প্রথম মানব ও মানবী জান্নাতে বাস করতেন। শয়তানের ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে তারা পৃথিবীতে আসেন। এখানে ছিল আল্লাহর বিশেষ এক হেকমত। মানুষের মাধ্যমে আল্লাহ পৃথিবী আবাদ করতে চেয়েছেন। তাই তিনি মানুষ সৃষ্টি করে একটি ঘটনাকে উপলক্ষ্য করে মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। ইবলিস শয়তান তার ষড়যন্ত্রের জাল সেই আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়ার সময় থেকেই বিস্তার করে আসছে। সে নিজে আল্লাহর অবাধ্য হয়ে চির জাহান্নামি হবে বলে আদম (আ.) ও তার সন্তানদের সঙ্গে তার এ চিরশত্রুতা। শয়তানের ষড়যন্ত্র শুরু হয় জান্নাত থেকে। আর এ ষড়যন্ত্র কেয়ামত পর্যন্ত চলবে।
আদম ও হাওয়া হলেন প্রথম মানব ও মানবী। প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হলেন আদম (আ.)। আদম (আ.) সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই জান্নাতে বসবাস করতেন। কিন্তু তিনি কীভাবে পৃথিবীতে এলেন? হাওয়া (আ.) আদম (আ.) এর স্ত্রী। তিনি প্রথম মানবী। প্রথম নারী। প্রথম নবীর স্ত্রী। আদি মাতা। নারীদের মন কোমল। তাই শয়তান ধোঁকা দেয়ার জন্য নারীকেই ফাঁদ বানালেন। এক দিনের ঘটনা। হাওয়া (আ.) একা একা জান্নাতে ঘোরাঘুরি করছেন। এমন সময় তিনি একটি কান্নার আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়ালেন। হাওয়া (আ.) ভীষণ অবাক হলেন। জান্নাতে তো কোনো মানুষের পদচারণা নেই। তাহলে কান্নার আওয়াজ কোথা হতে আসছে। একটু এগিয়ে দেখতে পেলেন একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ফেরেশতা কাঁদছে। আসলে সে ছিল শয়তান। ফেরেশতারূপী শয়তান হাওয়াকে দেখে বলতে লাগলেন- ‘আপনার জন্য আমার দুঃখ হচ্ছে। তাই কাঁদছি।’ হাওয়া (আ.) কারণ জানতে চাইলে শয়তান একটি ফল গাছের দিকে ইশারা করে বলল- এ গাছের ফল যে ভক্ষণ করবে, সে কখনো জান্নাত হতে বের হবে না। সে আমরণ জান্নাতে থাকতে পারবে। শয়তান নানা কৌশলে মিথ্যা কথা বলে হাওয়া (আ.)কে প্ররোচনা দিতে লাগল। হাওয়া (আ.) বললেন, আমি আমার প্রভুর নির্দেশ কিছুতেই অমান্য করতে পারব না। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে হাওয়া (আ.) শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে গেলেন।
হাওয়া (আ.)-এর বলাতে আদম (আ)ও সে নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ করলেন। যার আলোচনা কোরআনে এভাবে বর্ণিত হয়েছে। ‘অতঃপর শয়তান তাদের উভয়ের অন্তরে কুমন্ত্রণা প্রদান করল। যাতে তাদের সতর যা গোপন ছিল তা তাদের সম্মুখে উন্মোচিত করে দেয়া হলো। আর শয়তান বলল, তোমাদের প্রতিপালক যে তোমাদের এ বৃক্ষ হতে বারণ করেছেন, তা শুধু এজন্য যে, তোমরা যাতে ফেরেশতা হয়ে না যাও। কিংবা অনন্ত জীবন লাভ না কর। সে নানারকম শপথ করে বলল, আমি তোমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী হয়ে ভালো উপদেশ দিচ্ছি। অতঃপর সে তাদের ধোঁকায় নিপতিত করল। যখন তারা নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণ করে নিল। তখন তাদের গুপ্তাঙ্গ প্রকাশিত হয়ে পড়ল। অতঃপর তারা লজ্জিত হয়ে জান্নাতের পাতা দিয়ে তাদের লজ্জাস্থান ঢাকতে লাগলেন। এরপর তাদের প্রতিপালক তাদের ডেকে বললেন, আমি কি তোমাদের এই বৃক্ষ হতে বারণ করিনি? আর আমি কি বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা আরাফ : ২০,২১) যখন তারা নিষিদ্ধ ফল খেয়ে নিলেন তখন আল্লাহতায়ালা হাওয়া (আ.) ও আদম (আ.) কে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলেন। বললেন এ মুহূর্তে তোমরা জান্নাতে থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছ। সুতরাং তোমরা পৃথিবী হতে কষ্ট সাধনা করে আমার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে পুনরায় জান্নাতে ফিরে আসবে।
দুনিয়ায় মানুষের আগমন : মা হাওয়া (আ.) দুনিয়ার পশ্চিম গোলার্ধে অবতরণ করলেন। আর আদম (আ.) পূর্ব গোলার্ধে নামলেন। তারপর কয়েক শত বছর পর তারা একত্রিত হয়েছিলেন। এরপর তারা উভয়ে দুনিয়া আবাদ করতে লাগলেন। পৃথিবীতে আদম ও হাওয়া (আ.)-এর মাধ্যমে মানব জন্মের সূচনা হয়। আদম (আ.)-এর ঔরসে মা হাওয়া (আ.)-এর গর্ভে মোট ২৩৯ জন মতান্তরে ৩৬১ জন সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। আদম (আ.)-এর মৃত্যুর এক বছর পর মা হাওয়া ইন্তেকাল করেন। সে হিসেবে মা হাওয়া (আ.)-এর বয়স হয়েছিল ৯৬১ বছর। তবে সঠিক বয়সের ব্যাপারে ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করে থাকেন। কোরআনের ভাষ্যমতে, প্রথম মানুষ আদম (আ.)। তাকে আল্লাহ জান্নাতে সৃষ্টি করেছেন। পরে তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। কোনো বানর বা হনুমান থেকে মানুষের সৃষ্টি হয়নি। এ কথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।