ঢাকা ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অনন্য সাহচর্য

কাজী হাসানুল বান্না
অনন্য সাহচর্য

প্রতিদিনের মতো আজও কারও পথ চেয়ে বসে আছে মদিনাবাসী। কেউ একজন আসবে। ঈমানের মশাল হাতে আলো জ্বালবে। দীপ্তিময় আলোয় গোটা শহর চমকে উঠবে। যুবকরা দলে দলে তার সান্নিধ্যে ধন্য হবে। শিশুরাও অধির আগ্রহ নিয়ে উন্মুখ চেয়ে আছে। ছোট্ট আনাস বিন মালেকও তাদের একজন। মায়ের মুখে শুনে শুনে ভালোবেসে ফেলেছেন নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে। তাই ভালোবাসার মানুষটির জন্য বিরামহীন প্রতীক্ষায় আছেন তিনি। একদিন স্নিগ্ধ সকাল। মদিনাবাসী ঘোষণা দিলো, ‘মুহাম্মদ ও তার সঙ্গী এসে পড়েছেন।

ছুটে গেল সবাই। ছোট, বড় সব শ্রেণী-পেশার মানুষ বরণ করে নিলো তাকে। শিশু আনাসও গেলেন তার মায়ের সঙ্গে। রাসুল (সা.)-কে দেখে অভিবাদন জানালেন তার মা। এরপর রাসুল (সা.)-কে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! সবাই আপনাকে কিছু না কিছু উপহার দিচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে হাদিয়া দেয়ার মতো কিছুই নেই। আপনি আমার ছেলে আনাসকে হাদিয়াস্বরূপ গ্রহণ করুন।’ রাসুল (সা.) তার কথা শুনে খুশি হলেন। আনাস বিন মালেককে পরম আপন করে নিলেন।

পরম আদরে উনাইস ডাক : তখন আনাস বিন মালেক (রা.) ১০ বছরের বালক। রাসুল (সা.) পরম আদরে তাকে উনাইস বলে ডাকতেন। ভালোবাসতেন আপন পুত্রের চেয়ে বেশি। বকাঝকা করতেন না কখনোই। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কখনও আমাকে বলেননি, এটা কেন করেছ? ওটা কেন করোনি?’ এভাবেই রাসুল (সা.)-এর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পাশে থাকেন আনাস ইবনে মালেক (রা.)। এ দীর্ঘ সময় তিনি রাসুল (সা.)-এর সান্নিধ্যে থেকে নিজেকে পবিত্র করেছেন। উন্নত মানুষরূপে গঠন করেছেন। রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে এমন সব কিছু জেনেছেন, যা অন্য কেউ জানতে পারেনি। রাসুল (সা.) তাকে বহু উপদেশ দিতেন। বাতলে দিতেন বিভিন্ন পথপন্থা। বলতেন, ‘বৎস! কারও প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ ছাড়া যদি সকাল-সন্ধ্যা যাপন করতে পারো, তাহলে করো। বৎস! এটি আমার সুন্নত। আর যে আমার সুন্নাহ জীবিত করল, সে আমাকে ভালোবাসে। আর যে আমাকে ভালোবাসে, সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে। বৎস! তুমি যখন পরিবারের কাছে যাবে, তাদের সালাম দেবে। কারণ, সালাম হলো সবার জন্য বরকতময়।’

গভীরভাবে ইলমে দ্বীন শিক্ষার্জন : আনাস (রা.) রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে গভীরভাবে ইলমে দ্বীন শিক্ষার্জন করেন। রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুর পর তিনি মুসলমানদের ধর্মীয় জীবন-জিজ্ঞাসার সমাধানে আশ্রয়কেন্দ্র হয়ে ওঠেন। যখন কেউ কোনো বিষয়ে জটিলতায় পড়ত, ছুটে যেত আনাস (রা.)-এর কাছে। তিনি রাসুল (সা.)-এর হাদিস অনুসারে প্রয়োজনীয় সমাধান দিতেন। একবারের ঘটনা। কিছু লোক হাউজে কাউসার নিয়ে বিতর্ক শুরু করল। সমাধানের জন্য আনাস (রা.)-এর কাছে এলো। তিনি বললেন, ‘আমি এ ধারণা করেছি, কিছু লোক আমার জীবিত অবস্থায় হাউজে কাউসার নিয়ে বিতর্ক করবে। অথচ আমি আমার জীবনে প্রত্যেক নামাজের পরই রাসুল (সা.)-এর হাউজে কাউসার থেকে পান করার দোয়া করেছি।’

যার জন্য নবীজির দোয়া : আনাস (রা.) অধিকাংশ সময় রাসুল (সা.)-এর স্মৃতিচারণ করতেন। তিনি নিজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুল (সা.)-এর অনুসরণ করতেন। রাসুল (সা.)-এর পছন্দনীয় জিনিস ছিল তারও পছন্দের। রাসুল (সা.)-এর অপন্দের জিনিস ছিল তারও অপছন্দের। রাসুল (সা.) সবসময় আনাস (রা.)-এর জন্য দোয়া করতেন। মোনাজাতে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আনাসকে সম্পদ ও সন্তান দান করুন। তাকে বরকতময় করুন।’ আল্লাহতায়ালা রাসুল (সা.)-এর এ দোয়া কবুল করেছেন। তাকে সম্পদশালী করেছেন। বহু সন্তান দান করেছেন। তিনি তার ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনির সংখ্যা শতকের ওপর দেখে গেছেন। আল্লাহতায়ালা তার হায়াতেও বরকত দিয়েছেন। তিনি এক শতাব্দীকাল বেঁচে ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১ শত ৩ বছর। মৃত্যুর আগমুহূর্তে তিনি বলেন, ‘তোমরা আমাকে কালিমার তালকিন দাও।’ অসিয়ত করেন, ‘রাসুল (সা.)-এর ছোট লাঠি যেন তার সঙ্গে কবরে দেয়া হয়।’ তার অসিয়ত মতোই সবকিছু করা হয়। এরপর তিনি চলে যান মহান রবের কাছে। অনন্তকালের জন্য সৌভাগ্যের অধিকারী হন মালিকের সান্নিধ্যে। (আল ইসাবা : ১/৭১)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত