ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নুহ (আ.)-এর পরিচয়

নুহ নবীর সন্তানরাই পৃথিবী আবাদকারী

মুফতি শাহ আমিমুল ইহসান সিদ্দিকি
নুহ নবীর সন্তানরাই পৃথিবী আবাদকারী

নুহ (আ.) মানবজাতির দ্বিতীয় পিতা বলে খ্যাত। তিনি ছিলেন আদি পিতা আদম (আ.)এর দশম অথবা অষ্টম অধঃস্তন পুরুষ। আর দুনিয়াতে তিনি ছিলেন প্রথম রাসুল।

আল্লাহর পথে আহ্বান : প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী আদম (আ.) পথকে নুহ (আ.) পর্যন্ত ১ হাজার বছরের ব্যবধান ছিল। তিনি সাড়ে ৯ শত বছর হায়াত পেয়েছিলেন। আদম (আ.) এর পরে ৯০০ বছর অতিবাহিত হলে ক্রমবর্ধমান মানবসমাজে শিরক ও কুসংস্কারের আবির্ভাব ঘটে এবং তা ব্যাপকতা লাভ করে। তখন তাদের সংশোধনের জন্য আল্লাহ নুূহ (আ.)-কে নবী ও রাসুল হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। তিনি তার পুরো জীবন পথভোলা মানুষকে সঠিক পথে আনার জন্য দাওয়াতে অতিবাহিত করেন। নুহ (আ.)-এর দাওয়াতে তার কওমের হাতেগোনা অল্প কয়েকজন লোক সাড়া দেন এবং তারাই মহাপ্লাবনের সময় নৌকারোহণের মাধ্যমে নাজাত পান।

পৃথিবী আবাদে বিশ্বাসী মানুষ

নুহ (আ.) এর সময়ে মহাপ্লাবনের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা পৃথিবীকে কাফেরমুক্ত করেন। কুফর শিরক ও অবাধ্যতার অপবিত্রতা থেকে পৃথিবীকে পবিত্র করেন। এর পর পৃথিবীতে তার অনুগত বান্দারা বসবাস করতে থাকে। ক্রমে বাড়তে থাকে মানুষ। আদম (আ.) এর পরে প্রায় ১ হাজার বছর গত হলে নুহ (আ.) এর বংশধরদের মাধ্যমে দ্বিতীয় দফায় পৃথিবীর আবাদ শুরু হয়। এবার মানুষ বৃদ্ধি ও পৃথিবী আবাদের মূলে ছিলেন নুহ (আ.) এর তিন ছেলে-সাম, হাম ও ইয়াফেছ এবং তাদের বংশধররা। ইমাম তিরমিজি (রহ.) সামুরা (রা.) প্রমুখ রাসুল (সা.) হতে সুরা ছাফফাত ৭৭ আয়াতের তাফসিরে বর্ণনা করেন, নুহ (আ.)-এর সময়ের মহাপ্লাবন শেষে শুধু তার তিন ছেলে সাম, হাম ও ইয়াফেছ-এর বংশধররাই অবশিষ্ট ছিল। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘সাম আরবের পিতা, হাম হাবশার পিতা এবং ইয়াফেছ রোমকদের (গ্রীক) পিতা’। ইবনে আববাস ও ক্বাতাদাহ (রা.) বলেন, পরবর্তী মানব জাতি সবাই নুহ (আ.) এর বংশধর’। নুহ (আ.) কে তার উম্মত কষ্ট দেওয়ায় এবং তার দাওয়াতি ডাকে সাড়া না দেওয়ায় তিনি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য বদদোয়া করেন। ‘হে প্রভু! পৃথিবীতে একজন কাফের গৃহবাসীকেও তুমি ছেড়ে দিও না’। ‘যদি তুমি ওদের রেহাই দাও, তাহলে ওরা তোমার বান্দাদের পথভ্রষ্ট করবে এবং ওরা কোন সন্তান জন্ম দিবে না পাপাচারী ও কাফের ছাড়া’ (সুরানুহ : ২৬-২৭)। নুহ.(আ.)-এর এ দোয়া আল্লাহ সঙ্গে সঙ্গে কবুল করেন। যার ফলে তারা ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয় আর মুষ্টিমেয় মোমিন নর-নারী বদদোয়ার প্রতিফল প্লাবন থেকে মুক্তি পায়। বর্তমান পৃথিবীর সবাই সেই মুক্তিপ্রাপ্ত ঈমানদারদের বংশধর। কাজেই বলা যায়, পৃথিবীতে মানুষ বসবাসের শুরুটা ছিল আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী মানুষ দ্বারা।

কোরআনে প্লাবনের বর্ণনা : নুহ (আ.) এর কওম ঈমানের ডাকে সাড়া না দিলে আল্লাহ তাদের শাস্তির সিদ্ধান্ত নেন। কোরআনে এর বর্ণনায় এসেছে- ‘তুমি আমার সম্মুখে আমারই নির্দেশনা মোতাবেক একটা নৌকা তৈরি করো এবং (স্বজাতির প্রতি দয়া- পরবশ হয়ে) জালেমদের ব্যাপারে আমাকে কোনো কথা বলো না। অবশ্যই ওরা ডুবে মরবে’ (সুরা হুদ : ৩৭)। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর নুহ নৌকা তৈরি শুরু করল। তার কওমের নেতারা যখন পাশ দিয়ে যেত, তখন তারা তাকে বিদ্রুপ করত। নুহ তাদের বলল, তোমরা যদি আমাদের উপহাস করে থাক, তবে জেনে রেখোম তোমরা যেমন আমাদের উপহাস করছ, আমরাও তেমনি তোমাদের উপহাস করছি’ (৩৮)। ‘অচিরেই তোমরা জানতে পারবে লাঞ্ছনাকর আজাব কাদের ওপরে আসে এবং কাদের ওপরে নেমে আসে চিরস্থায়ী গজব’ (৩৯)। আল্লাহ বলেন, ‘অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে গেল এবং চুলা উদ্বেলিত হয়ে উঠল, (অর্থাৎ রান্নার চুলা হ’তে পানি উথলে উঠল), তখন আমি বললাম, সর্বপ্রকার জোড়ার দু’টি করে এবং যাদের ওপরে আগেই হুকুম নির্ধারিত হয়ে গেছে, তাদের বাদ দিয়ে তোমার পরিবারবর্গ ও ঈমানদারদের নৌকায় তুলে নাও। বলাবাহুল্য, অতি অল্প সংখ্যক লোকই তার সঙ্গে ঈমান এনেছিল’ (৪০)। ‘নুহ তাদের বলল, তোমরা এতে আরোহণ কর। আল্লাহর নামেই এর গতি ও স্থিতি। নিশ্চয়ই আমার প্রভু অতীব ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (৪১)।

‘অতঃপর নৌকাখানি তাদের বহন করে নিয়ে চলল পর্বতপ্রমাণ তরঙ্গমালার মাঝ দিয়ে। এ সময় নুহ তার পুত্রকে (কেনআনকে) ডাক দিল- যখন সে দূরে ছিল, হে বৎস! আমাদের সঙ্গে আরোহণ করো, কাফেরদের সঙ্গে থেক না’ (৪২)। ‘সে বলল, অচিরেই আমি কোনো পাহাড়ে আশ্রয় নেব। যা আমাকে প্লাবনের পানি হতে রক্ষা করবে’। নুহ বলল, ‘আজকের দিনে আল্লাহর হুকুম থেকে কারো রক্ষা নেই, একমাত্র তিনি যাকে দয়া করবেন সে ব্যতীত। এমন সময় পিতা-পুত্র উভয়ের মাঝে বড় একটা ঢেউ এসে আড়াল করল এবং সে ডুবে গেল’ (৪৩)। অতঃপর নির্দেশ দেওয়া হলো, হে পৃথিবী! তোমার পানি গিলে ফেল (অর্থাৎ হে প্লাবনের পানি! নেমে যাও)। হে আকাশ! ক্ষান্ত হও (অর্থাৎ তোমার বিরামহীন বৃষ্টি বন্ধ কর)। অতঃপর পানি হ্রাস পেল ও গজব শেষ হলো। ওদিকে জূদী পাহাড়ে গিয়ে নৌকা ভিড়ল এবং ঘোষণা করা হলো, জালেমরা নিপাত যাও’ (৪৪)। পৃথিবীতে যখন কুফর, শিরকসহ বিবিধ পাপাচার বেড়ে যায়, তখন বড় বড় আজাব ও শাস্তি দিয়ে আল্লাহ পৃথিবীকে পবিত্র করেন। পাপীদের ধ্বংস করেন। এটাই আল্লাহর চিরাচরিত নিয়ম।

লেখক : ইমাম ও খতিব, মসজিদণ্ডই বাইতুস সালাম (পিয়াসসা সেন্টার জামে মসজিদ), পিয়েভে দি সলিগো, ত্রেভেজো, ইতালি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত