ঢাকা সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পিতামাতার আনুগত্যে সুখময় জীবন

দিদার শফিক
পিতামাতার আনুগত্যে সুখময় জীবন

পৃথিবীতে পিতামাতার চেয়ে আপন কেউ নেই। জীবন চলার পথে সবাই স্বার্থ খুঁজলেও পিতামাতা কখনও স্বার্থ খুঁজেন না। পিতামাতা সন্তানের জন্য অমূল্য সম্পদ। সুখের চাবিকাঠি। কেননা তাদের সন্তুষ্টিতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি। তাদের দোয়ার বরকতে সন্তানের জীবন হয় সুপ্রসন্ন, বরকতময়। তাই পিতামাতাকে কদর করা খুব জরুরি। তাদের সঙ্গে সর্বোচ্চ বিনয়ী হওয়া ইসলামের অনন্য শিক্ষা। আল্লাহতায়ালা পিতামাতার সঙ্গে ধমকের স্বরে কথা বলতে নিষেধ করেছেন এবং তাদের সঙ্গে কোমল আচরণের হুকুম দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তাদের দুজন অথবা একজন বার্ধ্যকে পৌঁছে তাহলে তাদের সঙ্গে চিৎকার করে ধমকের স্বরে কথা বলো না এবং তাদের সঙ্গে নরম স্বরে কথা বলো। (সুরা ইসরা: ২৩)। পিতামাতা কষ্ট পাবেন এমন আচরণ করা যাবে না। তাদেরকে ধমক দিয়ে কথা বলা কবিরা গোনাহ। বান্দার সুভাগ্য বা দুর্ভাগ্য নির্ভর করে পিতামাতার সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির ওপর। এ প্রসঙ্গে নবীজি বলেছেন, পিতামাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি। পিতামাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহতায়ালার অসন্তুষ্টি। (তিরমিজি : ১৮৯৯)।

পিতামাতার আনুগত্য করা: সন্তান পিতামাতার কথা মেনে চলা জরুরি। পিতামাতার কথা না শুনলে সন্তান ভুল পথে পা বাড়ায়। এক সময় এর পরিণাম হিসেবে জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। পিতামাতা আল্লাহর অবাধ্যতায় আদেশ না করলে তাদের সব ধরনের আদেশ মেনে চলা আবশ্যক। কোনো অবস্থাাতেই পিতামাতার অবাধ্য হওয়া যাবে না। ব্যক্তি জীবনে ক্ষতির সম্মুখীন হলেও পিতামাতাকে কষ্ট দেয়া যাবে না। তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা যাবে না। এমনকি পিতামাতা কোন সন্তানকে যদি তাদের সম্পদ থেকে বঞ্চিতও করেন তারপরেও সন্তানের উচিত নয় তাদের অবাধ্য হওয়া। সাহাবি মোয়াজ ইবনে জাবাল বলেন,রাসুলুল্লাহ আমাকে অসিয়ত করেছেন পিতামাতার অবাধ্য হয়ো না যদিও তারা তোমাকে পরিবার ও সম্পদ থেকে বের হয়ে যেতে বলে (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৮/১৪১)।

পিতামাতা যদি ন্যায়সঙ্গত কারণে এবং দীনদারিকে প্রাধান্য দিয়ে সার্বিক কল্যাণ বিবেচনায় ছেলেকে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বলেন,তাহলে সেক্ষেত্রেও তাদের আদেশ মানা আদব ও জরুরি। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বলেন,আমার বিবাহে একজন নারী ছিল যাকে আমি পছন্দ করতাম কিন্তু ওমর (রা.) (তার পিতা) তাকে অপছন্দ করতেন। তিনি বললেন, তাকে তালাক দাও। আমি তালাক দিতে অস্বীকৃতি জানালাম। তখন তিনি নবীজির নিকটে এলেন এবং ঘটনা বললেন। নবীজি আমাকে বললেন, পিতার অনুসরণ কর। অর্থাৎ তাকে তালাক দাও। (সহি ইবনে হিব্বান: ৪২৬,৩৫৪)। উল্লেখ্য, স্ত্রীর শরয়ি কোনো ত্রুটি না থাকলে তাকে যথাসম্ভব সম্মান করা উচিত। শুধু বাবামাকে খুশি করার জন্য স্ত্রীর ওপর জুলুম করা যাবে না। স্ত্রীর দোষ না থাকলে তাকে তালাক দেয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

পিতামাতার সেবা করা: নবীজি (সা.) ক্ষেত্রবিশেষে পিতামাতার অধিকার ও সন্তুষ্টিকে আল্লাহতায়ালার রাস্তাায় জিহাদ করার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, ইবনে ওমর বলেন, একজন ব্যক্তি এসে নবীজির কাছে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন। নবীজি বললেন, তোমার পিতামাতা কি বেঁচে আছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এবার নবীজি বললেন, তুমি তাদের মধ্যেই জিহাদ কর (অর্থাৎ তাদের সেবা করার মাধ্যমে নিজেকে নিয়োজিত রেখে তাদের সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করো।) (বোখারি : ৫৯৭২)।

পিতামাতার খেদমত ও অধিকারকে নবীজি হিজরতের মতো গুরুত্বপূর্ণ আমলের ওপরেও প্রাধান্য দিয়েছেন। সাহাবি ইবনে ওমর বলেন, একজন ব্যক্তি নবীজির নিকটে এসে বাইয়াত হলেন এবং বললেন,আমি আমার পিতামাতাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় রেখে আপনার কাছে হিজরতের জন্য বাইয়াত হতে এসেছি। তার এই কথা শুনে নবীজি বললেন, তাদের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মুখে হাসি ফুটাও যেভাবে তাদের কাঁদিয়েছ। (আবু দাউদ : ২৫২৮)। আবু দাউদ শরিফে বর্ণিত হাদিসে আছে, একজন ব্যক্তি সুদূর ইয়ামেন থেকে হিজরত করে নবীজির কাছে এলো। নবীজি তাকে প্রশ্ন করলেন, ইয়ামেনে কি তোমার পিতামাত আছে? তিনি বললেন, আছে। এবার নবীজি বললেন, তুমি কি তাদের অনুমতি নিয়ে এসেছ? তিনি বললেন, না। নবীজি তাকে আদেশ করলেন, পিতামাতার কাছে ফিরে গিয়ে অনুমতি চাও। তারা আসতে দিলে এসো নচেৎ তাদের সঙ্গে সদাচারণ কর (আবু দাউদ : ২৫৩০)।

পিতামাতা বার্ধক্যে পৌঁছলে তাদের প্রতি খুব যত্নশীল হতে হয়। তাদের কী দরকার তা খেয়াল রাখতে হয়। এ দায়িত্ব সন্তানের। সন্তান এ দায়িত্ব পালন না করলে গোনাহগার হবে। আজকাল বিদেশে অবস্থানরত অনেক সন্তান নিজ পিতামাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখে। বৃদ্ধ বয়সে পিতামাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা কোনো সমাধান নয়। তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারাটা সৌভাগ্যের। এতে সন্তান সুখী হয়। জীবনে ও রিজিকে বরকত লাভ করে। পিতামাতার দোয়া সন্তানের জীবনে খুব প্রয়োজন। দোয়া এমনিতেই আসে না। দোয়া পেতে হলে দোয়া পাওয়ার যোগ্য হতে হয়। সে যোগ্যতা লাভের সহজ উপায় একটাই- পিতামাতার আনুগত্য ও সেবা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত