হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) খেজুর গাছের গুড়ির সঙ্গে ভর দিয়ে জুমার দিনে খুতবা দিতেন। যখন মিম্বর তৈরি করা হলো খেজুরের গুড়ি কাঁদতে লাগল। রাসুল (সা.) গুড়িটির নিকটে গেলেন এবং তা স্পর্শ করলেন?। ফলে এটা চুপ করল। (তিরমিজি : ৫০৫, বোখারি: ৯১৮)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মিম্বার বানানোর পূর্বে রাসুল (সা.) একটি কাঠখণ্ডের নিকট দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। তারপর যখন রাসুল (সা.) মিম্বর বানালেন এবং সেটির দিকে ফিরে গেলেন, তখন কাঠখণ্ডটি কান্নাজুড়ে দিল। ফলে নবীজি (সা.) এটিকে আলিঙ্গন করলেন, অতঃপর এটি শান্ত হলো। অতঃপর তিনি বললেন, যদি আমি তার সঙ্গে আলিঙ্গন না করতাম, সেটি কেয়ামত পর্যন্ত কান্না করত। (সুনানে দারেমি : ৩৯, মুসনাদে আহমদ : ১/২৪৯, ইবনে মাজাহ : ১৪১৫)। মূলত খেজুর গাছের গুড়িটি নবীজির সান্নিধ্যের সৌরভ ও জিকির শোনা থেকে বঞ্চিত হওয়ার জন্যই ছোট্ট শিশুর মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করেছিল। মসজিদে অবস্থানকারীরা কান্নার আওয়াজ শুনতে পান। অন্য হাদিসে বর্ণনাটি আর একটু বর্ধিত আকারে এসেছে, হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন রাসুল (সা.) মসজিদে নববি ছাদবিহীন থাকাকালীন একটি খেজুর বৃক্ষের কাণ্ডের পাশে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন এবং তিনি ওই খেজুর বৃক্ষ ঘেঁষে খুতবা দিতেন। তখন তার সাহাবিদের একজন বলল, আমরা কি আপনার জন্য এমন বস্তু তৈরি করে দেব! যার ওপর আপনি জুমার দিন দাঁড়াবেন, যাতে লোকেরা আপনাকে দেখতে পায় এবং আপনার খুতবা শুনতে পায়। তিনি বললেন হ্যাঁ, তখন সে ব্যক্তি তার জন্য তিন সিঁড়ি বিশিষ্ট একটি মিম্বর তৈরি করে দেয়। আর এটি হলো সবচেয়ে উঁচু মিম্বর। মিম্বরটি তৈরি হলে তা যথাস্থানে স্থাপন করা হলো।? এরপর রাসুল (সা.) যখন মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়ার ইরাদা করলেন, তিনি ওই গাছের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন ওই বৃক্ষকাণ্ডটি চিৎকার দিয়ে কেঁদে ওঠে ফলে তা ফেটে যায়।? রাসুল (সা.) শুকনো খেজুর গাছের কান্নার শব্দ শুনে নেমে আসেন এবং নিজ হাত তাতে বুলিয়ে দেন। ফলে তা শান্ত হয়ে যায়। তারপর তিনি মিম্বরটির দিকে ফিরে যান। এরপর যখন তিনি সালাত আদায় করতেন, তখন তার দিকে রোখ করে সালাত আদায় করতেন। মসজিদ ভেঙে এর আকার যখন পরিবর্তন করা হলো, তখন উবাই ইবনে কাব, ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত সেটি নিজগৃহে সংরক্ষণ করেন। অবশেষে উইপোকা তা খেয়ে ফেলে। ফলে তার টুকরো টুকরো হয়ে যায়। (ইবনে মাজাহ : ১৪১৪)। একটি খেজুর গাছের গুড়ি হয়ে নবীজির প্রতি যে চরম ভালোবাসা প্রদর্শন করেছে তার নজির দুনিয়ার আর কোথাও নেই। এখান থেকে প্রত্যেকটি মোমিনের জন্য শিক্ষা রয়েছে। নবীজির প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টান্তস্বরূপ তার সুন্নাতগুলো আমলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা এবং আল্লাহর রঙে রঙিন হওয়া প্রতিটি মুসলমানের একান্ত কর্তব্য।
লেখক : আলেম ও কবি