে সংক্ষেপে কোরবানির পশু সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় আলোচনা করা হলো।
কোরবানির নির্ধারিত পশু : কোরআনে কোরবানি যোগ্য পশু নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বাহিমাতুল আনআম শব্দে গৃহপালিত বিশেষ বিশেষ প্রাণীকে বুঝিয়েছে। আর তা হলো উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। এ ছাড়া অন্য পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ নয়। ইরশাদ হয়েছে, আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি। যাতে আল্লাহ তাদের যে চতুষ্পদ জন্তুগুলো দিয়েছেন, তাতে তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের মাবুদ একই মাবুদ। সুতরাং তোমরা তারই আনুগত্য করবে। আর সুসংবাদ দাও বিনীতদের। (সুরা হজ : ৩৪)। হালাল প্রাণী জবাই করার সময় আল্লাহর কথা স্মরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জবাই যেন একমাত্র তারই উদ্দেশ্যে হয় সেটার খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমলের মাধ্যমে তার নমুনা দেখিয়েছেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) দুই শিংওয়ালা সাদা কালো বর্ণের দুটি দুম্বা কোরবানি করেন। তিনি আরো বলেন, আমি তাকে দুম্বা দুটি নিজ হাতে জবাই করতে দেখেছি। আরও দেখেছি, তিনি সে দু’টির কাঁধের পাশে তার পা দিয়ে চেপে রাখেন এবং বিসমিল্লাহ ও আল্লাহ আকবর বলেন। (মুসলিম : ৪৯২৮)।
কোরবানির পশুর বয়স : শরিয়ত কোরবানির পশুর বয়স নির্ধারিত করে দিয়েছে। এর কম হলে জায়েজ হবে না। উট কমপক্ষে ৫ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কম হয়েও এমন মোটাতাজা দেখায়, যা ১ বছরের মতো মনে হয়, তাহলে তার দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা কমপক্ষে ১ বছরের পশু (বকরি) কোরবানি করবে। তবে এটা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে তোমরা ৬ মাসের মেষশাবক কোরবানি করতে পারো। (মুসলিম : ৪৯২২, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫)।
ভাগে কোরবানির বিধান : ভাগে কোরবানি দেওয়া জায়েজ। তবে শর্ত হলো সবার অংশ সমান হতে হবে। আর সবাইকে বিশুদ্ধ নিয়তে কোরবানি দিতে হবে। শরিকদের মধ্যে কারো গোশত খাওয়ার নিয়ত থাকলে কারো কোরবানি কবুল হবে না। এজন্য খুব সতর্কতার সঙ্গে শরিক নির্বাচন করতে হয়। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮)। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদির ক্ষেত্রে একটি পশু শুধু এক ব্যক্তি কোরবানি দিতে পারে। তাতে একাধিক অংশ নেওয়া জায়েজ নেই। কিন্তু গরু, মহিষ ও উটে সর্বোচ্চ সাতজন ব্যক্তি অংশ নিতে পারে। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা হজের ইহরাম বেঁধে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রওনা হলাম। তিনি আমাদের প্রতিটি উট বা গরু সাতজনে মিলে কোরবানি করার নির্দেশ দিলেন। (মুসলিম : ৩০৫৬)।
কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য : কোরবানির পশুর শিং, পশম, খুর ইত্যাদি সবকিছুর মূল্য আছে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, কেয়ামতের দিন কোরবানি দাতার পাল্লায় সবকিছু এসে হাজির হবে। তাই কোরবানির পশু সুস্থ-সবল ও মোটাতাজা হওয়া উচিত। যেন মিজানের পাল্লা নেকিতে পরিপূর্ণ করতে পারে। অসুস্থ এবং দুর্বল প্রাণী দ্বারা কোনোভাবে কোরবানি দেওয়া ঠিক নয়। উবাইদ ইবনে ফাইরুজ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বারা ইবনে আজিব (রা.) কে বললাম, রাসুলুল্লাহ (সা.) যে ধরনের পশু কোরবানি করতে অপছন্দ অথবা নিষেধ করেছেন, সে সম্পর্কে আমাদের বলুন। তখন তিনি বলেন, রাসুল (সা.) তার হাতের ইশারায় বলেন, এরূপ আর আমার হাত তার হাতের চেয়ে ক্ষুদ্র। চার প্রকারের পশু দিয়ে কোরবানি করলে তা যথেষ্ট হবে না। অন্ধ পশু যার অন্ধত্ব সুস্পষ্ট, রুগ্ণ পশু যার রোগ সুস্পষ্ট, পঙ্গু পশু যার পঙ্গুত্ব সুস্পষ্ট এবং কৃশকায় দুর্বল পশু, যার হাড়ের মজ্জা শুকিয়ে গেছে। উবাইদ (রহ.) বলেন, আমি ত্রুটিযুক্ত কানবিশিষ্ট পশু কোরবানি করা অপছন্দ করি। বারা (রা.) বলেন, যে ধরনের পশু তুমি নিজে অপছন্দ কর তা পরিহার করো এবং অন্যদের জন্য তা হারাম করো না। ( ইবনে মাজা : ৩১৪৪ )।