আরবের তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় নারী ছিল চরমভাবে উপেক্ষিত। সমাজে নারীর কোনো মূল্যায়ন ছিল না। যে সমাজ নারী জাতির অস্তিত্বকেই স্বীকার করা হত না। সে সমাজব্যবস্থায় বিধবা নারীকে বিয়ে করা মানে নারীকে সম্মানের সর্বোচ্চ আসনে বসানো। আরবের জাহেলি সমাজে কন্যা সন্তান জন্ম নিলে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত মাটিতে পুতে ফেলত তারা। মেয়ে সন্তানকে তারা লজ্জার কারণ মনে করত। এমনই একটি বর্বর সমাজে বিধবাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া এ যেন দুঃখে মৃতপ্রায় দেহে প্রাণ সঞ্চার করা। বিধবা নারী বিয়ে করে রাসুল (সা.) তাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং সম্মানের আসনে বসিয়েছেন। রাসুল (সা.) মোট ১১ জন নারীকে বিবাহ করেছিলেন। এদের মধ্যে ৯ জনই ছিলেন বিধবা। ধর্মীয় প্রয়োজন, সামাজিক, গোত্রীয় এবং রাষ্ট্রীয় শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা, অসহায় নারীকে আশ্রয়দান এবং উম্মতকে বিধবা নারীর প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার শিক্ষা দিতে রাসুল (সা.) বিধবা নারীদের বিয়ে করেছেন। রাসুল (সা.)-এর প্রতিটি বিয়ের পেছনে সঙ্গত ও শিক্ষণীয় কারণ আছে। আজকাল তো একবার কেউ দুর্ভাগ্যক্রমে বিধবা হলে তার দ্বিতীয় বিয়ে প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। অথচ রাসুল (সা.) নিজে বিধবা বিয়ে করে অসহায় ও দুঃখী নারীদের আশ্রয় দিয়েছেন।
রাসুল (সা.)-এর স্ত্রীরা
এক. খাদিজা (রা.)। রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে বিয়ের সময় তার বয়স ৪০ বছর ছিল। নবী (সা.)-এর বিবাহ বন্ধনে আসার আগে আবু হালাহ ইবেন যুরারাহ ও আতিক ইবনে আয়েজ নামক তার দুজন স্বামী ইন্তেকাল করেছেন। এ হিসেবে তিনি দুই স্বামীর বিধবা ছিলেন। (সীরাতে মুস্তফা : ৩/২৮১)।
দুই. সাওদা বিনতে যামআহ (রা.)। রাসুল (সা.)-এর দ্বিতীয় স্ত্রী। এর আগে সাওদা (রা.) সাকরান ইবনে আমেরের বিবাহ বন্ধনে ছিলেন। তার ইন্তেকালের পর তিনি রাসুলুল্লাহর বিবাহে আসেন। (সীরাতে মুস্তফা : ৩/২৯০)।
তিন. আয়েশা (রা.)। রাসুল (সা.)-এর একমাত্র কুমারী স্ত্রী তিনি। নবুওয়াতের দশম বছরে তিনি আল্লাহর রাসুলের বিবাহ বন্ধনে আসেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম : ৪/৩১৪)।
চার. হাফসা (রা.)। রাসুল (সা.)-এর বিবাহ বন্ধনে আসার আগে তিনি সাহাবি খুনায়েস ইবনে হুজাফার স্ত্রী ছিলেন। তিনি বদরের যুদ্ধে শহিদ হলে তৃতীয় হিজরিতে রাসুল (সা.) তাকে বিবাহ করেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম : ৪/৩১৫)।
পাঁচ. যয়নব বিনতে খুজাইমা (রা.)। তিনি উবাদা ইবনে হারিস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের বিবাহে ছিলেন। তার আগেও তিনি জাহম ইবনে আমরের বিবাহে ছিলেন। তার ইন্তেকালের পর রাসুল (সা.) এই নারীকে বিবাহ করেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম: ৪/৩১৭)।
ছয়. উম্মে সালমা (রা.)। আবু সালমা (রা.) তার স্বামী ছিল। ওহুদের জখমির কারণে তার ইন্তেকাল হলে রাসুলুল্লাহ এই নারীকে বিবাহে আবদ্ধ করেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম: ৪/৩১৫)।
সাত. যয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)। তিনি যায়েদ ইবনে হারেসার তালাকপ্রাপ্তা। তিনি তালাক দিলে রাসুলুল্লাহ তাকে বিবাহে নেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম : ৪/৩১৪)।
আট. জুওয়াইরিয়া বিনতে হারেস (রা.)। তার প্রথম স্বামী মুসাফেহ ইবনে সাফওয়ান। এরপর রাসুলুল্লাহ তাকে বিবাহ করেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম : ৪/৩১৫)।
নয়. হাবিবাহ বিনতে আবু সুফিয়ান (রা.)। তার প্রথম স্বামী ওবায়দুল্লাহ মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হলে রাসুলুল্লাহ তাকে বিবাহে আবদ্ধ করেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম : ৪/৩১৫)।
দশ. সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই (রা.)। স্বামী সালাম ইবনে মিশকাম কুরাযী। তিনি তালাক দিলে কিনানা ইবনে আবিল হুকাইকের সঙ্গে বিবাহ হয়। খায়বারের যুদ্ধে কিনানা মারা যান আর সাফিয়্যা বন্দি হন। রাসুল (সা.) তাকে আজাদ করে দিয়ে বিবাহ করেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম : ৪/৩১৭)।
এগারো. মায়মুনা বিনতে হারেস (রা.)। তার প্রথম স্বামী ইবনে আব্দুল উজ্জা। বলা হয়, তিনি নিজেকে রাসুলুল্লাহর জন্য পেশ করেছিলেন। তখন রাসুল (সা.) তাকে বিবাহ করে নেন। তিনিই আল্লাহর রাসুলের শেষ স্ত্রী। (সীরাতে ইবনে হিশাম : ৪/৩১৭)। উল্লেখ্য, ১১টি বিয়ে করা এটা রাসুল (সা.)-এর জন্য বিশেষিত একটি ব্যাপার। উম্মতের পুরুষদের জন্য শর্তসাপেক্ষে চারটি বিয়ের অনুমোদন আছে। এর চেয়ে বেশি বৈধ নয়।
লেখক : খতিব ও মুহাদ্দিস