আল্লাহর রাসুল (সা.) সমগ্র জীবনে ২৭টি যুদ্ধে স্বশরীরে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এর মধ্যে একটির নাম ছিল জাতুর রিকা। এ যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল বনু মুহারিবের বিরুদ্ধে। এটা চতুর্থ বা ষষ্ঠ হিজরির ঘটনা। এ যুদ্ধে গাওরাস ইবনে হারিস রাসুল (সা.) কে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। মক্কা মদিনায় বিভিন্ন সময় আরো তাকে অনেকবার হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। প্রতিবার ভেস্তে যায় দুশমনদের সমস্ত পরিকল্পনা। আল্লাহতায়ালা তার রাসুল (সা.) কে নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে রাখেন।
জাবির ইবনে ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি নাজদ এলাকায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধ শেষে রাসুলুল্লাহ (সা.) সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করলে তিনিও তাঁর সাথে প্রত্যাবর্তন করলেন। পথিমধ্যে কাঁটা গাছ ভরা এক উপত্যকায় মধ্যাহ্নের সময় তাদের ভীষণ গরম অনুভূত হলো। রাসুলুল্লাহ (সা.) এখানেই অবতরণ করলেন। লোকজন সবাই ছায়াদার গাছের খোঁজে কাঁটাবনের মাঝে ছড়িয়ে পড়ল। এদিকে রাসুল (সা.) একটি বাবলা গাছের নিচে অবস্থান করে তরবারিখানা গাছে ঝুলিয়ে দিলেন। জাবির (রা.) বলেন, সবেমাত্র আমরা নিদ্রা গিয়েছি। এমতাবস্থায়, রাসুল (সা.) আমাদের ডাকতে আরম্ভ করলেন। আমরা সকলেই তার কাছে উপস্থিত হলাম। তখন তার কাছে এক বেদুঈন বসা ছিল। রাসুল (সা.) বললেন, আমি নিদ্রিত ছিলাম। এমতাবস্থায়, সে আমার তরবারিখানা হস্তগত করে কোষমুক্ত অবস্থায় তা আমার ওপর উঁচু করে ধরলে আমি জাগ্রত হই। তখন সে আমাকে বলল, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করবে কে? আমি বললাম, আল্লাহ! দেখ না, এই তো সে বসা আছে। (এ জঘন্যতম অপরাধের পরও) রাসুল (সা.) তাকে কোনো প্রকার শাস্তি প্রদান করেননি। অপর এক সনদে জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত?।
তিনি বলেন, যাতুর রিকার যুদ্ধে আমরা নবী কারিম (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা একটি ছায়াদার বৃক্ষের কাছে গিয়ে পৌঁছলে নবীজি (সা.)-এর আরামের জন্য আমরা তা ছেড়ে দিলাম। এমন সময় এক মুশরিক ব্যক্তি এসে গাছের সঙ্গে ঝুলানো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তরবারিখানা হাতে নিয়ে তা তাঁর ওপর উঁচিয়ে ধরে বলল, তুমি আমাকে ভয় পাও কি? তিনি বললেন না। এরপর সে বলল, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করবে কে? তিনি বললেন, আল্লাহ। এরপর নবী কারিম (সা.)-এর সাহাবীরা তাকে ধমক দিলেন। অতঃপর...। (বোখারি ৩৮৩১)। নবী কারিম (সা.) ইচ্ছে করলে তাকে শাস্তি দিতে পারতেন । কিন্তু তিনি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। পৃথিবীতে ক্ষমার অপূর্ব নজির স্থাপন করেছেন। সর্বাবস্থায় মানুষ তার কাছ থেকে মহানুভব আচরণই পেয়েছে। মূলত তিনি এর মাধ্যমেই মানুষের মন জয় করেছিলেন। কারও কারও মতে ক্ষমার ঘোষণা শুনে অতঃপর লোকটি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নবী কারিম (সা.)-এর সাহচর্য দ্বারা ধন্য হন। এ ঘটনাও সাক্ষ্য দেয় ইসলাম তলোয়ারে নয় বরং উদারতার জোরেই বিশ্বজয় করেছিল। তবে বর্বরতা রোধে শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে তরবারির যথাযথ প্রয়োগও জরুরি। কেননা, নীতিগত শাসন ছাড়া শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ ধরে রাখা অসম্ভব।
লেখক : শিক্ষক