ইসলামে বৈরাগ্য নেই। আবার কামনা-বাসনার লাগামহীন চর্চাও নেই। তাই বিয়েকে সুন্নাহ হিসেবে ইসলাম ঘোষণা করেছে। ফিকহি মাসয়ালা অনুযায়ী বিয়ের নানা স্তর আছে- ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাহ ও মাকরুহ। এটা নির্ধারিত হয় ব্যক্তির সামর্থ্য ও জৈবিক চাহিদার ভিত্তিতে। আমরা জানি, যে সমাজে বিয়ে সহজ হবে, সে সমাজে ব্যভিচার কঠিন হবে। আর যে সমাজে বিয়ে কঠিন হবে, সে সমাজে ব্যভিচার সহজ হবে। এজন্য বিয়েতে নবীজির অন্যতম সুন্নাহ হলো, বিয়ে সহজ করা। খরচ, মহর ও আয়োজন থেকে শুরু করে সার্বিকভাবে বিয়ে সহজ করা নবীর সুন্নাহ। অনর্থক খরচ কমিয়ে আনার মাধ্যমে বিয়ে সহজ হবে। বিয়ের সামাজিক আয়োজন ও খরচাদি বেশ বেশি হওয়ার কারণে বিয়ের উপযুক্ত অনেক ছেলেমেয়ে যৌবনের তাড়নায় হারাম সম্পর্কে লিপ্ত হয়। ক্রমে সম্পর্ক গভীর হলে তা শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়। ফলে সমাজ কলুষিত হয়। বিয়ে কঠিন হওয়ার কারণেই অনেকে হারাম সম্পর্কের দিকে পা বাড়ায়। বেড়ে যায় ব্যভিচার, ইভটিজিং। এসব অসামাজিক ও অনৈতকি অপকর্ম নির্মূলের সহজ উপায় হলো বিয়েকে সহজ করা ও সুন্নাহসম্মত বিয়ের আয়োজন বৃদ্ধি করা।
বিয়েতে রাসুলের সুন্নাহ
পাত্রী দেখা : বিয়ের আগে পাত্র পাত্রীকে দেখে নেয়া সুন্নাহ। পাত্রীর চেহারা, কবজি পর্যন্ত হাত ও শালীন পোশাকে পাত্রীকে সরাসরি সামনে থেকে দেখে নেওয়া সুন্নাহ। পাত্রীকে শুধু পাত্র দেখবে আর পাত্রের নারী অভিভাবক দেখবে পাত্র ছাড়া অন্য পুরুষ অভিভাবক পাত্রী দেখা হারাম। কবিরা গোনাহ।
মুগীরা ইবনে শো’বা (রা.) বলেন, আমি এক নারীকে বিয়ের প্রস্তাব করি। তখন রাসুল (সা.) আমাকে বললেন, তুমি কি তাকে দেখেছো? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তুমি তাকে দেখে নাও। এটা তোমাদের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টির জন্য সহায়ক হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ : ৩১০৭)।
দ্বীনদারিতা প্রাধান্য দেয়া : পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে ধার্মিকতাকে প্রাধান্য দেয়া নবী (সা.) এর সুন্নাহ। ধার্মিক নরনারী স্বভাবে ও চরিত্রে ভালো হয়। ফলে সংসার জীবন সুখময় হয়। নবীজি (সা.) বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করে মেয়েদের বিয়ে করা হয়: তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার ধার্মিকতা। সুতরাং তুমি ধার্মিকতাকে প্রাধান্য দাও নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।(মিশকাতুল মাসবীহ : ৩০৮০)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের নিকট এমন কেউ বিয়ের প্রস্তাব দেয়, যার দ্বীনদারি ও চরিত্রের ব্যাপারে তোমরা সন্তুষ্ট, তাহলে তার সাথে তোমরা নিজ কন্যা ও ভগ্নিকে বিয়ে দাও।’ (মিশকাতুল মাসাবীহ : ৩০৯০)।
সাধ্য অনুযায়ী মহর নির্ধারণ : পাত্রের সাধ্যের মধ্যে মহর নির্ধারণ করা সুন্নাহ। এক টাকা বা সাধ্যের বাইরে শুধু আবেগে কিংবা নাম যশের জন্য কোটি টাকার মহর নির্ধারণ করা অনুচিত। এক টাকার কোনো মহর হয় না।
তখন পাত্রীর মহরে মিছিল তথা মেয়ে পক্ষের ফুফু বা বোনের মহরের সমপরিমান মহর তার মহর হিসেবে গণ্য হবে। মহর নির্ধারণ করে তা পরিশোধ করা স্বামীর জন্য ফরজ। পরিশোধ না করলে গোনাহগার হবে স্বামী। মহর সহজ ও সাধ্যের মধ্যে রাখা প্রসঙ্গে নবী (সা.) বলেন, সাবধান! তোমরা নারীদের মহর নির্ধারণে সীমালঙ্ঘন কর না। কারণ যদি তা দুনিয়ার মর্যাদার বস্তু হতো, তাহলে তোমাদের চেয়ে নবী (সা.) হতো এর যোগ্যতম ব্যক্তি। (আবু দাউদ: ২১০৬)।
অলিমা করা : কনের বাড়িতে বরপক্ষ লোকজন নিয়ে গিয়ে ভোজনবিলাস করা হারাম। গোনাহ। উভয় পক্ষের সাধ্য ও সন্তুষ্টিতে সীমিত পরিসরে খাবারের আয়োজন কনের বাড়িতে হতে পারে। তবে তা করতেই হবে এমন নিয়ম ইসলামে নেই। কিন্তু বিয়ের পর স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে বাসর যাপনের পর নিজ বাড়িতে লোকজন দাওয়াত করে খাওয়ানো সুন্নাহ। এ ভোজানুষ্ঠানকে অলিমা বলে। সমাজে যা বৌভাত নামে পরিচিত। অলিমা অনুষ্ঠানে পর্দার পরিবেশ রক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। অলিমা প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে। আনাস (রা.) আব্দুর রহমান ইবনে আউফের (রা.) কাপড়ের ওপর (আতরের) হলুদ রঙ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কীসের রঙ? তিনি বললেন, আমি জনৈক রমণীকে খেজুরের একটি বিচি পরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে বিয়ে করেছি। রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুক, একটি বকরি দিয়ে হলেও তুমি অলিমা করো।’ (মিশকাতুল মাসাবীহ : ৩২১০)।
সহজ আয়োজনে বিয়ে করা : বিয়েকে খুব জাকজমক না করা। বিশাল আয়োজন না করা। অতিরিক্ত খরচ না করা। বরং কম খরচে ও অনাড়ম্বর আয়োজনের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করা সুন্নাহ। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে বিয়ে সহজে সম্পন্ন হয়, তা-ই হলো উত্তম বিয়ে। (আবু দাউদ ২১১৭)।