পাত্রী দেখার ইসলামি নিয়ম

শরিফ আহমাদ

প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বিয়ে মানব জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।? বিয়ের জন্য পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে ইসলামের নিয়ম কানুন আছে। একজন বিয়ে ইচ্ছুক পুরুষ বা নারী পর্দা ও শালীনতার ভেতরে থেকে পরস্পরকে দেখতে পারে। লাইফ পার্টনার নির্বাচন করতে পারে। এতে পারিবারিক বন্ধন স্থায়ী ও শান্তিময় হয়। আজকাল সমাজে সম্মিলিত পাত্রী দেখতে যাওয়া রুসমে পরিণত হয়েছে। এর মাধ্যমে লংঘন করা হয় শরিয়তের বিধান। তাই উভয় পক্ষের এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া একান্ত প্রয়োজন। স্মরণ রাখা উচিত, ইসলামের প্রতিটি বিধান মেনে চলার দ্বারাই সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং বিবাহের পবিত্র সম্পর্ককে অটুট রাখা সম্ভব হয়। সামাজিক কুপ্রথার মধ্যে কোনো স্থায়ী কল্যাণ নেই।

হাদিসে পাত্রী দেখার তাগিদ : ইসলাম মানুষের মাঝে পারস্পরিক সমঝোতাকে উৎসাহিত করে। পাত্রপাত্রী সরাসরি একে অপরকে দেখার মাধ্যমে উভয়েই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। একে অপরের চাহিদা ও প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে পারে। এটা তাদের পরবর্তী জীবনে একে অপরকে ভালোভাবে বুঝতে সহায়ক হয়। তাই বিয়ের আগে পরিবারের লোকজন পাত্রপাত্রীকে একে অপরকে দেখার সুযোগ দেয়া উচিত। মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি জনৈকা স্ত্রীলোককে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি তাকে দেখে নাও। তা তোমাদের উভয়ের প্রণয়ে সহায়ক হবে। (তিরমিজি : ১০৮৭)। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত।

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যখন কোন স্ত্রীলোককে বিবাহের উদ্দেশ্যে পয়গাম পাঠাবে, তখন যদি তার পক্ষে সম্ভব হয়, তবে সে যেন তার বংশ, মাল ও সৌন্দর্য ইত্যাদি দর্শন করে, যা তাকে বিবাহে উৎসাহ দেয়। রাবি বলেন, অতঃপর আমি জনৈক কুমারীকে বিবাহের জন্য প্রস্তাব দিই এবং আমি গোপনে তাকে দর্শন করি, এমনকি তার চেহারাও দেখি, যা আমাকে তার সাথে বিবাহে প্রলুব্ধ করে। অতঃপর আমি তাকে বিবাহ করি। (আবু দাউদ : ২০৭৮)।

পাত্রী দেখার পূর্বে করণীয় : পাত্রী দেখতে যাওয়ার পূর্বে পাত্র পক্ষের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো পাত্রী সম্পর্কে যথেষ্ট খোঁজখবর নেওয়া। চারিত্রিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়ার চেষ্টা করা। ঘটকদের মুখরোচক কথায় বিশ্বাস না করে সম্ভব হলে নারীদের মাধ্যমে প্রথমে দেখার ব্যবস্থা করা। পাত্রী পছন্দ হলে আলোচনা সাপেক্ষে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা। আর পছন্দ না হলে মেয়ের দোষ ত্রুটি বর্ণনা না করে নিজের অজুহাত দেখিয়ে সরে যাওয়া। ওদের হেয় প্রতিপন্ন করে কোন কথা বলা ঠিক নয়। পাত্র নিজে দেখতে যাওয়ার পূর্বে বিশুদ্ধ নিয়তের পাশাপাশি ইস্তেখারা করে নেয়া ভালো। কেননা, বিশেষ বিশেষ কাজের পূর্বে আল্লাহর সাহায্য পেতে তার দরবারে বিশেষ পদ্ধতিতে প্রার্থনা করতে হয়। সময়ের স্বল্পতা বা অন্য কোনো কারণে নামাজের মাধ্যমে ইস্তেখারা করার সুযোগ না পেলে এই দোয়াটি পাঠ করেও ইস্তেখারা করা যায়, ‘আল্লাহুম্মা খিরলি ওয়াখতারলি’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করুন এবং আমার জন্য উত্তমটি নির্বাচন করুন। (ইবনুস সুন্নী: ৫৯৮)। অতঃপর যেদিকে কলবের ইতমিনান হয় আল্লাহর উপর ভরসা করে সেই কাজ আরম্ভ করা হলে ইস্তেখারা হয়ে যায়।

পাত্রী দেখার নিয়মকানুন : বিয়ের পূর্বে পাত্রী দেখা পাত্রের জন্য সুন্নাত। তাই দলবেঁধে পাত্রী দেখতে যাওয়াটা সম্পূর্ণ বাড়াবাড়ি। ফটোসেশন করা গুনাহের কাজ। পাত্রীকে শুধু পাত্র এবং তার নারী-নিকট আত্মীয়রা দেখতে পারবে। এক্ষেত্রে পাত্রীর চেহারা এবং দু’হাত কবজি পর্যন্ত ও দু’পা টাখনু পর্যন্ত দেখা জায়েজ। এ ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ, এমনকি হাতের কবজি থেকে উপরের অংশ এবং পায়ের গিরার উপরের অংশ দেখাও নাজায়েজ। আর পাত্রের জন্য পাত্রীর হাত বা কোনো অঙ্গ স্পর্শ করাও জায়েয নয়। তাই পাত্রের জন্য পাত্রীকে আংটি পরিয়ে দেয়া জায়েয হবে না। আংটি পরিয়ে দিতে চাইলে পাত্র পক্ষের মেয়েদের কেউ গিয়ে পরিয়ে দিতে পারে। অথবা পাশে পাত্রীর মাহরাম যারা থাকে তাদের কাছে দিয়ে দেয়া যেতে পারে। (তাবয়ীনুল হাকায়েক : ৭/৪০, রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৭০)।

লেখক : শিক্ষক ও খতিব