ইসলামি রাজনৈতিক দল ও সমমনা সংগঠনগুলোর সঙ্গে ঐক্যের মাধ্যমে বৃহৎ ইসলামি শক্তির ঘোষণা দিয়েছেন খানকাভিত্তিক আলেমণ্ডওলামা ও পীর-মাশায়েখরা। গত শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ইসলামিক ইন্টেলেকচুয়্যাল ফোরাম আয়োজিত ‘বর্তমান বাংলাদেশ : ওলামায়ে কেরামের ভাবনা শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এ ঐক্যের ঘোষণা দেন জৈনপুরী দরবার শরিফের পীর ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীসহ সমবেত সকল পীর মাশায়েখ, আলেম ওলামা ও ইসলামি স্কলাররা। সেমিনারে বক্তারা বলেন, সব ইসলামি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করে ঐক্যের ভিত্তিতে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। সব ধরনের মতবিরোধ ভুলে সকল ইসলামি দলকে এক প্লাটফরমে আনার প্রচেষ্টা চলছে। ওই সেমিনারে বক্তৃতা করেন সাইয়্যেদ কামালউদ্দিন জাফরী, মাওলানা কবি রুহুল আমীন খান, মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফেরদাউস মোকামিয়া, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম আল মারুফ, মাওলানা শাহ্ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, মুহাদ্দিস আমিরুল ইসলাম বেলালী, শায়খ জামাল উদ্দীনসহ ছারছিনা, সিংগুলা, বানিয়াপাড়া,চাঁদপুর, মিরেরসরাই, ভোলা, আমুয়া, ডোবরা, ধামতি, মাগুরা দরবার শরিফের পীর সাহেবরা ও তাদের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য ওলামা-মাশায়েখ। সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন ইসলামিক ইন্টেলেকচুয়্যাল ফোরামের অন্যতম সমন্বয়ক ড. এমরানুল হক, ফোরামের কর্মসূচি তুলে ধরেন আবু জাফর সালেহী, শিক্ষা কারিকুলাম ব্যাখ্যা করেন মাওলানা মুহিবুল্লাহ জামী, শেষে সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সমন্বয়ক বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাহ্ মোহাম্মাদ শামছুদ্দিন। ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী বলেন, বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য সব হক্কানি আলেম, পীর-মাশায়েখকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক শক্তি গঠন করতে হবে। যেন প্রত্যেকটি সংসদীয় আসনে ইসলামিক দলের একজন প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে যেতে পারে। বাংলাদেশের রাজপথে আলেমণ্ডওলামারা যুগ যুগ থেকে রক্ত দিয়ে আসছে সর্বশেষ হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন এবং ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলনে অসংখ্য আলেমণ্ডওলামাকে রক্ত দিতে হয়েছে। জালিম আওয়ামী সরকার তাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারা নির্যাতন করেছে। ঈমানি আকিদাগত মতবিরোধ ছাড়া সব দল ও পীরের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নতুন ইসলামি দল গঠন করা হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে অনেক বিতর্কিত বিচারক দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের করা বিচারগুলোকে পুনপর্যালোচনা করতে হবে। সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশে ভারতের বৈরিতাসুলভ পানি আগ্রাসনের তীব্রনিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। চীনের সাহায্যে বাংলাদেশে নতুন বাঁধনির্মাণ, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সব বাহিনী ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা এবং বিগত সরকারের সব ধরনের অপরাধের শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং সুবিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। তাছাড়া বর্তমান চক্রান্তমূলক শিক্ষাকারিকুলাম বাতিল করে ৯৩ শতাংশ মুসলমানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী ইসলামবান্ধব এবং অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল একটি টেকসই শিক্ষা কারিকুলাম সিলেবাস, পরীক্ষাপদ্ধতি ও নতুন বই রচনার উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য ধর্মপরায়ণ একজন শিক্ষাবিদকে শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দানের দাবি জানানো হয়। বক্তারা বলেন, এসব দাবি বাস্তবায়ন করতে হলে জাতীয় রাজনীতিতে আলেম ও ইসলামপন্থিদের ব্যাপক অংশগ্রহণ জরুরি।২০২৪ এর আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা দিয়ে আন্দোলনের ইতিহাস রচনা, বীরত্বের খেতাব প্রদানসহ হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করে ৫ আগস্টকে স্বৈরাচার পতনদিবস ও ছুটি ঘোষণা করার আহ্বান জানান বক্তারা। স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে শহীদদের জন্য দোয়া, তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং আহতদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদান করার পাশাপাশি নতুনভাবে আন্দোলনের নামে কেউ যেন ষড়যন্ত্র ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, ওলামায়ে কেরামের পরামর্শ ছাড়া শান্তি ও সম্প্রীতির দেশ গঠন সম্ভব নয়।