কেন নামাজ পড়ব?
নামাজ আল্লাহপ্রদত্ত বিশেষ একটা নেয়ামত এবং এটিও আমাদের কল্যাণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সুমাইয়া আক্তার
একজন মুসলমান হিসেবে ‘নামাজ’ শব্দটির সঙ্গে কম বেশি পরিচয় আমাদের সবারই আছে। ইসলাম ধর্মের বিধান মতে সাবালক হওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে ছেলেমেয়ে সবাইকে নামাজ আদায় করতে হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি ফরজ বিধান। যা সাবালক, সুস্থ মুসলমান নরনারীকে অবশ্যই পালন করতে হয়। নামাজ না পড়লে গোনাহ হয়। নামাজকে কেউ অস্বীকার করলে কাফের হয়ে হয়। আর যথাযথভাবে আদায় করলে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা অর্জিত হয়। এটা আমরা সবাই জানি, তবুও সরল মনে জিজ্ঞাসা আমরা কেন নামাজ আদায় করি? এই কাজটি করার পেছনে উদ্দেশ্যটাই বা কী? এর সহজ উত্তর হলো, নামাজ আদায় না করলে আল্লাহতায়ালা বান্দার উপর রাগ করেন এবং আখিরাতে বান্দাকে শাস্তি হিসেবে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেবেন। কিন্তু আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি পাওয়ার ভয়ে নামাজ আদায় করে আমরা কতটুকু সফল? যদি সফলই হয়ে থাকি, তাহলে প্র?্যাক্টিসিং মুসলিম পরিবারের সন্তানটি শুধু মা-বাবা থেকে তিরস্কারের আতঙ্কে নামাজ আদায় করত না। অথবা আশপাশের নামাজি বান্ধবী বা বন্ধুর সঙ্গে যখন থাকি, তখন নামাজটা আদায় না করলে সে কী ভাববে এ চিন্তায় আমিও তার পাশে গিয়ে জায়নাজে দাঁড়াতাম না?
এমনকি আমরা মেয়েরা মাসের কয়েকদিন নামাজ না পড়ার নিষেধাজ্ঞায় এতোটা খুশি হতাম না। এছাড়া নামাজে দাঁড়িয়ে নতুন-পুরাতন অপ্রয়োজনীয় চিন্তাগুলোকে বারবার মনে উপস্থিত করে স্মৃতি মন্থন বা অহেতুক ভাবনায় অন্যমনষ্ক হতাম না। এর মানে আমরা কেন নামাজ আদায় করি বা করব সেটা আমাদের কাছে মোটেও পরিস্কার নয়। কেবল ব্যক্তিগত, লৌকিক বা পারিবারিক কিছু দায়বদ্ধতা থেকে আমরা নামাজটা আদায় করি। যার ফলে নামাজ আদায় করেও আমাদের চারিত্রিক, নৈতিক, আদর্শিক কোনো পরিবর্তনের লেশমাত্র নেই, নামাজের আগেও যেমন অগোছালো ও অস্থির ছিলাম নামাজের পরেও তাই রয়ে গেছি।
তাহলে এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে, নামাজ আদায় করার পেছনে যৌক্তিক এবং কার্যকরী কারণগুলো কী? এই প্রশ্নের আলোকে কোরআন-হাদিসে যথাযথভাবে উত্তর দেয়া হয়েছে। আর সেই ধারায় যদি বলতে হয় তাহলে বলব, দুনিয়ার সকল নেয়ামত আশরাফুল মাখলুকাতের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি বা নাজিল করা হয়েছে, যাতে সেগুলো থেকে আমরা নানাভাবে উপকৃত হতে পারি। আর নামাজ আল্লাহপ্রদত্ত বিশেষ একটা নেয়ামত এবং এটিও আমাদের কল্যাণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তা থেকে আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উন্নতি নিহিত। যেমন- প্রথমত নামাজের মাধ্যমে আমরা আমাদের আত্মার প্রশান্তি অনুভব করতে পারি। যখন আমরা বিভিন্ন কারণে নিজেদের অন্তরকে বিক্ষিপ্ত পাই, তখন উত্তমভাবে অজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে কোরআন তেলাওয়াতের মাঝে যে এক অনন্য প্রশান্তি রয়েছে; সেটা অনুভব করতে পারি।
দ্বিতীয়ত নামাজের মাধ্যমে দুনিয়াবি সকল দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক অনেক ঘটনা প্রায়ই আমাদের ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে, তখন যদি আমরা নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট সব কিছু সমর্পণ করতে পারি, তাহলে আর কোনো অশান্তি অবশিষ্ট থাকতে পারে না। তৃতীয়ত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দায়িত্বের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে জীবনে ধীর-স্থিরতা নিয়ে আসে। সর্বশেষ যে বিষয়টি নামাজ আদায়ের কারণ হিসেবে বিবেচিত সেটা হলো আল্লাহর নিকট আবদার বা প্রার্থনা করার মাধ্যমে আল্লাহর উপর ভরসা করার মানসিক ক্ষমতা তৈরি হয়। অর্থাৎ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়ে দুনিয়াবি জীবনের নানা প্রতিকূল মুহূর্তে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা যায়।
সর্বোপরি, আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত হিসেবে যখন নামাজ আদায়ের কারণগুলো বুঝতে পারব, তখনই নামাজ যে অশ্লীল ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, সেটা নিজেদের জীবনেও প্রয়োগ দেখতে পাব এবং আল্লাহর মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্বকে অনুধাবন করে জান্নাত হাসিলের পথে জীবন পরিচালনা করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
লেখিকা : শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়