ঢাকা রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নবীজির শেষ রাতের কান্না

জুবাইর ইসলাম মাবরুর
নবীজির শেষ রাতের কান্না

খুশখুযু এবং পূর্ণ ধীরস্থতার সাথে নামাজ পড?ার মূর্ত প্রতীক ছিলেন নবীজি (সা.)। তার নামাজের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে একাধিক হাদিস রয়েছে। হজরত মুগীরা (রা.) বলেন, মহানবী রাতের নামাজে এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তার কদম মোবারক ফুলে যেত। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে আপনি এমন কেন করেন? অথচ আপনার অতীতের ভবিষ্যতের সব গোনাহ ক্ষমা করা হয়েছে। তিনি প্রতিউত্তরে বলেছেন আমি কি কৃতজ্ঞশীল বান্দা হবো না? (বোখারি ও মুসলিম)। হাদিসে আরো এসেছে, হুমাইদ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রহ.) বলেন, একদা নবী করীম (সা.) এর সাহাবীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে এক সফরে থাকাবস্থায় মনে মনে বললাম, আল্লাহর কসম! আজ আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামাজের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করব, যাতে তাঁর কার্যধারা দেখতে পারি। (দেখলাম,) তিনি যখন রাতে ইশার নামাজ পড?লেন যাকে আতামাও বলা হয়ে থাকে, দীর্ঘ সময় ঘুমিয়ে রইলেন। তারপর জাগ্রত হলেন এবং দিগন্তের (আকাশের) দিকে চেয়ে কোরআনের এ আয়াত পাঠ করতে লাগলেন-

(অর্থ) হে আমাদের প্রভু! আপনি এসবকে অযথা সৃষ্টি করেননি থেকে এবং আপনি কখনো প্রতীজ্ঞা ভঙ্গ করেন না এ পর্যন্ত পৌঁছলেন। তারপর রাসুল (সা.) বিছানার দিকে ফিরলেন এবং সেখান থেকে মিসওয়াক বের করলেন। তারপর নিজের কাছে রক্ষিত একটি পাত্র থেকে পেয়ালায় পানি ঢাললেন এবং মিসওয়াক করলেন । অতঃপর দাঁড?ালেন এবং নামাজ পড?তে লাগলেন, এমনকি আমি ভাবলাম, তিনি যে পরিমাণ সময় ঘুমিয়ে?ছিলেন সে পরিমাণ সময়ই নামাজে কাটালেন। তারপর দ্বিতীয় বার শুলেন এমনকি আমি ভাবলাম, তিনি যে পরিমাণ সময় নামাজে কাটিয়েছিলেন সে পরিমাণ সময়ই ঘুমিয়ে রইলেন। তারপর তিনি তৃতীয় বার জাগ্রত হলেন এবং পূর্বে যেরূপ করেছিলেন সেরূপই করলেন, আর পূর্বে যা বলেছিলেন তাই বললেন। মোটকথা, ফজর পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনবার এরূপ করলেন। (মেশকাত : ১১৪১)। তবে তিনি শেষ রাতে উঠে কত রাকাত নামাজ পড?তেন এটা নিয়ে ৯,১১ ও ১৩সহ বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায় ।

রাতের শেষ প্রহরে নবীজির কান্না : সুরা তাওবার ৮২ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন কম হাসো আর বেশি বেশি কাঁদো। নবীজি (সা.) ও অনেক কান্না করতেন। এ সম্পর্কে হাদিস পাওয়া যায়। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) রাতের বেলা আমাকে বলতেন, হে আয়েশা আমাকে ছেড়ে দাও আমি আমার রবের ইবাদাত করব। আমি বলতাম আল্লাহর শপথ, আমি আপনার নৈকট্য ভালোবাসি এবং আপনাকে যা আনন্দ দেয় তা ভালোবাসি। তিনি উঠে পবিত্র হয়ে নামাজ পড়তেন। এরপর তিনি এত কাঁদতেন যে তার কাপড? ভিজে যেত। তিনি আরো কাঁদতেন যে দাড়ি ভিজে যেত। অতঃপর বেলাল (রা.) এসে তাকে নামাজের জন্য ডাকতে এসে দেখেন যে, তিনি কান্না করছেন। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আপনি কাঁদছেন কেন? অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সব গোনাহ ক্ষমা করেছেন? তখন তিনি বলতেন, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না। আজ রাতে এই আয়াত (সুরা আল ইমরানের ১৯০ নম্বর আয়াত) অবতীর্ণ হয়েছে। ওই ব্যক্তির জন্য ধ্বংস যে তা পড়েছে; কিন্তু তা নিয়ে চিন্তা করেনি। (ইবনে হিব্বান : ৬২০)।

শেষ রাতে নবীজির আমল : মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রাতের শেষ ভাগে তাহাজ্জুদ এবং বিতির নামাজ আদায় করতেন। বিভিন্ন দোয়া ও কান্নাকাটি করতেন। আর এগুলোর পূর্বে তিনি তাসবিহও পাঠ করতেন । এ সম্পর্কে একটি হাদিস, শারিক হাওযানি (রহ.) বলেন, আমি একদিন আয়েশা (রা) এর নিকটে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন রাতে জাগতেন তখন কী কাজ শুরু করতেন? আয়েশা (রা.) বললেন, তিনি যখন রাতে জাগতেন দশবার 'আল্লাহু আকবার' বলতেন, দশবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতেন, দশবার সুবহানাল্লাহি ওয়া ‘বিহামদিহী’ বলতেন, দশবার ‘সুবহানাল মালিকিল কুদ্দুস’ বলতেন, দশবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলতেন, দশবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতেন। এরপর দশবার বলতেন, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন দীকিদ দুনইয়া ওয়া দীকি ইয়াওমিল কিয়ামাতি, তারপর নামাজ শুরু করতেন। (আবু দাউদ, মেশকাত, হাদিস: ১১৪৮) নবীজি (সা.) সকল কাজে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতেন। রাতকে তিনি তিন ভাগে বিভক্ত করে কিছুটা সময় বিশ্রাম নেয়া, আপনজনের অধিকার আদায় করা এবং অবশিষ্ট সময় প্রভুর প্রেমে অতিবাহিত করতেন। তাই প্রত্যেক উম্মতের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে নববী আদর্শের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করার কোনো বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত