কথা কম বলা মহানবীর আদর্শ

শাহাদাত হোসাইন

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বেশি কথা বলা কেউ পছন্দ করে না। বুদ্ধিমান লোক কম কথা বলে। আরবি প্রবচনে আছে, ‘জ্ঞানে পূর্ণতা এলে কথায় স্বল্পতা আসে।’ কম কথা বলা শুধু জ্ঞানের পরিচয় নয়। মহানবীর আদর্শও। মহানবী কম কথা বলতেন। কম কথা বলার জন্য উৎসাহ দিতেন। কম কথা বলার উপকারিতা বর্ণনা করতেন। বিচক্ষণ ব্যক্তিমাত্রই জানে ভুল ও লজ্জা হতে রক্ষা পেতে নীরবতা জরুরি। বাচাল ব্যক্তি অনর্থক ও অযৌক্তিক কথা বেশি বলে। যার কারণে ভুলের পরিমাণ অধিক হয়। আর ভুল ব্যক্তিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। ব্যক্তিত্ব নষ্ট করে। নবীজি বলেছেন, যে ব্যক্তি নিরাপদ থাকতে পছন্দ করে, সে যেন চুপ থাকাকে আবশ্যকীয়ভাবে অবলম্বন করে (আত-তারগিব৪ : ২৬)। একবার সাহাবি আবুজার (রা.)-কে নবীজি বললেন, আমি তোমাকে এমন দু’টি স্বভাবের কথা জানিয়ে দেব? যা প্রকাশত সহজ তবে মিজানে ভারি। তিনি বললেন, হ্যাঁ। নবীজি বলেন, সুন্দর ব্যবহার এবং চুপ থাকা (আয-যুহুদ : ৩৮৪)।

বেশি কথায় বিপদ হয় : কথার আধিক্য ব্যক্তিকে বিভিন্ন ফেতনা ও বিপদের সম্মুখীন করে। নিত্য-নতুন সমস্যায় জর্জরিত করে। ইয়াজিদ ইবনে হাবিব (রহ.) বলেন, অধিক বাগ্মীতা ব্যক্তিকে ফেতনায় আক্রান্ত করে আর নীরব ও নিস্তব্ধতা ব্যক্তিকে রহমতের উপযুক্ত করে (আল-জামে : ৪৩৯)। ফেতনাবিমুখ ব্যক্তিমাত্রই অধিক-কথন পরিহারকারী। জিহ্বার হেফাজতকারী সম্পর্কে নবীজি বলেছেন, আল্লাহ যাকে দু’টি জিনিসের খারাপি থেকে রক্ষা করবেন তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। জিহ্বা (কথাবার্তা) এবং লজ্জাস্থানের খারাপি (বোখারি : ৬৪৭৪)।

বেশি কথায় বেশি ভুল : ইবনে ওয়াহাব (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তির কথা বেশি তার ভুলও বেশি (আল-জামে : ৪৯৫)। প্রকৃতপক্ষে ত্রুটিমুক্ত কথা বলতে অধিক জ্ঞানের প্রয়োজন। আর যখন কোন ব্যক্তি প্রকৃত জ্ঞানের অধিকারী হয়, তখন তার কথা কমে যায়। বনী ইসরাঈলের একজন তাপস বলেছেন, নারীর সৌন্দর্য লজ্জায় আর জ্ঞানীর সৌন্দর্য অল্প কথায় (আয-যুহুদ : ৩৮৩)। অধিকভুল থেকে রক্ষা পেতে অনর্থক কথা পরিহার করার বিকল্প নেই।

 

সফলতারপূর্ব শর্ত : একাল-ওকাল উভয় জগতে সফলতা পাওয়ার পূর্বশর্ত অনর্থক কথা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা থেকে দূরে থাকা। অপকারী কথা পরিহার করা। সুরা মুমিনুনে তিন নং আয়াতে সফলকাম মোমেনের গুণাবলির বর্ণনায় আল্লাহ বলেন, যারা অনর্থক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে। আর নবীজি বলেছেন, অনর্থক কথা-কাজ পরিহার করাই মুসলিম ব্যক্তির সৌন্দর্য (তিরমিজি : ২৩১৭)।

লেখক : শিক্ষক ও খতিব