ঢাকা রোববার, ৩০ মার্চ ২০২৫, ১৬ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কোরআনে বর্ণিত নবী রাসুলের দোয়া

শরিফ আহমাদ
কোরআনে বর্ণিত নবী রাসুলের দোয়া

প্রত্যেক নবী ও রাসুল নবুওয়াতের দায়িত্ব যথাযথভাবে আঞ্জাম দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তারা শত বাধা ও বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। তখন কৌশল ও প্রজ্ঞা? প্রয়োগের পাশাপাশি তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক সমস্যার ক্ষেত্রেও তারা দোয়ার হাত প্রসারিত করেছেন। কোরআনে বর্ণিত তাদের দোয়াগুলোতে তাওহিদের স্বীকৃতি, আল্লাহর প্রতি গভীর নির্ভরতা ও বিনীত আত্মসমর্পণের চিত্র পাওয়া যায়। গত সংখ্যার পর আরো কয়েকজন নবী রাসুলের দোয়া এখানে উল্লেখ করা হলো।

সুলাইমান (আ.)-এর দোয়া : হজরত সুলাইমান (আ.) দুনিয়ার ক্ষমতা ও সাফল্যের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। এই দোয়া ক্ষমতা, কৃতজ্ঞতা ও কল্যাণ কামনার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, রব্বিগফিরলি ওয়া হাবলি মুলকান লা ইয়ামবাগী লি আহাদিম মিনবাদী, ইন্নাকা আন্তাল ওয়াহহাব। অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর এবং আমাকে এমন এক রাজত্ব দান কর, যা আমার পরে আর কারো জন্য মানানসই হবে না। নিশ্চয়ই তুমি মহানদাতা। (সুরা সাদ: ৩৫)। এ দোয়ার ফলে হজরত সুলাইমান (আ.) কে যেরূপ সাম্রাজ্য দান করা হয়েছিল তেমন রাজত্বের অধিকারী পরবর্তীকালে আর কেউ হতে পারেনি। বাতাস, জিন জাতি ইত্যাদির উপরও তার রাজত্ব ছিল। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক অবাধ্য জিন রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সালাত নষ্ট করতে চাইলে তিনি সেটাকে বেঁধে রাখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সুলাইমান (আ.)-এর এ দোয়ার কথা স্মরণ করে তার সম্মানে তিনি তা থেকে বিরত থাকেন। (বোখারি : ৩১৮৩)।

জাকারিয়া (আ.)-এর দোয়া : জাকারিয়া (আ.) যখন বার্ধক্যে উপনীত হয়েছিলেন, তখন পর্যন্ত তার কোন সন্তান ছিল না। তিনি আল্লাহর দরবারে কাতর প্রার্থনা করে বলেছিলেন, তাকে যেন উত্তরাধিকারী দেয়া হয়। যে উত্তরাধিকারী নবুয়তের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন এবং দীনের খেদমত করবেন। আল্লাহপাক তার দোয়া কবুল করেন। বৃদ্ধা বয়সে তার স্ত্রী সন্তানের মা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তার দোয়ার ভাষা ছিল এমন- ‘রব্বি লা তাজারনী ফারদান ওয়া আনতা খাইরুল ওয়ারিসীন।’ অর্থ : হে আমার রব! আমাকে একা ছেড়ে দেবেন না, আপনি চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী। (সুরা আম্বিয়া : ৮৯)।

লুত (আ.) এর দোয়া : হজরত লূত (আ.) দাওয়াত ও হেদায়েতের উদ্দেশ্যে মৃত সাগরের দক্ষিণ পাশের অঞ্চলে অবস্থান করেন। ওখানে সাদূম ও আমুরা গোত্রদ্বয়ের বসতি ছিল। সেখানের লোকেরা একপ্রকার অতি কুৎসিত কুকর্মে লিপ্ত ছিল। তিনি সবাইকে এ ধরনের অপকর্ম থেকে বিরত থাকতে কঠোরভাবে সতর্ক করলেন। কিন্তু তারা তার কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করল না । বরং তাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে লাগল। হজরত লূত (আ.) এই সংকটকালে দুটি দোয়া করেন। একটি দোয়ায় তিনি মোমিনদের জন্য প্রার্থনা করলেন, ‘রব্বি নাজ্জিনি ওয়া আহলীয়ি মিম্মা ইয়া মালূন। অর্থ:?? হে আমার রব, আমাকে ও আমার পরিবার-পরিজনকে এহেন দুষ্কর্ম থেকে রক্ষা করুন। (সুরা শুআরা : ১৬৯)।

আইয়ুব (আ.) এর দোয়া : হজরত আইয়ুব (আ.) ছিলেন ধৈর্যের এক উজ্জ্বল প্রতীক। দীর্ঘস্থায়ী রোগব্যাধি ও সম্পদের ক্ষতির পরও তিনি আল্লাহর রহমতের আশা ছাড়েননি। এই অসুস্থতার দিনগুলোতে একজন স্ত্রী ছাড়া তার সঙ্গে কেউ ছিল না। সন্তান-সন্ততি সব মারা গিয়েছিল। বন্ধু-বান্ধব সবই উধাও হয়ে গিয়েছিল। এরপর তিনি ধৈর্য পরীক্ষায় সফলতা লাভ করেন। আল্লাহতায়ালা তাকে সুস্থতা দান করেন। তিনি দোয়ায় বলেছিলেন, ‘রব্বি আন্নী মাসসানিয়াদ দুররু ওয়া আন্তা আরহামুর রাহিমীন। অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আমি দুর্দশাগ্রস্ত হয়েছি, আর তুমি তো সর্বাধিক দয়ালু। (সুরা আম্বিয়া : ৮৩)।

ঈসা (আ.)-এর দোয়া : হজরত ঈসা (আ.)-এর অনুসারী হাওয়ারীরা নবুয়াতের নিদর্শন হিসেবে তার কাছে অনুরোধ করেছিল আল্লাহ যেন আসমান থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা নাজিল করেন। এতে তাদের হৃদয়ে ঈমান আরও দৃঢ় হবে। কেউ কেউ বলেছেন, তারা অভাব ও দারিদ্র্যের তাড়নায় এ আবেদন করেছিল। প্রথমে হজরত ঈসা (আ.) তাদের সতর্ক করে বলেছিলেন, আল্লাহকে ভয় করা ও বিশ্বাস রাখা অলৌকিক নিদর্শনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। তবে অনুসারীদের অনুরোধে তিনি আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। সেই দোয়া আল্লাহ কবুল করেছিলেন। তিনি দোয়ায় বলেছিলেন, ‘আল্লাহুম্মা রব্বানা- আনজিল আলাইনা- মা-ইদাতাম মিনাস সামাই তাকূনু লানা- ঈদাল্লি আওয়ালিনা ওয়া আখিরিনা ওয়া আইয়াতাম মিংক ওয়ারজুকনা- ওয়া আনতা খাইরুর রাজিকীন। অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য আসমান থেকে একটি খাঞ্চা অবতীর্ণ করুন, যা হবে আমাদের এবং আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য আনন্দ উদযাপনের কারণ এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন। আমাদের (এ নেয়ামত) অবশ্যই প্রদান করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। (সুরা মায়িদা : ১১৪)।

মুহাম্মদ (সা.)-এর দোয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনেক দোয়া কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এসব দোয়া করেছেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এই বলে দোয়া করতেন, ‘রব্বানা আতিনা ফিদ দুনইয়া হাসানাতও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতও ওয়া কিনা আজাবান নার। অর্থ: হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা : ২০১, বোখারি : ৪১৬৮)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত