ঢাকা শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে খাবার গ্রহণ করতেন

মুফতি আবদুল্লাহ তামিম
রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে খাবার গ্রহণ করতেন

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যাবতীয় কাজকর্ম কীভাবে করতে হবে, নবীজি (সা.) তা আমাদের শিখিয়েছেন। কীভাবে খাবার খেতে হয়, এমনকি কোন পদ্ধতিতে বসে খাবার খাওয়া জরুরি, তিনি তাও শিখিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজি (সা.)-কে একটি বকরি হাদিয়া দিলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার উভয় হাঁটু উঁচু করে বসে আহার করলেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩২৬৩)। নবীজি (সা.)-এর প্রতিটি কাজ অনুকরণীয়। ছোট থেকে বড় প্রত্যেক বিষয় শিখিয়েছেন আমাদের। তার কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করলে মোমিনের জীবনে বয়ে যাবে প্রশান্তির সুবাতাস। নবীজি (সা.) বলেন, ‘মোমিনের সব কাজের জন্য প্রতিদান দেয়া হয়; এমনকি নিজের মুখে খাবারের লোকমা তুলে নেয়ার সময়ও।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৫৩১)।

রাসুল (সা.) যেভাবে খাবার খেতেন : প্রিয় নবীজি (সা.) বিনয়ের সঙ্গে বসে খাবার খেতেন। এটাই তার খাবার গ্রহণের প্রিয় পদ্ধতি। কারণ, নেয়ামত গ্রহণের সময় মনিবের সামনে গোলামের ভঙিতে বসাই বিনয়ের প্রকাশ। আমাদের প্রতি নবীজি (সা.)-এর শিক্ষা এটাই। নবীজি (সা.) বলতেন, ‘গোলাম যেভাবে খায়, আমিও সেভাবে খাব; গোলাম যেভাবে বসে, আমিও সেভাবেই বসব।’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা : ৪৯২০, মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ১৪২১০)।

একাধিক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) অনেক সময় দুই হাঁটুর ওপর ভর করে বসে খাবার খেয়েছেন। আনাস (রা.) বলেন, আমি নবীজি (সা.)-কে দুই হাঁটুর ওপর ভর করে ঝুঁকে বসে খেজুর খেতে দেখেছি। (মুসলিম : ৫১৫৮)। তবে এ বর্ণনাটি কেবল খেজুর খাওয়ার ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। খাবার খাওয়ার সর্বোত্তম সুন্নত পদ্ধতি হলো, দুই হাঁটু বিছিয়ে নামাজের মতো করে বসা। নবীজি (সা.) এভাবে বসে খেতেন।

খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতেন : খাবার গ্রহণের শুরুতে বিসমিল্লাহ না বলে নবীজি (সা.) কখনোই খাবার খেতেন না। খাবার খেতে বিসমিল্লাহ বলার বিষয়ে নবীজি (সা.)-এর সুন্দর একটি ঘটনা আছে। হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) বলেন, আমরা একবার নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে খেতে বসি। আমরা কখনও তার স্পর্শ করার আগে খাবারে হাত দিতাম না।

এ সময় এক বেদুইন দৌড়াতে দৌড়াতে এসে হাজির খাবারের পাত্রে হাত বাড়াল। নবীজি (সা.) খপ করে তার হাত ধরে ফেললেন। এর পরপরই একটি ছোট্ট মেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে খাবারের পাত্রে হাত দিচ্ছিল। নবীজি (সা.) তার হাতও ধরে ফেললেন। বললেন, ‘কোনো খাবার আল্লাহর নাম নিয়ে গ্রহণ না করা হলে তাতে শয়তান অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। শয়তান আমাদের খাবারের পাত্রে হাত ঢুকাতে বিরত থাকতে দেখে খাদ্যে ভাগ বসানোর জন্য এক বেদুইনকে ধরে নিয়ে এসেছে। তার হাত ধরে ফেলায় এ ছোট্ট মেয়েকে হাঁকিয়ে নিয়ে এসেছে।

সেই সত্তার কসম, যিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই! এখন এ মেয়ের হাতের সঙ্গে শয়তানের হাতও আমার মুঠোর মধ্যে।’ (আখলাকুন্নবি : ৫৯৬)। তাই রাসুল (সা.) খাবার গ্রহণের আগে সবসময় বিসমিল্লাহ বলতেন। তার সঙ্গীদেরও বিসমিল্লাহ বলতে উৎসাহিত করতেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে ও ডান হাত দ্বারা খানা খাও। তোমার দিক থেকে খাও।’ (বোখারি : ৫১৬৭, তিরমিজি : ১৯১৩)।

খাওয়ার সময় আরো কিছু নিয়ম মানতেন : নবীজি (সা.) ডান হাতে খাবার খেতেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বাঁ হাত দিয়ে খাবার খেও না ও পান করো না। কেননা, শয়তান বাঁ হাতে খায় ও পান করে।’ (তিরমিজি : ১৯১২)। নবীজি (সা.) খাবার শেষে আঙুল চেটে খেতেন।

আঙুল চেটে খাওয়ার ফলে বরকত লাভের বেশি সম্ভাবনা থাকে। কারণ, খাবারের বরকত কোথায় রয়েছে, মানুষ তা জানে না। নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ কর, তখন আঙুল চেটে খাও। কেননা, বরকত কোথায় রয়েছে, তা তোমরা জান না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৯১৪)। নবীজি (সা.) হেলান দিয়ে খেতেন না। খাবারের দোষ-ত্রুটি ধরতেন না। খাবারে ফুঁ দিতেন না। খাওয়ার শেষে দোয়া পড়তেন। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত; রাসুল (সা.) খাবার শেষ করে বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকান গাইরা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মুয়াদ্দায়িন ওয়ালা মুসতাগনান আনহু রাব্বানা।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩২৮৪)। হাত ধুয়ে খাবার শুরু ও শেষ করতেন। দস্তরখান বিছিয়ে খাবার খেতেন। পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খেতেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের খাবার খাওয়ার সময় লোকমা পড়ে গেলে, ময়লা সরিয়ে তা খেয়ে ফেল। শয়তানের জন্য ফেলে রেখ না।’ (তিরমিজি : ১৯১৫)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত