ঢাকা ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নবী-রাসুলের সম্মান রক্ষা করা জরুরি

মুফতি ইবরাহীম আল খলীল
নবী-রাসুলের সম্মান রক্ষা করা জরুরি

নবী-রাসুলরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। মানবজাতির ওপর তাঁদের অনেক শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। তারা আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত। মানবজাতিকে একত্ববাদের দিকে আহ্বান করার জন্যে আল্লাহতায়ালা তাদের দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। শিরকমুক্ত হয়ে শুধুমাত্র আল্লাহতায়ালার ইবাদত করার জন্য আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক জাতির কাছে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতির কাছে রাসুল পাঠিয়েছি, যাতে করে (তাদের সে বলতে পারে) তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং আল্লাহতায়ালার বিরোধী শক্তিগুলোকে বর্জন কর (সূরা নাহল, আয়াত ৩৬)।

নবী-রাসুলদের আল্লাহর পরে সম্মানের সর্বোচ্চ স্থানে রাখতে। তাদের মুহাব্বত করা একজন মুসলিমের জন্য জরুরি এবং এটা ঈমানের অংশ। তাই তাঁদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উলামায়ে কেরাম বেশ কিছু যুক্তি উপস্থাপন করেন। সেগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি হলো-

এক. নবী-রাসুল (আ.) আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত ও প্রেরিত। সুতরাং তাঁদের সমালোচনা ও দোষত্রুটি চর্চা করা এবং তাঁদের অসম্মান করা আল্লাহর নির্বাচন ও মনোনয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং তার দায়ভারও আল্লাহর ওপর আরোপ করা হয়। (নাউজুবিল্লাহ) অথচ আল্লাহ সব ধরনের ভুলত্রুটি ও দুর্বলতার ঊর্ধ্বে। দুই. আল্লাহর মনোনীত পুরুষরা শয়তানের ধোঁকা ও কুপ্রবৃত্তির প্রভাবমুক্ত ছিলেন।

কোরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, সে (ইবলিশ) বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যেমন আমাকে বিপথগামী করলেন তজ্জন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের কাছে পাপ কাজকে শোভন করে তুলব এবং আমি তাদের সবাইকে বিপথগামী করব। তবে আপনার নির্বাচিত বান্দারা ছাড়া। (সুরা হিজর, আয়াত : ৩৯-৪০)।

তিন. অন্তরে নবী-রাসুলদের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নিলেই শুধু আল্লাহর প্রতি নিরন্তর ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারীমে ইরশাদ করেন, হে নবী! আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে তোমরা আমার আনুগত্য করো, আমাকে অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহতায়ালাও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)

চার. নবী-রাসুলদের মুহাব্বত করা ছাড়া প্রকৃত মুমিন হওয়া যায় না। কেননা, ঈমানের এক গুরুত্বপূর্ণ শাখা, নবী-রাসুলদের ? মুহাব্বত করা। একজন মুমিনকে যেসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হয় এবং যা ছাড়া কেউ মুমিন হতে পারে না, নবীর প্রতি ভালোবাসা অন্যতম।

হাদীস শরীফে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হবে না, যতক্ষণ আমি তার কাছে তার বাবা, তার সন্তান ও সকল মানুষের চেয়ে প্রিয় না হব। (সহিহ বুখারী, হাদীস ১৫)

পাঁচ. নবী ও রাসুলদের সমগ্র জীবন সরাসরি আল্লাহ কর্তৃক পরিচালিত এবং তাঁর বরকতে ধন্য। ঈসা (আ.) সম্পর্কে বর্ণিত আয়াতে সে ইঙ্গিত লাভ করা যায়। ইরশাদ হয়েছে, যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৩১)।

ছয়. কোরআনে কারীমের ভাষ্য অনুযায়ী প্রথম নবী আদম (আ.)-এর মাধ্যমে মানবসভ্যতার সূচনা হয় এবং যুগে যুগে নবী-রাসুলরা সভ্যতার বিকাশে মানবজাতির নেতৃত্ব দেন। তাঁরা শুধু মানুষকে ধর্মীয় জীবন শেখাননি; বরং জ্ঞান-বিজ্ঞান ও পার্থিব জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোও শিক্ষা দিয়েছেন।

তাঁদের দায়িত্ব ও অবদান সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই উম্মিদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে যে তাদের কাছে পাঠ করে তার আয়াতগুলো, তাদের পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমাহ (প্রজ্ঞা)। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে। (সুরা : জুমা, আয়াত : ২)।

সাত. আল্লাহর প্রেরিত পুরুষরা দ্বীন প্রচারের ব্যাপারে নিজ থেকে কিছুই বলেন না; বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু বলা হয় তাঁরা তাই প্রচার করেন। কোরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের সঙ্গী বিভ্রান্ত নয়, বিপদগ্রস্তও নয় এবং সে মনগড়া কথাও বলে না। এটা তো অহি, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়। (সুরা নাজম, আয়াত : ২-৪)।

শরিয়তের মূলনীতি অনুযায়ী আল্লাহর প্রেরিত সব নবী ও রাসুল (আ.) সব ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত। সুতরাং তাঁরা সমালোচনার ঊর্ধ্বে। তাঁদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। এটা প্রত্যেক মুসলিমদের উপর জরুরি এবং অত্যাবশ্যকীয়।

নবী-রাসুলদের সমলোচনাকারীদের শাস্তি : কোরআনকারীদের একাধিক স্থানে নবী-রাসুলদের সমালোচনা ও বিদ্রুপকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লামকে নিয়ে বিদ্রুপকারীদের হুঁশিয়ার করে আল্লাহতায়ালা বলেন, বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে আমি আপনার জন্য যথেষ্ট। (সুরা হিজর, আয়াত : ৯৫)।

শরিয়তে নবী-রাসুলদের সমালোচনা ও সম্মানহানি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোনো ব্যক্তি নবী-রাসুলদের সমালোচনা করলে ইসলামী দণ্ডবিধি মতে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। শইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহ.) বলেন, সর্বসম্মতিক্রমে আম্বিয়া (আ.) আল্লাহর দ্বীন প্রচার ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিষ্পাপ। তাদের আনীত বিধানের ওপর ঈমান আনা ওয়াজিব।

(এর একটু পরে বলেন) এ জন্য ইসলামী আইনজ্ঞরা একমত যে, কেউ নবীদের গালি দিলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। তবে অন্যদের গালি দিলে তা দেয়া হবে না। (মাসায়েলে মানসুরা, পৃষ্ঠা ২৫৬)।

যারা পৃথিবীতে নবী-রাসুলদের অসম্মান করবে এবং তাঁদের সমালোচনা ও বিদ্রুপের পাত্র বানাবে পরকালে তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। কোরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, জাহান্নাম, এটাই তাদের প্রতিফল, যেহেতু তারা কুফরি করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলি ও রাসুলদের গ্রহণ করেছে বিদ্রুপের বিষয়স্বরূপ। (সুরা কাহফ, আয়াত : ১০৬)। তাই আসুন আমরা সকল নবী-রাসুলদের সম্মান করি। তাদের সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকি।

লেখক : শিক্ষক, মাদ্রাসা আশরাফুল মাদারিস, তেজগাঁও ঢাকা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত