রাসুলের আনুগত্যে প্রকৃত সফলতা
আবদুল কাইয়ুম শেখ
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মানব জাতিকে সঠিক ও সত্যপথ প্রদর্শন করার জন্য আল্লাহতায়ালা মুহাম্মদ (সা.)কে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর ওপর পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করে তাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘হে রাসুল, আপনি (সে বার্তা) পৌঁছে দিন, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তা হলে আপনি তার পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না।’ (সুরা মায়েদা : ৬৭)। আল্লাহতায়ালার এই নির্দেশ অনুযায়ী মহানবী (সা.) পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন মানবজাতির জন্য জরুরি হলো রাসুল (সা.)-এর কথা, কাজ ও আনিত বিধানের পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য করা।
আনুগত্যের ঐশী নির্দেশ : মহাগ্রন্থ আল কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহতায়ালা মানব জাতিকে সম্বোধন করে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) কে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই মানবজাতির জন্য অপরিহার্য হলো ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে মহানবী (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ ও আনুগত্য করা। রাসুল (সা.) কে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ মান্য করো এবং শোনার পর তা থেকে বিমুখ হয়ো না।’ (সুরা আনফাল : ২০)। আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ মান্য করা ঈমানের পরিচায়ক। প্রকৃত মোমিন ব্যক্তি কখনো আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ লঙ্ঘন করতে পারে না। কেন না, আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য ও যথার্থ অনুসরণ ছাড়া মোমিন হওয়া যায় না। আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য ও যথার্থ অনুসরণ মোমিন হওয়ার পূর্বশর্ত। এ বিষয়টি পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট করে বলেন, ‘আল্লাহ এবং তার রাসুলের হুকুম মান্য করো, যদি ঈমানদার হয়ে থাক।’ (সুরা আনফাল : ১)।
আনুগত্যেই প্রকৃত জীবন : মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। এরপর তার বাণী আমাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যুগে যুগে নবী পাঠিয়েছেন। এ ধারায় সর্বশেষে মহানবী মুহাম্মাদ (সা.) কে প্রেরণ করেছেন। এখন যদি কোনো ব্যক্তি নিজের স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহতায়ালা এবং তার রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য না করে, তাহলে তার জীবন প্রকৃত অর্থে জীবন নয়। এমন জীবনকে পশুর জীবন বলে অভিহিত করলেও বাড়িয়ে বলা হবে না।
আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশের আনুগত্যে মানুষের প্রকৃত জীবন রয়েছে ব্যক্ত করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ মান্য কর, যখন তোমাদের সে কাজের প্রতি আহ্বান করা হয়; যাতে রয়েছে তোমাদের জীবন।’ (সুরা আনফাল : ২৪)।
আল্লাহর ভালোবাসা লাভ : কেউ কারো আনুগত্য করলে অনুসৃত ব্যক্তি আনুগত্যকারীকে ভালবাসে ও সম্মান করে। ঠিক তেমনিভাবে কেউ যদি মহান আল্লাহ ও তার রাসুলকে অনুসরণ করে, তাহলে আল্লাহতায়ালাও ওই ব্যক্তিকে ভালোবাসেন ও মর্যাদা দান করেন। আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য করার মাধ্যমে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহতায়ালার মহব্বত ও ভালোবাসা লাভ করা যায়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, যাতে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন অতি ক্ষমাশীল, দয়ালু। বলে দাও, আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করো। বস্তুত যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আলে ইমরান : ৩১-৩২)। এ আয়াত থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়, আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে রাসুলের আনুগত্য জরুরি।
আনুগত্যেই সফলতা : প্রতিটি ব্যক্তি সফল হতে চায়। কিন্তু সফল হওয়ার উপায় নির্বাচনে ভুল করে বহু মানুষ। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে সফল হওয়ার বিভিন্ন উপায় বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্যে মহাসাফল্য রয়েছে মর্মে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।’ (সুরা আহজাব : ৭১)।
পার্থিব জীবন একদিন শেষ হয়ে যাবে। পরকালীন জীবন ক্ষয়, লয়হীন ও অবিনশ্বর। তা কখনো শেষ হবে না। অতএব, যেসব লোক পরকালীন সুখ-শান্তির অধিকারী হবে, তারাই প্রকৃত সফল। যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করে তারা চির সুখের জান্নাতের অধিকারী হয়ে সফল হবে মর্মে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে কেউ আল্লাহ ও রাসুলের আদেশমতো চলে, তিনি তাকে জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে ঝর্না প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ হল বিরাট সাফল্য।’ (সুরা নিসা : ১৩)।
মান্যতায় হয় মান্যবর : বিশ্বজুড়ে কাফের, বেদ্বীন ও বেঈমানেরা মুসলমানদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে আছে। তারা নানাভাবে বিশ্ব মুসলিমের ওপর শাসনের ছড়ি ঘুরাচ্ছে। ছলে বলে কৌশলে বিভিন্ন উপায়ে দিন দিন মুসলিম জাতির উপর প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। এর একমাত্র কারণ হলো মুসলমানরা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য বর্জন করার সঙ্গে সঙ্গে শতধা বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলো দ্বিধা বিভক্ত হয়ে হীনবল হয়ে পড়েছে।
মুসলিম উম্মাহর এই দুরবস্থা হতে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করা। আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ মান্য করা এবং পরস্পরে কলহ বিবাদে লিপ্ত না হওয়ার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার নির্দেশ মান্য কর এবং তার রাসুলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। যদি তা করো, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা আছেন ধৈর্যশীলদের সঙ্গে’ (সুরা আনফাল : ২৪)।
জান্নাতে মহান ব্যক্তিদের সঙ্গী হবে : পরকালে জান্নাতের অধিকারী হবে সেসব লোক, যারা দুনিয়ায় আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করবে। তারা জান্নাতে নবী, সিদ্দিক, শহিদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গের সঙ্গলাভ করে পরম সৌভাগ্যের অধিকারী হবে। তারা এই মহান ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে শান্তি সুখের জীবন অতিবাহিত করতে থাকবে।
পরকালীন জীবনে তাদের কোনো দুঃখ-কষ্ট থাকবে না। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ এবং তার রাসুলের আনুগত্য করবে, তারা সেসব লোকদের সঙ্গে (জান্নাতে) থাকবে, যাদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন আর তারা হলেন- নবী, সিদ্দিক, শহিদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর কতই না উত্তম সঙ্গী তারা।’ (সুরা নিসা : ৬৯)।
অবাধ্যতার পরিণাম : দুনিয়ার জগতে কোনো ব্যক্তি রাজা-বাদশাহ বা তার দূতের আদেশ লঙ্ঘন করলে তার পরিণতি শুভ হয় না। অনেক সময় এমন ব্যক্তিকে জেল জুলুমের শিকার হতে হয় কিংবা ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হয়। অনুরূপভাবে কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহ ও তার রাসুলের আদেশ অমান্য করে, তাহলে তার পরিণামও শুভ হবে না। এমন ব্যক্তিকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে ও জাহান্নামের আগুনে প্রজ্জ্বলিত হতে হবে। যেসব লোক আল্লাহ ও তার রাসুলের আদেশ লঙ্ঘন করে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে কেউ আল্লাহ ও রাসুলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।’ (সুরা নিসা:১৪)।
লেখক : শিক্ষক ও অনুবাদক