ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ অধিকার দিয়েছে। মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম নারীকে এত অধিকার দেয়নি। ইসলামে একজন নারী মা, মেয়ে এবং স্ত্রী হিসেবে সর্বাধিক সম্মান ও অধিকার পেয়েছে। ইসলাম একজন বিধবা নারীকেও মিরাসি সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেনি। এখানে বিধবা নারী ও তাকে দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করা হলো।
বিধবা নারীর সম্পত্তির অধিকার : ইসলাম বিধবা নারীকে সম্মানজনক জীবন যাপনের জন্য সম্পত্তির অধিকার দিয়েছে। বিধবা নারীর যদি কোনো সন্তান না থাকে, তবে সে স্বামীর মোট সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবে। আর যদি মৃত স্বামীর সন্তান থাকে এ স্ত্রীর গর্ভজাত হোক কিংবা অন্য স্ত্রীর, তবে সে স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পদের আট ভাগের এক ভাগ পাবে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, তোমাদের সন্তান না থাকলে তাদের (স্ত্রীদের) জন্য তোমাদের পরিত্যাক্ত সম্পদের এক-চতুর্থাংশ, তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পদের এক অষ্টমাংশ। তোমরা যে অসিয়ত করবে তা দেওয়ার পর এবং ঋণ পরিশোধের পর। (সুরা নিসা : ১২)। বিধবা নারীর মোহর তার স্বামী আদায় করে না গেলে অন্যান্য ঋণের মতো মোট সম্পত্তি থেকে মোহর পরিশোধ করার পর ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পদ বণ্টিত হবে। এমনকি বিধবা নারী বিয়ে করলেও মৃত স্বামীর নির্ধারিত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে।
বিধবা নারীর বিয়ের স্বাধীনতা : বিয়ে ছাড়া নারী-পুরুষ কারো পক্ষে একা একা জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। বৈরাগ্য জীবন ইসলাম মোটেও সমর্থন করে না। আল্লাহপাক সুরা নুরের ৩২ নং আয়াতে বিবাহহীন নারী-পুরুষদের বিয়ে দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের নির্দেশ দিয়েছেন। বিধবা নারীদের দাম্পত্য জীবনের পূর্ণ অভিজ্ঞতা থাকায় একা থাকা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই ইসলাম তাদের বিবাহের ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেছে। স্বীয় ইচ্ছায় বিধবা নারী বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারে। এতে সমালোচনা বা দোষের কিছু নেই। তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করা কিংবা বাধা দেওয়া দুটোই গর্হিত অন্যায়। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং তাদের নিজেদের স্ত্রীদের রেখে যাবে, সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেরা ৪ মাস ১০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা (ইদ্দত পালন) করবে। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোনো পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারে আল্লাহর অবগতি রয়েছে। (সুরা বাকারা : ২৩৪)।
বিধবা নারীর সম্মান ও মর্যাদা : বিধবা নারী অপয়া কিংবা সমাজের বোঝা নয়। তাদের আছে সুন্দর জীবন ধারণের অধিকার। বিয়ের অধিকার পাওয়া সত্ত্বেও যদি দ্বিতীয়বার স্বামী গ্রহণ না করে সন্তান লালন পালন করে, তাহলে তার সম্মান ও মর্যাদা অনেক বেশি। দুঃখে কষ্টে পালিত সন্তান প্রতিষ্ঠিত হলে দিনশেষে দুনিয়াতে সে সম্মানিতা বলে গণ্য হয়। আর পরকালীন সুসংবাদ তো আছেই। আওফ ইবনে মালিক আশজাঈ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি এবং কষ্ট ও মেহনতের কারণে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া (বিধবা মহিলাগণ) কেয়ামতের দিন এরূপ থাকব। এ সময় তিনি তার সাদা দাঁত ও মধ্যমা আঙুলের প্রতি ইশারা করেন এবং বলেন, এরা ওই সব মহিলা, যারা তাদের স্বামীর মৃত্যুর পর, স্বীয় বংশ মর্যাদা ও রূপ-লাবণ্য থাকা সত্ত্বেও (অন্যখানে বিয়ে না করে) তার এতিম (স্বামীর) বাচ্চাদের প্রতিপালনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে, যতদিন না বাচ্চারা বড় হয়, অথবা সে মারা যায়। (আবু দাউদ : ৫০৫৯)। এতিম সন্তান লালন পালনের কারণে বিধবা নারী জান্নাতে প্রবেশের অগ্রাধিকার লাভ করবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি ওই ব্যক্তি যার জন্য সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজা খোলা হবে। কিন্তু এক মহিলা এসে আমার আগে জান্নাতে যেতে চাইবে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করব যে, তোমার কী হলো? তুমি কে? তখন সে বলবে আমি ওই মহিলা যে স্বীয় এতিম বাচ্চার লালন পালনের জন্য নিজেকে আটকে রেখেছে (বিবাহ করা থেকে) মুসনাদে আবী ইয়ালা : ৬৬৫১)।
বিধবা নারীকে সাহায্যের পুরস্কার : বিধবা নারীকে সাহায্য সহযোগিতা করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যতম সুন্নাত। তিনি বিধবা নারীর প্রতি সামাজিক অবহেলার পথ রুদ্ধ করতে একাধিক বিধবা নারীকে বিয়ে করেছেন। উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। তাদের প্রতি সর্বদা সদয় ছিলেন। একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো বিধবা ও অভাবীর সঙ্গে পথ চললে তাদের প্রয়োজন পূরণ করতেন। (নাসায়ী : ১৪২৫)। তিনি বিধবা নারীদের সহযোগিতাকারী ব্যক্তির জন্য বিশেষ পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, বিধবা ও মিসকীনদের জন্য (খাদ্য জোগাতে) সচেষ্ট ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের মতো অথবা রাত জেগে ইবাদতকারী ও দিনভর রোজা পালনকারীর মতো। (বোখারি : ৪৯৬২)।
লেখক : কবি ও শিক্ষক