ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি ব্যক্তিভেদে একটু ভিন্ন। ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিণী যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা ইসলামের বিধান। আর যদি ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিণী অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে একশ বেত্রাঘাত করা হবে। আর ধর্ষণের ক্ষেত্রে একপক্ষে ব্যভিচার সংঘটিত হয়। আর অন্যপক্ষ হয় নির্যাতিত। তাই নির্যাতিতের কোনো শাস্তি নেই। শুধু অত্যাচারী ধর্ষকের শাস্তি হবে। ধর্ষণকারী একসঙ্গে দুটো অপরাধ সংঘটিত করে। এক. ব্যভিচার। দুই. অন্যের শারীরিক এবং সামাজিক মর্যাদার ক্ষতি। এক্ষেত্রে প্রথমটির জন্য পূর্বোক্ত ব্যভিচারের শাস্তি বরাদ্দ। আর যেহেতু একই সঙ্গে দ্বিতীয় আরেকটি অপরাধ সংঘটিত হলো এজন্য ধর্ষণকারীকে হত্যার শাস্তি দেয়া হয়েছে। ধর্ষক বা ব্যভিচারকারীকে প্রকাশ্যে শাস্তি দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে, যাতে মানুষ এই শাস্তি স্বচক্ষে দেখতে পায়। প্রকাশ্য শাস্তি দেখলে মানুষের মনে ভয় সঞ্চার হবে এবং এ ধরনের কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট থাকবে।
ধর্ষণ ও ব্যবিচারের ক্ষতি : ধর্ষণ ও ব্যভিচারের কারণে ঈমান দুর্বল হয়ে যায়। এসব কাজে যারা জড়িত থাকে তাদের ঈমান হারা হয়ে মৃত্যুবরণ করার প্রবল শঙ্কা থাকে। কারণ হাদিসের বর্ণনা মতে ব্যভিচারের সময় ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর ঈমান সঙ্গে থাকে না। মোমিনের জন্য এটা অভাবনীয় ক্ষতি নিঃসন্দেহে। এ প্রসঙ্গে নবী (সা.)-এর অনেক হাদিস রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো পুরুষ ব্যভিচার করে তখন তার ঈমান তার অন্তর থেকে বের হয়ে মেঘের মতো তার উপরে চলে যায়। অতঃপর যখন সে ব্যভিচারকর্ম সম্পাদন করে ফেলে, তখন আবারো তার ঈমান তার কাছে ফিরে আসে’। (আবু দাউদ : ৪৬৯০)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে আছে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ব্যভিচার অথবা মদ পান করল আল্লাহতায়ালা তার ঈমান ছিনিয়ে নিবেন যেমনিভাবে কোনো মানুষ তার জামা নিজ মাথার উপর থেকে খুলে নেয়।’ (হাকিম : ১/২২)।
ব্যভিচারের কারণে ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর ঈমানে ঘাটতি আসে। একথা বিভিন্ন হাদিস থেকে বোঝা যায়। যেমন- আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন,‘ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ পানকারী যখন মদ পান করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। তবে এরপরও তাদেরকে তওবা করার সুযোগ দেওয়া হয়।’।(আবু দাউদ : ৪৬৮৯; ইবন মাজাহ : ৪০০৭)।
ব্যভিচার কোনো অঞ্চলে প্রসার লাভ করলে সে অঞ্চলে আল্লাহতায়ালার গজব নাজিল হয়। সে জনপদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি আছে হাদিসে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘কোনো এলাকায় সুদ ও ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়লে আল্লাহতায়ালা তখন সে জনপদের জন্য ধ্বংসের অনুমতি দিয়ে দেন’।
লেখক : সহকারী শিক্ষাসচিব, মাদ্রাসা আশরাফুল মাদারিস, তেজগাঁও ঢাকা