‘শিক্ষা ও শিক্ষক’ আদর্শ সমাজ গঠনের ভিত্তি। শিক্ষা ও শিক্ষকই পারেন জাতিকে আলোকিত করতে; সমাজ থেকে অন্ধকার ও অমানিশা দূর করতে। রাসুল (সা.) ছিলেন তেমন শিক্ষার শিক্ষক। তিনি নিজ আদর্শ, শিক্ষা-দর্শনে জাহেলিয়াত নির্মূল করেন। আলোকিত সমাজ ও জাতি গঠন করেন। তিনি বলেন, ‘আমি মানবতার জন্য শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি।’ (সুনানে দারেমি : ১/৯৯)। তিনি আরো বলেন, ‘আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দানের জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ (আল আদাবুল মুফরাদ : ২৭৩)।
রাসুল (সা.)-এর শিক্ষাদর্শন সম্পর্কে এরশাদ হচ্ছে, ‘হে লোকসকল! আমি তোমাদের কাছে তোমাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসুল পাঠিয়েছি। যে তোমাদের কাছে আমার আয়াত (কোরআন) পাঠ করে শোনায়। তোমাদের জীবন পরিশুদ্ধ করে। তোমাদের কিতাব ও হেকমত (কোরআনের ওপর আমল) শিক্ষা দেয়। তোমরা যে বিষয়ে কিছুই জানতে না, তা শেখায়।’ (সুরা বাকারা : ১৫১)। কোরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শেখা, আত্মশুদ্ধি অর্জন, কোরআনের অর্থ ও মর্ম অনুধাবন এবং হেকমত তথা কোরআনের বিধিবিধানের ওপর আমল- এ চারটি বুনিয়াদ ছিল রাসুল (সা.)-এর শিক্ষাদর্শনে। এ শিক্ষাদর্শন তখনকার মূর্খ ও বর্বর জাতিকে পৃথিবীর নেতৃত্বের আসনে সমাসীন করে।
রাসুল (সা.) মাত্র ২৩ বছরে মানবজাতির এক অপূর্ব জাগরণ এনে দেন। যারা একদিন তাঁর প্রাণের শত্রু ছিল, তারাই তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করে পরম বন্ধুতে পরিণত হয়। যেখানে সর্বত্র রক্তক্ষয়ী সংঘাত, খুন-খারাবির আগুন দাবানলের মতো জ্বলে উঠেছিল, সেখানে তাঁর শিক্ষার কারণেই শান্তি ও মানবিকতার ফুল ফুটেছিল। যে সমাজে প্রস্তর নির্মিত মূর্তিগুলোকে সেজদা করা হচ্ছিল, সেখানেই তৌহিদের পতাকা উড্ডীন হয়েছিল।
রাসুল (সা.) যে পন্থায় মানুষকে সত্যের শিক্ষা দিয়েছেন, তার একটি হলো, মানুষের প্রতি দয়া-মায়া, তাদের কল্যাণ কামনা করা ও তাঁর বিনম্র স্বভাব। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহর অনুগ্রহে (হে রাসুল!) আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয়ের অধিকারী হয়েছেন। আপনি যদি রূঢ় মেজাজ ও কঠিন হৃদয়ের হতেন, তাহলে এসব লোক আপনার চারপাশ থেকে দূরে সরে যেত।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৫৯)।
রাসুল (সা.) ছিলেন অন্যতম এক আদর্শ শিক্ষক। স্বয়ং আল্লাহতায়ালা তাঁকে সর্বোত্তম শিক্ষা ও শিষ্টাচার শিখিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমাকে আমার রব শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি আমাকে সর্বোত্তম শিক্ষা দিয়েছেন।’ (আদাবুল ইমলা লিস সামআনি : ১)। রাসুল (সা.)-এর প্রতিটি কথা ও কাজ-কর্ম ছিল মানুষের জন্য কল্যাণকর শিক্ষা। তিনি মানবতার মুক্তির সনদ কোরআনের জ্ঞানের ধারক-বাহক। অজ্ঞতা, অশিক্ষা ও অশান্তির চরম সময়ে ‘আল্লাহর নামের শিক্ষা’র মশাল নিয়ে এলেন। তাঁর আনীত হেদায়াতের আলো জ্বলে উঠল কোটি হৃদয়ে। ছড়িয়ে পড়ল দিগদিগন্তে। বিশ্বমানবতা পেল জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক পূর্ণাঙ্গ জীবন-দর্শন।