ঢাকা রোববার, ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ২৩ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মহানবীর ওয়ালিমা

শরিফ আহমাদ
মহানবীর ওয়ালিমা

বিয়ের পর ছেলে পক্ষ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও গরিব প্রতিবেশীদের সাধ্যানুযায়ী আপ্যায়ন করাকে ওয়ালিমা বলা হয়। ওয়ালিমা করা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাত। মহানবী (সা.) নিজেই বিয়ের ওয়ালিমা করেছেন। সাহাবায়ে কেরামকে করার তাগিদ দিয়েছেন। ওয়ালিমার দাওয়াত গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কাউকে দাওয়াত দেয়া হয় সে যেন তাতে সাড়া দেয়। যদি সে রোজাদার হয় তাহলে সে ওখানে গিয়ে দোয়া, নামাজে রত থাকবে। আর যদি রোজাদার না হয়, তাহলে সে আহার করবে। (মুসলিম : ৩৩৮৯)। হাদিসে আরো বর্ণিত হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) আব্দুর রহমান ইবনে আওফের গায়ে হলুদ রঙের চিহ্ন দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী? তিনি বললেন, আমি এক খেজুর আঁটির ওজন পরিমাণ স্বর্ণ দিয়ে একজন মহিলাকে বিয়ে করেছি। রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহ তোমার বিয়েতে বরকত দান করুন। একটি ছাগল দ্বারা হলেও তুমি ওয়ালিমা করো। (বোখারি : ৫১৫৫)।

মহানবীর ওয়ালিমা : মহানবী (সা.) চতুর্থ হিজরি মতান্তরে তৃতীয় হিজরিতে মদিনায় হজরত জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.) কে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন নবীর ফুফুর কন্যা ও পালকপুত্র জায়েদ ইবনে হারেসা (রা.)-এর সাবেক স্ত্রী। মনোমালিন্য তাদের বিচ্ছেদের প্রধান কারণ। মহানবী (সা.) জয়নাব (রা.)-কে সান্ত¦নার জন্য বিয়ে করতে ইচ্ছা পোষণ করলেও আরবের লোকসমাজের কটুকথার ভয়ে বিরত থাকেন।

কেননা তখন পালকপুত্রকে নিজের ঔরষজাত পুত্র সন্তানের বরাবর মনে করা হত। কিন্তু কুপ্রথা বিলুপ্ত করে দেয়া ইসলামের অপরিহার্য দায়িত্ব। এজন্য কোরআনের আয়াত নাজিল হলো,আপনি কি লোকদের ভয় করছেন? অথচ আল্লাহকেই একমাত্র ভয় করা উচিত। (সুরা আহযাব: ৩৭) স্বয়ং আল¬াহর নির্দেশে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিলুপ্ত হয় আরবের কুপ্রথা। ঐতিহাসিক এই বিয়ের ওয়ালিমার আয়োজন বড় পরিসরে করা হয়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) তার এক সহধর্মিণীর সাথে বাসর ঘরের ব্যবস্থা করলেন এবং ওয়ালিমার দাওয়াত দেয়ার জন্য আমাকে পাঠালেন। (বোখারি : ৪৭৯৬)।

হজরত জয়নাব বিনতে জাহাশের ওয়ালিমার মতো বড় অনুষ্ঠান আর কোন উম্মুল মোমিনের বেলায় করা হয়নি। এই অনুষ্ঠানের বর্ণনা দিতে গিয়ে হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) দাওয়াত করা সকল মেহমানকে গোশত-রুটি, তৃপ্তিসহকারে খাওয়ান। (বোখারি : ৪৭৯৪) সপ্তম হিজরিতে খাইবার যুদ্ধে ইহুদিরা পরাজয় বরণ করে। মুসলমানদের হাতে প্রচুর গনিমতের মালের সাথে যুদ্ধে নিহত হওয়া বিখ্যাত ধনী হোয়াই ইবনে আখতাবের কন্যা হজরত সুফিয়াকেও যুদ্ধবন্দিনী হিসেবে নিয়ে আসা হয়। সাহাবায়ে কেরামের পরামর্শে রাসুল (সা.) সদ্য বিধবা হওয়া হজরত সুফিয়া বিনতে হোয়াইকে মুক্ত করে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে নেন। এ সম্পর্কে হজরত আনাস সূত্রে হাদিসে এসেছে, তিনি বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) হজরত সুফিয়া ( রা.) কে আজাদ করে বিয়ে করেন এবং এই আজাদ করাকেই তার মোহরানা নির্দিষ্ট করেন এবং হাইস বা একপ্রকার সুস্বাদু হালুয়ার দ্বারা ওয়ালিমার ব্যবস্থা করেন। (বোখারি : ৪৭৯৫) হজরত আনাস (রা.) আরো বলেন, খাইবার থেকে ফিরে আসার সময় নবী (সা.) খাইবার ও মদিনার মধ্যবর্তী স্থলে তিন দিন অবস্থান করেন। সেখানে হজরত সুফিয়া (রা.)-কে নিয়ে আসা হলো। তিনি ওয়ালিমার ব্যবস্থা করলেন। আর আমি মুসলিমদের মাঝে তার ওয়ালিমার দাওয়াত করলাম। এই ওয়ালিমায় রুটি বা গোশত কিছুই হলো না। এই ওয়ালিমার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) চামড়ার দস্তরখান বিছানোর আদেশ করলেন। অতঃপর এই দস্তরখানের উপর খেজুর, পনির ও ঘি ঢেলে দেয়া হলো। (বোখারি : ৫৩৮৭, মেশকাত : ৩২১৪)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত