ঢাকা ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঈমান ভঙ্গের ১০ কারণ

শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু আবদিল ওয়াহহাব (রহ.)
ঈমান ভঙ্গের ১০ কারণ

নামাজ ও অজু ভঙ্গের যেমন কারণ রয়েছে, তেমনি কিছু কারণে ঈমানও নষ্ট হয়ে যায়। ঈমান ভঙ্গের কারণগুলো মূলত তিন প্রকার। বিশ্বাসগত, কর্মগত এবং উক্তিগত। প্রত্যেক মোমিনের জন্য ঈমান ভঙ্গের মৌলিক কারণগুলো জানা অতীব জরুরি। ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে অনেক দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। এখানে উল্লেখযোগ্য ১০টি কারণ আলোচনা করা হলো :

১. আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা : ‘নিশ্চয় আল্লাহ তার সঙ্গে অংশীদার করা ক্ষমা করেন না; তা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যে কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে সে এক মহাপাপ করে।’ (সুরা নিসা : ৪৮)।

‘কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করলে অবশ্যই আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। আর জালেমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা মায়েদা: ৭২)।

২. নিজের ও আল্লাহর মধ্যে মধ্যস্থতাকারী নির্ধারণ করা : ‘তারা আল্লাহকে ছাড়া যার ইবাদত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বলুন, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিচ্ছ, যা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র এবং তারা যাকে শরিক করে তা হতে তিনি ঊর্ধ্বে।’ (সুরা ইউনুস : ১৮)। ‘জেনে রাখ, অবিমিশ্র আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা তো এদের পূজা এজন্যই করি যে, এরা আমাদের আল্লাহর সান্নিধ্যে নিয়ে যাবে।’ তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে আল্লাহ তার ফয়সালা করে দেবেন। যে মিথ্যাবাদী ও কাফের আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’ (সুরা জুমার : ৩)।

৩. মুশরিক-কাফেরদের কাফের মনে না করা : যার কাফের হওয়ার ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত একমত, যেমন ইহুদি-খ্রিষ্টান-মুশরিক ছাড়াও প্রকাশ্যে আল্লাহ, রাসুল বা দ্বীনের কোনো অকাট্য ব্যাপার নিয়ে কটূক্তিকারী; যাদের কুফরির ব্যাপারে হকপন্থি আলেমরা একমত তাদের কাফির-মুশরিক না মনে করা। অর্থাৎ তাদের কাফের মনে করতে হবে। কাফের মনে না করলে ঈমান ভেঙে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের (কথাকে) অমান্য করবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করবেন। সে তাতে চিরকাল থাকবে এবং অবমাননাকর শাস্তি ভোগ করবে।’ (সুরা নিসা : ১৪)।

যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সা.) কথাকে অবিশ্বাস করে তারা আসসুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের মতে কাফের। আর আমরা যদি তা বিশ্বাস না করি তাহলে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের কথাকে অবিশ্বাস করার কারণে কাফের হয়ে যাব।

৪. নবীজি (সা.)-এর ফায়সালার তুলনায় অন্য কারও ফয়সালাকে উত্তম মনে করা : ‘আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা দাবি করে যে, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার আগে যা অবতীর্ণ হয়েছে, আমরা তার ওপর ঈমান এনেছি। তারা বিচার-ফয়সালা নিয়ে যেতে চায় তাগুতের কাছে, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা তাকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদের প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।’ (সুরা নিসা : ৬০)।

৫. মুহাম্মদ (সা.)-এর আনিত কোনো বিধানকে অপছন্দ করা : ‘অতএব, আপনার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে বিচারক বলে মনে না করে। এরপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।’ (সুরা নিসা : ৬৫)।

৬. দ্বীনের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা : ‘আপনি তাদের প্রশ্ন করলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, ‘আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও ক্রীড়া-কৌতূক করছিলাম।’ বলেন, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসুলকে বিদ্রূপ করছিলে?’

‘তোমরা অজুহাত দেয়ার চেষ্টা করো না। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফুরি করেছ।’ (সুরা তওবা : ৬৫-৬৬)।

৭. জাদু করা : ‘সুলায়মান কুফরি করেনি, কুফরি তো করেছিল শয়তানরাই। তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত।’ (সুরা বাকারা: ১০২)। আজকাল অনেকে অন্যকে বশে আনতে বা অন্যের ক্ষতি সাধন করার জন্য জাদু করে থাকে তা ঈমানের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। জাদুতে বিশ্বাসীর ঈমান ভেঙে যায়।

৮. মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সমর্থন ও সহযোগিতা করা : ‘হে মুমিনরা! তোমাদের পিতা ও ভাইও যদি ঈমানের বিপরীতে কুফরিকে বেছে নেয়, তবে তাদের অন্তরঙ্গ বন্ধু রূপে গ্রহণ কর না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদের অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই সীমা লঙ্ঘনকারী।’ (সুরা তাওবা : ২৩)।

‘হে মুমিনরা! তোমরা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। তারা পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’ (সুরা মায়েদা : ৫১)।

৯. কাউকে দ্বীন-শরিয়তের ঊর্ধ্বে মনে করা : ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (সুরা মায়েদা : ৩)। দ্বীন ও শরিয়ত মেনে চলতে হবে। দ্বীন ও শরিয়তের বাইরে গিয়ে কিছু করে সেটাকে দ্বীন বলে চালিয়ে দেয়া বা দ্বীন মানার প্রয়োজনীয়তা মনে না করলে ঈমান থাকবে না।

১০. দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া : ‘যে ব্যক্তি তার রবের আয়াতগুলো দ্বারা উপদেশপ্রাপ্ত হয়ে, আবার তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে বড় জালেম আর কে? নিশ্চয় আমি অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (সুরা সাজদাহ: ২২)।

আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। ঈমানহারা হওয়া থেকে রক্ষা করুন। আন্তরিক তওবা ও কালেমা শাহাদাহর মাধ্যমে ঈমান নবায়ন করার তাওফিক দান করুন। সকল মোমেনকে হেদায়াত ও রহমতের চাঁদরে ঘিরে রাখুন - আমিন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত