ঢাকা বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সমাজে নিষিদ্ধ পল্লির নেতিবাচক প্রভাব

মুফতি শাহাদাত হোসাইন
সমাজে নিষিদ্ধ পল্লির নেতিবাচক প্রভাব

ইসলামপূর্ব জাহেলিয়াতের যুগে নারী ছিল পণ্য। কেনাবেচা হত বাজারে। সমাজে নারীর সম্মান বলতে কিছু ছিল না। উপরন্তু তাদের লাঞ্ছনার কারণ মনে করা হত। ফলে জীবন্ত কন্যাকে পুতে দেওয়া হত। ইসলাম নারীকে সেই অবমাননাকর জীবন থেকে মুক্ত করে। মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত বলে ঘোষণা দেয় (মিজানুল ইতিদাল ৪:২২০)। কন্যা সন্তানের প্রতিপালনে জান্নাতের নিশ্চয়তা দেয়। সর্বোপরি পিতার সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিশ্চিত করে।

নারীকে সম্মানের সেই আসন থেকে দূরে ঠেলে দিতে নারী অধিকারের মুখোশধারী কিছু লোক নারীকে পণ্য বানানোর তদবিরে মেতে উঠেছে। এরা নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। তারা নারীকে সম্মানের আসন থেকে নামিয়ে পতিতাবৃত্তি নামক অসম্মানের আসনে বসাতে চায়। সুচিন্তক ব্যক্তি মাত্রই জানেন যে, পতিতাবৃত্তিকে কর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নারীকে সম্মান জানানো হয় না বরং তাদের অপমানের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করা হয়। যে নারীকে মা, মেয়ে, বোন হিসেবে সম্মানের শীর্ষ আসনে রাখার কথা তার ঠিকানা হবে নিষিদ্ধ পল্লির বিছানায়। একজন মুসলিম হিসাবে নারীর এ অসম্মান কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

মানব সমাজকে কলুষতামুক্ত রাখতে, সমাজের ভারসম্যতা বজায় রাখতে, আল্লাহ মানুষকে নানাবিধ নিয়মনীতির মধ্যে চলতে আদেশ করেছেন। সেই সব নীতির ব্যত্যয় সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটায়। পতিতাবৃত্তি এমনি একটি কাজ যা নিষ্কলুষ সমাজে কলুষতার বিষবাষ্প ছড়ায়।

পবিত্র সমাজকে অপবিত্র করে। দুনিয়া এবং আখেরাতে মানুষকে শাস্তির যোগ্য করে। বসবাসযোগ্য দুনিয়াকে হরেকরকম রোগবালাইয়ে মানুষের জন্য বিষাক্ত করে তোলে। আল্লাহ বলেছেন, মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে, ফলে তিনি তাদের কোন কোন কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে (সুরা রুম : ৪১)। আল্লাহ প্রদত্ত সেই সমস্ত নিয়মনীতি মেনেই মানুষের চলা উচিত।

পতিতাবৃত্তি হারাম : পতিতাবৃত্তি আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ, শাস্তিযোগ্য কর্ম। আল্লাহ মানুষকে ব্যভিচারের নিকটবর্তী হতেও নিষেধ করেছেন। পতিতাবৃত্তি ব্যভিচারেরই একটি রুপ। কোরআনে এসেছে, আর তোমরা ব্যভিচার (পতিতাবৃত্তির) ধারে-কাছেও যেও না, নিশ্চয়ই তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ (সুরা ইসরাইল : ৩২)। শাসনকার্যে যারা নিয়োজিত থাকেন তাদের দায়িত্ব সমাজকে সকল ধরনের অন্যায়-অশ্লীলতা, বেহায়া আর বেলাল্লাপনা থেকে মুক্ত রাখা। সমাজে এমন অপকর্মের বৈধতা দেয়া উচিত নয়, যা সমাজ নষ্টের কারণ হয়। নিষিদ্ধ পল্লি। যেখানে ব্যভিচারের মতো নিকৃষ্ট অপকর্মে মানুষ ডুবে থাকে। আল্লাহর অভিশম্পাত সর্বদা বর্ষিত হয় যেখানে। এমন অপকর্মকে কোনো ভদ্র সমাজ বৈধকর্ম বলে স্বীকৃতি দিতে পারে না।

মনে রাখতে হবে, পাপকে পাপ মনে করে করলে তার শাস্তি হয় এক-ধরনের আর বৈধ ভেবে করলে তার শাস্তি হয় ভিন্ন। আরও মনে রাখতে হবে, পতিতাবৃত্তি আল্লাহ ঘোষিত নিষিদ্ধ হারাম কাজ। যারা এটাকে বৈধ-হালাল মনে করবে তারা অবশ্যই ইসলামবহির্ভূত হিসেবে গণ্য হবেন। পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দেওয়ার ফলে সমাজে অবাধ-অবৈধ যৌনাচারের ব্যাপকতা ঘটবে। মানুষের চারিত্রিক অধঃপতন হবে। মানুষ মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলবে। যৌনবাহী রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে। সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তাই নিষিদ্ধ পল্লি তৈরি না করে নারীদের বৈধ ও সম্মানজনক কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া জরুরি।

লেখক : খতিব, বাইতুল আজিম জামে মসজিদ রংপুর

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত