হাটহাজারী মাদ্রাসার ‘আল মুঈন ত্রাণ তহবিল’ : উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তায় প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ উম্মুল মাদারিস খ্যাত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা। জানা গেছে, হাটহাজারী মাদ্রাসার উদ্যোগে বন্যার্তদের ভালোবাসায় গঠন করেছে ‘আল-মুঈন ত্রাণ তহবিল’। বন্যার্তদের উদ্ধার ও তাদের সহায়তায় এ তহবিল’ এর কার্যক্রম চলমান থাকবে বন্যার দুর্গতকাল শেষ হওয়া পর্যন্ত। আল মুঈন ত্রাণ তহবিলের সদস্যরা এরই মধ্যে বন্যাকবলিত এলাকা ফেনীতে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যস্ত আছেন। হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা মুনির আহমাদ জানান, হযরত মাওলানা হাফেজ নাজমুল হাসান কাসেমী (হাফি.), মুফতি মুহিউদ্দীন মাসুম (হাফি.) এবং মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আজহারী (হাফি.) এর নেতৃত্বে ঢাকা উত্তরার শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের মাধ্যমে আগত ১০ টন ত্রাণসামগ্রী ফেনীর ফুলগাজীতে বিতরণের তালিকা তৈরির কাজ চলছে ফেনির জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায়। তিনি বলেন, আল-মুঈনুল ত্রাণ তহবিলের এই সেবা কার্যক্রম প্রতিদিন জারি থাকবে, ইনশাআল্লাহ’।
পটিয়া মাদ্রাসার ‘সেবা সপ্তাহ’ ঘোষণা : দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহাসিক বৃহৎ ইসলামি বিদ্যাপীঠ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া মাদ্রাসা তার সব কার্যক্রম বন্ধ করে বন্যায় পর্যুদস্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ‘সেবা সপ্তাহ’ ঘোষণা করেছেন। ছাত্র শিক্ষকদের সম্মিলিত পদক্ষেপে প্রাথমিক সহায়তা থেকে নিয়ে বন্যা পরবর্তী কর্মসংস্থানেরও উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ ও ২৭ আগস্ট মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি আবু তাহের কাসেমী নদভীর নেতৃত্বে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ বিতরণ করেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের আহ্বানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বন্যার্তদের জন্য। আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার প্রধান জামিয়ার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলসহ বন্যাদুর্গত?? অঞ্চলে ছুটে গিয়ে আর্তমানবতার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল ফেনির দাগন ভূঁঞা, শর্শদী, লালপোল ও মিরসরাইসহ বিভিন্ন স্থানে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে জামিয়া পরিচালিত ‘ইসলামী ত্রাণ কমিটি বাংলাদেশে’র পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ বিতরণ করেন।
বন্যাদুর্গতদের পাশে জামিয়া মাদানিয়া যাত্রাবাড়ি : যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মাহমুদুল হাসান (দা.বা.) বন্যার্তদের সেবায় এগিয়ে এসেছেন এবং অন্যতম ভূমিকা পালন করছেন। এ মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা রিদওয়ান হাসান গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে বলেন, গত রোববার (২৫ আগস্ট) বাদ আসর আমাদের মাদ্রাসার মজলিসি তালিমের মিটিং হয়। এতে বন্যার্তদের জন্য একদিনের বেতন ‘হাদিয়া’ দেয়ার বিষয়ে সকল শিক্ষক স্বেচ্ছায় সম্মতি দিয়েছেন।
তিনি জানান, একদিনের বেতন প্রদানের বিষয়টি শুধুমাত্র ন্যূনতম। একাধিক দিনের বেতনও কেউ কেউ দিতে সম্মত হয়েছেন। এর আগে মাদ্রাসাটির মুহতামিম আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল-জামি'আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান ও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সভাপতি আল্লামা মাহমুদুল হাসান বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন’। এছাড়াও মাদ্রাসাটির ছাত্র-শিক্ষকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনুদান কালেকশন হয়েছে কয়েক লাখ টাকা। সবগুলো বন্যার্তদের ভালোবাসায় পৌঁছানো হয়েছে বলে জানান মাওলানা রিদওয়ান হাসান।
ত্রাণসহায়তায় শীর্ষে শায়খ আহমাদুল্লাহর আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশন
আলেমদের নেতৃত্বাধীন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বন্যার্তদের ত্রাণসহায়তায় শীর্ষে অবস্থান করছে আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশন। বরাবরের মত এবারো সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সংগঠনটির প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস আরো বেড়ে গেছে। যা সেবার পরিধি আরো বিস্তৃত করার জন্য বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। আশার কথা হলো সংস্থাটিতে অন্য ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনেরাও সহযোগিতা করেছেন। বন্যাদুর্গতদের জন্য ফাউন্ডেশনটি ১ম স্তরে উদ্ধার তৎপরতা ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। দুর্গম অঞ্চলে সহায়তা পৌঁছাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরও সহযোগিতা নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি। ২য় স্তরে ভারী রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন। পাশাপাশি পশুখাদ্যও বিতরণ করেছেন। ৩য় স্তরে বন্যা শেষে দুর্গতের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সব মিলিয়ে ত্রাণ কার্যক্রমে আর্থিকমূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি হবে। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ মিডিয়ায় এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে আকম্মিক বন্যা শুরু হওয়ার পর আমরা অতি দ্রুত দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবী ও কর্মীরা বন্যাপ্লাবিত অঞ্চলের দুর্গম এলাকাগুলো পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা ২০ হাজার পরিবারকে শুকনা খাবার বিতরণ করেছি। দ্বিতীয় ধাপে ৭০ হাজার পরিবারের মধ্যে ভারী খাবার বিতরণ করছি।
পানি শুকানোর পর আরো ৭০ হাজার পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল দেয়ার পরিকল্পনা আছে। বন্যার পানিতে যাদের ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমন পাঁচ হাজার পরিবারকে চার বান্ডেল টিন ও নগদ অর্থ সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনা আছে।
তিনি আরো বলেন, ‘বন্যায় প্রাণ হারিয়েছে এমন অসহায় পরিবারগুলোর উপার্জনের ব্যবস্থা করব, ইনশাআল্লাহ। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মধ্যে যারা সহায়-সম্বল হারিয়েছে, তাদের সহায়তা দিয়ে সাবলম্বী করার চেষ্টা করব। এরই মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রমের আর্থিক মূল্য ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন বন্যাদুর্গতদের জন্য কী কী উদ্যোগ নিয়েছে জানতে চাইলে এ ফাউন্ডেশনের ডিপার্টমেন্ট অব দাওয়াহ অ্যান্ড রিসার্চ এর এক্সিকিউটিভ মুফতি রাশেদুল ইসলাম বলেন, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন শুধু বন্যার্তদের জন্য ত্রাণই দিচ্ছে না, সেই সঙ্গে তাদের অন্যান্য চাহিদা মেটানোর চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে। যেমন:
১. মোবাইল ও টর্চ লাইট চার্জ দেয়ার জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২. মহিলাদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৩. গবাদি পশুর পাখির জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৪. ছোট বড় সবার জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৫. রান্নাবান্নার জন্য সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৬. বন্যা পরবর্তী আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। ৭. বাসস্থান ও স্বাবলম্বীকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে এবং কর্মসংস্থানের জন্য অনুদান দেয়া হবে। ৮. মৃত মানুষদের জন্য দাফন এর ব্যবস্থা। ৯. ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনুদান দিয়ে ব্যবসা শুরু করার চেষ্টা করা। ১০. যেসব অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না সেইসব অঞ্চলে ওয়াকি-টকির ব্যবস্থা করা। ১১. মৃত ব্যক্তির ফ্যামিলিকে স্বাবলম্বী করার জন্য অনুদান দেয়া হবে। ১২. ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অর্থ সহায়তা দেয়া হবে। ১৩. সর্বোপরি ১ লাখ ৬০ হাজার পরিবারকে সহায়তা করা এবং পরবর্তীতে ৫ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
বন্যার্তদের পাশে আল মারকাজুল ইসলামি : জাতির যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে আল মারকাজুল ইসলামি এগিয়ে। করোনাকালীন সময়ে লাশ কাফন-দাফন করে যে ঐতিহাসিক খেদমত করেছেন জাতি সারা জীবন তা মনে রাখবে। বাংলাদেশে ২০২৪-এর ভয়াবহ এই বন্যায়ও বিপদগ্রস্তদের সেবায় পিছিয়ে নেই তারা। সংস্থাটির চেয়ারম্যান হামজা শহিদুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ চলে আসা এই বন্যা মানুষের স্বাভাবিক জীবন চলার পথকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে ব্যাপক হারে মানুষ আকস্মিকভাবে অভাবে পড়ে যায়। তাই দুর্যোগময় অবস্থায় বরাবরের মতো মানুষের পাশে আছে এ.এম.আই। বন্যাকবলিতদের মাঝে আমরা আছি শুরু থেকেই। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে আমরা একসাথে একাধিক প্রজেক্ট বাস্তবায়নে কাজ করছি। বিশেষত ত্রাণ বিতরণ, লাশ উদ্ধার ও কাফন, স্বাস্থ্যসেবায় ফ্রি মেডিক্যাল টিম ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সেবা। আলহামদুলিল্লাহ এরই মধ্যে ৩ হাজার পরিবারের মধ্যে প্রাথমিকভাবে শুকনো খাবার এবং পরে ২ হাজার পরিবারের মধ্যে ভারী ফুড আইটেম বিতরণ চলমান রয়েছে। আজ ফ্রি মেডিক্যাল টিমের প্রথমদিন। এতে বিজ্ঞ ডাক্তাররা প্রায় ২০০ রোগীর ফ্রি চিকিৎসাসেবা ও জরুরি ওষুধ সামগ্রী প্রদান করেন। তিনি আরো বলেন, আমরা এখনো আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের পূনর্বাসন নিয়েও পরিকল্পনা করছি। ‘বন্যাকবলিত এলাকায় জনসাধারণ স্বাভাবিকভাবে যে বিষয়গুলোর অভাবে পড়ে এর মধ্যে অন্যতম বিশুদ্ধ খাবার পানি। আলহামদুলিল্লাহ! আল-মারকাজুল ইসলামির নিজস্ব লেভেলযুক্ত ৫ লিটার বোতলের ৬ হাজার পিস পানিসহ মোট ১০ হাজার পরিবারের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এরই মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। পানি চলে যাওয়ার পর আমরা স্থায়ী ডিপ-ননডিপ টিউবওয়েল দিয়ে অত্র অঞ্চলের জনসাধারণকে বিশুদ্ধ খাবার পানি পানের ব্যবস্থা করে দেব ইনশাআল্লাহ।’ সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, আলহামদুলিল্লাহ! এ দেশের জনগণ দলমত নির্বিশেষে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়ে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। সর্বোপরি দোয়া করি আল্লাহতায়ালা বাংলাদেশের সবাইকে এবং পুরো মিল্লতে ইসলামকে একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসার তৌফিক দান করুন।
তাকওয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ : মাওলানা গাজী ইয়াকুব প্রতিষ্ঠিত তাকওয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ বন্যাদুর্গতদের পাশে ছুটে চলেছে। এরই মধ্যে ইঞ্জিনচালিত বোর্ডে আটকে থাকাদের উদ্ধার শেষে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছেন। তাকওয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেড়শ’ এর অধিক আলেমকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। গাজী ইয়াকুব জানান, রোববার (২৫ আগস্ট) কুমিল্লার বুড়িচং, মনোহরগঞ্জ, মুরাদনগর এবং নোয়াখালীর চৌমুহনীতে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এ ফাউন্ডেশন থেকে বন্যা পরবর্তীকালে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জমিয়তের ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত : দেশের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থতিতে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। কুমিল্লার আশরায় অবস্থিত অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে দলের একাধিক টিমের মাধ্যমে এ সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যাকবলিত বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে দলীয় নেতৃবৃন্দ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল পানিবন্দি মানুষজনের কাছে এ সহায়তাগুলো তুলে দিচ্ছেন। চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট, বিশুদ্ধ পানি, চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, খাবার স্যালাইন, জরুরি ওষুধ ও গামছা ইত্যাদির পাশাপাশি কোথাও কোথাও রান্নাকৃত খাবারও বিতরণ করা হয়। দলের নেতাকর্মীরা বিপদগ্রস্ত জনগণের খেদমতে নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। মূল সংগঠনসহ সহযোগী সংগঠন যুব জমিয়ত বাংলাদেশ ও ছাত্রজমিয়ত বাংলাদেশের নেতাকর্মীরাও অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, বন্যার্ত মানুষজনের জন্য আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা ও সেবা কার্যক্রম চলমান রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, দেশের এই ভয়াবহ বন্যায় বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা ও ছাত্র-জনতা যেভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং দাঁড়াচ্ছে তা খুবই প্রশংসনীয়। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর কোনো কোনো এলাকায় এখনো অনেক মানুষ পানিবন্দি। স্বাভাবিক কারণে এই মুহূর্তে তাদের প্রতি সবার দৃষ্টি দেয়া উচিত। জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা আফেন্দী বলেন, ভারতের বাঁধ খুলে দেয়া পানিতে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষ মানবিকতার পরিচয় দিয়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি মনে করি, এটা নতুন বাংলাদেশের বিজয়। এ বিজয় যেকোনো মূল্যে আমাদের ধরে রাখতে হবে। ন্যায় ও মানবতার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জমিয়তের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গতদের জন্য পরবর্তী কার্যক্রম কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের গৃহনির্মাণে সহায়তাসহ নগদ অর্থ প্রদান করার কর্মসূচি রয়েছে আমাদের। আমরা ধর্মমত নির্বিশেষে সকলের পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার জয় নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখব ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস : মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস বন্যাদুর্গত মানুষের সেবায় উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছে। সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, যুব মজলিশ দুর্গত এলাকায় ক্যাম্প করে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সংগঠনের সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক (দা.বা.) জানিয়েছেন, ‘আমাদের সামর্থ্যের আলোকে ত্রাণতৎপরতা পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছি। রোববার (২৫ আগস্ট) ফেনীর সালাহুদ্দীন মোড়ের কাছে আলীমুদ্দীনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও সহযোগী সংগঠন যুব মজলিসের ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে। সেখান থেকে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি আশা করেন, বিভিন্ন আশ্রয়শিবির ও কাছে-দূরের দুর্গত মানুষের দোরগোড়ায় খাবার পরিবেশনের কাজ চলমান থাকবে। সেই সঙ্গে পানি সরে যাওয়া এলাকায় মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের কার্যক্রমও শুরু করা হবে।
মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীর উদ্যোগ : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও মারকাযুত তারবিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাকওয়া ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা করছেন।
দুর্গত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে রোববার (২৫ আগস্ট) কুমিল্লায় উপস্থিত হয়ে সরজমিনে ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনা করেন। এ সময় তিনি কুমিল্লার বুড়িচং, মনোহরগঞ্জ, মুরাদনগর এবং নোয়াখালীর চৌমুহনীতে স্বেচ্ছাসেবকসহ ত্রাণসামগ্রী পাঠান। এ ছাড়াও ছদর ছাহেব হুজুর (রহ.) ফাউন্ডেশন, গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, হাফিজ্জি চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশ, হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) সেবা ফাউন্ডেশন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, ফী সাবীলিল্লাহ ফাউন্ডেশন, পিপলস ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অফ বাংলাদেশ (পিসব), ইসলামী ছাত্র মজলিস, মারকাযুল ফুরকান শিক্ষা পরিবার, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ, শাইখুল হাদীস পরিষদ, রাহমাতুল্লিল আলামিন ফাউন্ডেশন, আল খলীল এডু্েকশন অ্যান্ড কালচারাল সেন্টার, বরুণা মাদ্রাসা, লক্ষ্মীপুর আলোর দিশারী ফাউন্ডেশন, আল-কাসেম ফাউন্ডেশন ও সাদাকাহ ফাউন্ডেশনসহ আলেমদের পরিচালিত আরো অনেক সেবা সংস্থা, রাজনৈতিক সংগঠন ও একক উদ্যোগেও বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে আলেম সমাজ।
ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের ত্রাণ কার্যক্রম : ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ'ও বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় বিশাল কর্মসূচি পালন করে চলেছে। বানভাসি মানুষের জন্য সংগঠনটির ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় দুর্যোগ সহায়তা টিমসহ জরুরি কর্মসূচি ঘোষণা করে বন্যাকবলিত এলাকায় সক্রিয় আছে বলে জানা গেছে। সংগঠনটির কর্মসূচিতে রয়েছে- ১. দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলে উদ্ধার কার্যক্রম। ২. শুকনো খাবার বিতরণ। ৩. পানি বিশুদ্ধকরণ উপকরণ বিতরণ। ৪. প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা প্রদান ও ৫. প্রয়োজনীয় পোশাক বিতরণ।
আস-সিরাজ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান : ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর, সিন্দুরপুরের কৌশল্যা, সেকান্দপুর, চন্দ্রপুর, এবং আশপাশের সকল গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। দাগনভূঞা হতে এসব এলাকার দূরত্ব ১০-১২ কি.মি. নৌপথ। এই গ্রামগুলোতে ২০০০ মানুষের জন্য ৩-৪ দিনের শুকনো বাজার দেয়া হয়।
মিরসরাইয়ের মাদ্দারহাট, বামনসুন্দর, ঝুলনপুর, ল্যাঙ্গারহাট, আবুরহাট, কাজি গ্রাম, উসমানপুর ও দুর্গাপুরসহ প্রায় ৭০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। যেখানে প্রাইমারি ও উচ্চ বিদ্যালয় মিলে প্রায় ২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য ৬১০ জনের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানাধীন ফকিরাচান গ্রামসহ একাধিক গ্রামের প্রায় ২৫০ পরিবারে আজকে ত্রাণ দেয়া হয়।
আস-সিরাজ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় ঢাকা মেডিকেলে, নিউরোসাইন্স, পঙ্গু ও চক্ষুবিজ্ঞান এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল মিলে প্রায় ২৫০ গুলিবিদ্ধ রোগীকে নগদ অর্থ দেয়া হয়। প্রত্যেক রোগীকে ৫ থেকে ১০ হাজার করে দেয়া হয়। বিশেষ করে চক্ষুবিজ্ঞানে প্রায় ৭০ জন রোগীকে ১০ হাজার করে দেওয়া হয়। দুই চোখ নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ৫০ জনের। ৫৯৭ জনের এক চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আস-সিরাজ ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তানভীর সিরাজ বলেন, অঙ্গীকার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামের বিশেষ সহযোগিতায় এসব সেবা প্রদান করা হয়।
বন্যার্তদের পাশে ভাদুয়াপাড়া সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশন : মানুষ মানুষের জন্য। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে কুমিল্লা বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া বন্যার্তদের সেবায় ছুটে গিয়েছে ভাদুয়াপাড়া সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশন। প্লাবিত বুড়িচং অঞ্চলে প্রবাসীদের সহযোগিতায় শুকনা ও ভেজা খাবার বিতরণের পাশাপাশি উদ্ধার কর্মও চালিয়েছে স্থানীয় এ সামাজিক সংগঠন।গত ২১ আগস্ট বুড়িচং গোমতি নদীর বাঁধ ভাঙার পর থেকেই সংগঠনটি বন্যার পানিতে প্লাবিত দুর্গম অঞ্চলে উদ্ধার ও খাবার সামগ্রী বিতরণ করে আসছে। এতে স্থানীয় মানুষজনের যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনের একজন দায়িত্বশীল মাওলানা ওমর শাহ বলেন, মানবতার টান ও প্রতিবেশীদের অধিকার রক্ষার্থে আমাদের সংগঠন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সংগঠনের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ বন্যার্তদের জন্য সহযোগিতা পাঠিয়েছেন। আমরা মানুষের আমানত পৌঁছে দিয়েছি মানুষের কাছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ ও ২০০৪ এ সর্বশেষ ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছিল এই অঞ্চলের মানুষ। ভারত ডুম্বুরা বাঁধের গেট খুলে দিলে দীর্ঘ ২০ বছর পর আবারো ভয়াবহ বন্যার মুখে কুমিল্লা বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া অঞ্চলের মানুষ। সর্বশেষ তথ্য মতে এখন পর্যন্ত ১৫ জন এই অঞ্চলে বন্যার প্লাবনে নিহত হয়। পানিবন্দি হয় ১৪৪ গ্রামের মানুষ।
বন্যার্তদের পাশে জাতীয় ইমাম পরিষদ বাংলাদেশ : যেকোনো জাতীয় দুর্যোগে মানুষের পাশে জাতীয় ইমাম পরিষদ বাংলাদেশ। এবারের আকস্মিক বন্যায়ও দেশের বন্যাকবলিত বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ত্রাণতৎপরতা চালাচ্ছে ইমামদের আস্থা ও ভালবাসার এই সংগঠনটি। ইমাম পরিষদের সভাপতি মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া বলেন, ইমাম পরিষদের কেন্দ্রীয়, জেলা, থানা কমিটি ও স্থানীয় সদস্যরা সম্মিলিত ও পৃথকভাবে অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা সারা দেশ থেকে অর্থ ও সহায়তা সংগ্রহ করে মানুষের মধ্যে বিতরণ করছি।
নোয়াখালীর সেনবাগ ও বেগমগঞ্জ, ফেনীর সোনাগাজী ও লক্ষ্মীপুরের রায়পুর লুধুয়া এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম শেষে সংগঠনের মহাসচিব মুফতি আ ফ ম আকরাম হুসাইন জানান, আমরা ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে সেসব অঞ্চলকে প্রাধান্য দিচ্ছি, যেখানে সাধারণত ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। দুর্গত মানুষের মাঝে চাউল, ডাউল, তেল, লবণ, চিনি, চিড়া, মুরি, বিস্কুট, স্যালাইন, ওষুধ, শিশুদের পোশাক, প্যাম্পাস, শিশুখাদ্য ও শাড়ী, লুঙ্গি বিতরণ করেছি আমরা। তাছাড়া বন্যার শুরু থেকেই স্পিড বোট ও ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে দুর্গম অঞ্চলে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়েছে আমাদের কর্মীরা। ত্রাণ কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা ত্রাণ ও পুনর্বাসন উভয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চলমান থাকবে। পাশাপাশি আমরা পুনর্বাসনের কাজও হাতে নিবো ইনশাআল্লাহ।
ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন জাতীয় ইমাম পরিষদ বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি আ ফ ম আকরাম হুসাইন, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বিন মুখতার, অর্থ সম্পাদক মুফতি ইসমাঈল আনওয়ার হাবিবী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা কামাল উদ্দীন নোমানী, ঢাকা জেলা সভাপতি মুফতি আমানুল্লাহ বসন্তপুরী, ঢাকা মহানগর সেক্রেটারী মুফতি সাইফুল্লাহ নোমানী, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মুফতি মুহাম্মদ শুয়াইব, সহ সম্পাদক মুফতি সিদ্দীকুর রহমান সাইফী, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি মাওলানা আল আমিন বসন্তপুরী, চান্দিা থানা প্রতিনিধি হাফেজ কারি দিলাওয়ার হুসাইন ও মাওলানা আহসান হাবীবসহ একদল ভলান্টিয়ারবৃন্দ।
ঢাকা জেলা সভাপতি মুফতি আমানুল্লাহ বসন্তপুরী বলেন, ইমাম পরিষদ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ওলামায়ে কেরাম ও আইম্মায়ে মাসাজিদের প্রতি বিশেষ লক্ষ রাখছে। আমরা স্বহস্তে বেশকিছু ক্ষতিগ্রস্ত আলেমের হাতে উপহার তুলে দিয়েছি এবং ভবিষ্যতেও দিব ইনশআল্লাহ।
ঢাকা মহানগর সেক্রেটারী মুফতি সাইফুল্লাহ নোমানী বলেন, গণমানুষের ভালোবাসা আমাদেরকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। আমাদের ছাত্র-শিক্ষক, মুসল্লি, ভক্তবৃন্দ সবার আন্তরিক অনুদান, দোয়া ও ভালোবাসায় আমরা সুন্দরভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছি। অর্থ সম্পাদক মুফতি ইসমাঈল আনওয়ার হাবিবী জানান, প্রথম পর্বে সহস্রাধিক মানুষের মাঝে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ত্রাণ উপহার সামগ্রী বিতরণ করেছে ইমাম পরিষদ। চলতি সপ্তাহে একাধিক টিমে পাঁচ সহস্রাধিক মানুষের নিকট উপহার সামগ্রী পৌছানোর পরিকল্পনা রয়েছে এ সংগঠনটির।
গত এক সপ্তাহে আপনাদের কর্মসূচি কী ছিল জানতে চাইলে ইমাম পরিষদ বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি আ ফ ম আকরাম হুসাইন বলেন, গত এক সপ্তাহব্যাপী আমরা ১০টি পয়েন্টে বন্যার্তদের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ করেছি। যে ১০টি পয়েন্টে আমরা কাজ করেছি তা হলো-
১. নোয়াখালী সেনবাগ ১নং ছাতার পাইয়া ২. ২নং খাজুরিয়া ইউনিয়ন ৩. ১৬নং কাদির পুর ইউনিয়ন ৭ নং ওয়ার্ড , সাহেবের হাট, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী। ৪. নোয়াখালী সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়ন ২-৭ নং ওয়ার্ড ৫. সয়ানি বাজার উত্তর এবং দক্ষিণে গ্রাম্য অঞ্চল ৬. আন্ডার চর ইউনিয়ন ৭. অস্বদিয়া ইউনিয়ন ৮. ফেনী সোনাগাজী কুটিরহাট বাজারের পার্শ্ববর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৯. ফেনী সদর থানার ৭ নং বালীগাঁও ইউনিয়নে ১০. লক্ষ্মীপুর রায়পুর লুধুয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র। এছাড়া চলতি সপ্তাহে ইমাম পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া সাহেবের নেতৃত্বে খুলনার বন্যার্তদের মাঝে উপহার বিতরণ করা হয়েছে।
ইসলামবাগ উলামা পরিষদের ত্রাণ বিতরণ : গত ২৬ আগস্ট মঙ্গলবার ঢাকার চকবাজার থানাধীন ইসলামবাগ উলামা পরিষদের পক্ষ থেকে ফেনী জেলার সদর উপজেলার মঠবাড়িয়া ও ছাগলনাইয়া উপজেলার শান্তির হাট-বাজার এলাকায় ত্রান বিতরণ করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ইসলামবাগ উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা বশিরুল হাসান খাদিমানী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুতাসিম বিল্লাহ, মুফতি হাফিজুর রহমান প্রমুখ। ইসলামবাগ উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা বশিরুল হাসান খাদিমানী বলেন, ৩০০ মানুষের জন্য চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, লবণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ৩০০ প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি আমরা। এমন একটি সময়ে আমরা বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এসেছি, যখন মানবিকতায় জেগে ওঠেছে বাংলাদেশ। যে যা পারছে তা নিয়েই ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকতে চাচ্ছে। উচ্ছ্বাসে বিকশিত মানবিকতার এমন চর্চা স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ ঘটনা বলে হয়। সর্বস্তরের জনতার ভালোবাসা ও মানবিকতার এক উজ্জ্বল সবক ছিল ত্রাণবিতরণ কর্মসূচিগুলো। মানবিক জনতার বিশাল আয়োজনের মাঝে আমরা ভালোবাসা বিনিময়ের ক্ষুদ্র প্রয়াস চালিয়েছি মাত্র।
শ্যামকুড় ও পার্শ¦বর্তী গ্রামবাসীর উদ্যোগ : (মহেশপুর, ঝিনাইদহ।) : গত ২৬ আগস্ট, সোমবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মসজিদের ইমামণ্ডখতিব, আলেম ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে বন্যার্তদের সহায়তা প্রদান ও ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। ত্রাণ কার্যক্রমকে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে একই দিনে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট ত্রাণ সংগ্রহ বাস্তবায়ন এবং ১২ সদস্য বিশিষ্ট ত্রাণ সংগ্রহ নিয়ন্ত্রণ কমিটি গঠন করা হয়।
২৭ আগস্ট, মঙ্গলবার থেকেই আংশিকভাবে ত্রাণ সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। ১ সেপ্টেম্বর, রোববার পর্যন্ত এই ত্রাণ সংগ্রহের কাজ চলমান থাকে। রবিবার রাত ১০ টায় বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহের কর্মসূচি সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় এবং সংগৃহীত অর্থ ২ সেপ্টেম্বর সোনালী ব্যাংক, মহেশপুর শাখার মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ত্রাণ সংগ্রহে স্থানীয় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনেও অংশগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
ঝিনাইদহ জেলা ইমাম পরিষদের উদ্যোগ : গত ২২ আগস্ট, বৃহস্পতিবার ইশার নামাজের পর ঝিনাইদহ পুরাতন ডিসিকোর্ট মসজিদে ঝিনাইদহ জেলা ইমাম পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকের মাধ্যমে বন্যার্তদের সহায়তা প্রদান ও ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। পরের দিন স্থানীয় সকল মসজিদে জুমার নামাজের সময় সাধারণ মুসল্লিদের বন্যার্তদের সহায়তা প্রদানে আহ্বান জানানো হয়। ১ সেপ্টেম্বর, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ত্রাণসংগ্রহের কাজ চলমান থাকে। এ সময়ের মধ্যে স্থানীয় সর্বস্তরের মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় এক হাজারের অধিক পরিবারের জন্য ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুতের কাজসম্পন্ন হয়। রোববার রাত ৯টার পর ত্রাণবাহী ট্রাক বন্যার্তদের উদ্দেশ্যে ঝিনাইদহ ছেড়ে যায়। যশোরের ঝিনাইদহ জেলা ইমাম পরিষদের উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তার প্রতি প্যাকেজে যা বিতরণ করা হয়েছে-
১। চাল ৫ কেজি, ২। ডাল ১ কেজি, ৩। চিড়া ১ কেজি, ৪। চিনি ৫০০ গ্রাম, ৫। সোয়াবিন তেল ১ লিটার, ৬। খাবার পানি ৫ লিটার, ৭। লবণ ৫০০ গ্রাম, ৮। আলু ১ কেজি, ৯। পেঁয়াজ ৫০০ গ্রাম, ১০। রাসুন ২৫০ গ্রাম, ১১। শুকনা ঝাল ১০০ গ্রাম, ১২। মোমবাতি ১০ পিচ এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পোশাক ইত্যাদি।
ঝিনাইদহ জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি হাফেজ মাওলানা আশরাফুল আলম জানান, বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনেও ব্যাপক অংশগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে ঝিনাইদহ জেলা ইমাম পরিষদের।