মানবতার জমিনে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। দৃষ্টি সীমার কোথাও আলোর ছিটেফোঁটা নেই। আদৌ মশাল হাতে কেউ আলো জ্বালবে, নেই সে সম্ভাবনা। মনুষ্যত্ব বিদায় নিয়েছে। চারদিকে পাশবিকতার জয়জয়কার। মানুষে মানুষের অধিকার ভুলতে বসেছে। রাব্বে কাবা সদয় হলেন তখন। দিকভ্রান্ত মরুবাসীর ওপর রহম করলেন। আলোর মশাল হাতে পাঠালেন একজন দিশারী। যুগ যুগ ধরে জমানো অন্ধকার তাড়িয়ে যিনি আনলেন নতুন ভোর। তিনি রহমতের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। আল্লাহতায়ালা তাঁকে পাঠালেন সর্বোত্তম চরিত্রের পূর্ণ বৈশিষ্ট্যে। তিনি ছিলেন সব ক্ষেত্রে অনুসরণীয়। ছিলেন উন্নত চরিত্রের অধিকারী। সব ধরনের দোষত্রুটির উর্ধ্বে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’ (সুরা কলম : ৪)। তাঁর আদর্শের অনুসরণ ইসলামের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি চায়, তার জন্য রাসুল (সা.)-এর জীবনচরিতে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব : ২১)।
রাসুল (সা.) যেমন বড়দের জন্য আদর্শ ছিলেন, তেমন ছিলেন শিশুদের জন্যও। শিশুর প্রতি তাঁর আদর্শ বুঝা যায় তাঁর কথায়-কাজে। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি শিশুদেরকে স্নেহ করে না, বড়দের সম্মান দেখায় না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (তিরমিজি : ১৯২১)। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) নাতি হাসান (রা.)-কে চুমু খেলেন। সে সময় তার কাছে আকরা বিন হারিস (রা.) উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, ‘আমি দশ সন্তানের পিতা। কিন্তু কখনও তাদের আদর করে চুমু খাইনি।’ রাসুল (সা.) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘যে দয়া করে না, তার প্রতিও দয়া করা হয় না।’ (বোখারি : ৫৬৫১)।
রাসুল (সা.) শুধু শিশুদের ভালোবাসেননি, বরং তাদের খোঁজখবরও রাখতেন। মাঝেমধ্যে তাদের সঙ্গে আনন্দ-রসিকতাও করতেন। শিশুদের প্রতি রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসার কারণে শিশুরাও রাসুল (সা.)-কে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। আবদুল্লাহ বিন জাফর (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) যখন কোনো সফর শেষে বাড়ি ফিরতেন, তখন বাচ্চারা তার আসার পথে গিয়ে অভ্যর্থনা জানাতো। একবার তিনি সফর থেকে এসে আমাকে তার বাহনের সামনে বসালেন। এরপর নাতি হাসান, হুসাইন (রা.)-কে বাহনের পেছনে বসালেন। তারপর আমাদের নিয়ে তিনি মদিনায় প্রবেশ করলেন।’ (মুসলিম : ৬৪২১)।
মক্কা বিজয়ের পর যখন রাসুল (সা.) মক্কা শহরে আগমন করেন, তখন কিছু ছোট বাচ্চা তার কাছে এলে তিনি তাদের আদর-সোহাগ করলেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘বিজয়ী বেশে রাসুল (সা.) যখন মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন আবদুল মুত্তালিব বংশের ছোট ছোট ছেলেরা তার কাছে এলো। তিনি তাদের একজনকে নিজ বাহনের সামনে বসালেন, অপরজনকে পেছনে বসালেন।’ (বোখারি : ১৭০৪)।