মুক্তিযুদ্ধ ও ২৫ বছরের মৈত্রী চুক্তি
অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে প্রায় সপরিবারে নিহত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ভারতের ২৫ বছরের মৈত্রী চুক্তিতে কেউ কেউ দায়ী করেছিলেন এবং পরবর্তী ২১ বছর সময়-সুযোগ মতো একই কথার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার এক সিনিয়র সহকর্মীকে বলতে শুনেছিলাম, এই চুক্তি দ্বারা শেখ মুজিব বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছেন। আমি বিস্মিত হয়েছিলাম, কারণ এই চুক্তিতে এমন কিছু ছিল না। আজকে বঙ্গবন্ধুর শাহদতবার্ষিকীতে কেবলমাত্র নতুন প্রজন্মের জন্য ২৫ বছরের চুক্তিটি নিয়ে আলোচনা করব। প্রথমে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে চুক্তিটি করা হয়েছিল, তার ধারাগুলো এখানে তুলে ধরছি-
অনুচ্ছেদ এক : চুক্তিকারী উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন উভয় পক্ষ নিজ নিজ দেশের জনগণ যে আদর্শের জন্য একযোগে সংগ্রাম এবং স্বার্থত্যাগ করেছেন, সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মর্যাদার সঙ্গে ঘোষণা করছেন যে, উভয় দেশ এবং তথাকার জনগণের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও মৈত্রী বজায় থাকবে, একে অপরের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে এবং অপরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে। চুক্তিকারী উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন উভয় পক্ষ উল্লেখিত নীতিমালার ভিত্তিতে এবং পারস্পরিক ক্ষমতা ও সম্মানজনক নীতিগুলোর ভিত্তিতে উভয় দেশের মধ্যকার বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সুপ্রতিবেশীসুলভ সার্বিক সহযোগিতার সম্পর্কের আরো উন্নয়ন জোরদার করবে।
অনুচ্ছেদ দুই : জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি সমতার নীতিতে আস্থাশীল থাকার আদর্শে পরিচালিত হয়ে চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ সর্বপ্রকারের উপনিবেশবাদ ও বর্ণ বৈষম্যবাদের নিন্দা করছে এবং তাকে চূড়ান্তভাবে ও সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর ব্যাপারে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ উপরোক্ত অভীষ্ট সিদ্ধির জন্য নানা রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করার এবং উপনিবেশবাদ ও বর্ণ বৈষম্যবিরোধী সংগ্রামে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সমর্থন দান করবে।
অনুচ্ছেদ তিন : বিশ্বের উত্তেজনা প্রশমন, আন্তর্জাতিক শান্তি নিরাপত্তা এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা মজবুত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসেবে জোটনিরপেক্ষতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতির প্রতি তাদের অবস্থান পুনরুল্লেখ করছে।
অনুচ্ছেদ চার : উভয় দেশের স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রধান আন্তর্জাতিক সমস্যাবলী নিয়ে চুক্তিকারী উভয়পক্ষ সকল স্তরে বৈঠক ও মতবিনিময়ের জন্য নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করবে।
অনুচ্ছেদ পাঁচ : চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সুবিধাজনক ও সর্বাত্মক সহযোগিতা শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করে যাবে। উভয় দেশের ক্ষমতা ও পারস্পরিক সুবিধা নীতিভিত্তিক বাণিজ্য, পরিবহণ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রসারিত করবে।
অনুচ্ছেদ ছয় : বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী অববাহিকার উন্নয়ন এবং জলবিদ্যুৎ ও সেচব্যবস্থা উন্নয়নের ক্ষেত্রে যৌথ সমীক্ষা পরিচালনা ও যৌথ কার্যক্রম গ্রহণে চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ অভিন্ন মত পোষণ করছে।
অনুচ্ছেদ সাত: চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলার ক্ষেত্রে সম্পর্কের প্রসার করবে। অনুচ্ছেদ আট : দুই দেশের মধ্যকার বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনুযায়ী চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ প্রত্যেকে মর্যাদার সঙ্গে ঘোষণা করছে, তারা একে অপরের বিরুদ্ধে পরিচালিত কোনো সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হবে না বা অংশ নেবে না; অন্যর ওপর আক্রমণ থেকেও নিবৃত্ত থাকবে এবং তাদের এলাকায় এমন কোনো কাজ করতে দেবে না, যাতে চুক্তিকারী কোনো পক্ষের ক্ষতি হতে পারে বা তা কোনো পক্ষের নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
অনুচ্ছেদ ৯ : কোনো এক পক্ষের বিরুদ্ধে তৃতীয় পক্ষ সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হলে চুক্তিকারী প্রত্যেককে এতদোল্লিখিত তৃতীয় পক্ষকে যে কোনো প্রকার সাহায্যদানে বিরত থাকবে। এছাড়া যে কোনো পক্ষ আক্রান্ত হলে অথবা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে সেই আশঙ্কা নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে যথাযথ সক্রিয় ব্যবস্থা নিতে উভয়পক্ষ সঙ্গে সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হয়ে নিজেদের দেশের শক্তি এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে। অনুচ্ছেদ ১০ : চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ ঘোষণা করেছে, এই চুক্তির পক্ষে অসামঞ্জস্য হতে পারে- এমন গোপন বা প্রকাশ্য এক বা একাধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে উভয়ের কেউই কোনো অঙ্গীকার করবে না।
অনুচ্ছেদ ১১ : এই চুক্তি ২৫ বছর মেয়াদের জন্য স্বাক্ষরিত হলো। চুক্তিকারী উভয়পক্ষের পারস্পরিক সম্মতিতে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। অত্র চুক্তি সই করার দিন থেকে কার্যকরী হবে।
অনুচ্ছেদ ১২ : এই চুক্তি কোনো একটির বা একাধিক অনুচ্ছেদের বাস্তব অর্থ করবার সময় চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পক্ষদ্বয়ের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য দেখা দিলে তা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার মনোভাব দ্বারা শান্তিপূর্ণ আলোচনায় নিষ্পত্তি করতে হবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তিটিকে কখনো কেউ কেউ গোলামি চুক্তি বলে অভিহিত করে আসছিল। এই চুক্তির মূল প্রণেতারা কেউ আর বেঁচে নেই বা তাদের নিজস্ব কোনো ব্যাখ্যাও আমাদের হাতে নেই। অতএব, সেই চুক্তির পেছনের মতলবগুলো তদানীন্তন প্রেক্ষিত ও প্রেক্ষাপট দিয়েই বিচার করতে হবে। অনেকে বলেন, এই চুক্তিটি ১৯৭১ সালের ভারত-সোভিয়েত ইউনিয়নের মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তির কার্বন কপি। বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে গিয়ে ভারত পশ্চিমা বিশ্ব ও আরব বিশ্বের সমর্থন হারিয়েছিল। সেই দিনের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে, পৃথিবীর বৃহৎ কিংবা মাঝারি শক্তির কেউ তেমন একটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেনি। নিজেদের একাকিত্ব ও উৎকণ্ঠা কাটিয়ে বাংলাদেশকে মদত দেওয়ার প্রয়োজনে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য সেদিন ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদন করে। মনস্তাত্ত্বিক জোর পেতেও তার এমন একটি চুক্তির প্রয়োজন ছিল। তার উপলক্ষটা ছিল বাংলাদেশ। দায়ে পড়ে একটি বৃহৎ শক্তি তথা পরাশক্তি এবং নিরাপত্তা পরিষদের একজন স্থায়ী সদস্যের সঙ্গে চুক্তি করতে গিয়ে কিছুটা হলেও মনস্তাত্ত্বিক ও স্নায়ুবিক দুর্বলতায় ভারত ভুগছিল। তাই চুক্তিটির অন্তত কয়েকটি ধারায় ভারতের দুর্বল অবস্থানটা প্রকাশিত হয়েছে। এই চুক্তিটি যদি অবিকল বা প্রায় অবিকৃত অবস্থায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত হয়ে থাকে, তাহলে এই চুক্তি দিয়ে ভারত বরং তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে খর্বিত করেছে। সে আরেক কথা। বাংলাদেশের পক্ষে স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃত, সুদৃঢ় ও সুসংহত করার জন্য এই চুক্তির প্রয়োজন ছিল। বাজারে প্রচারণা ছিল, ভারত পাকিস্তানের অঙ্গচ্ছেদ করে পূর্ব বাংলাকে করায়ত্তের পাকাপাকি ব্যবস্থা করছে। জনমত থেকে ভয় ও বিভ্রান্তি দূর করতে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জন্য একটি লিখিত অঙ্গীকার প্রয়োজন ছিল। চুক্তিটিতে বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম ও সমমর্যাদার চুক্তিকারী পক্ষ হিসেবে উল্লেখ করে বরং সে অঙ্গীকারকে স্পষ্ট করা হয়েছে। আমাদের পক্ষে চুক্তিটির মনস্তাত্ত্বিক আরেকটি দিক ছিল; একবার পাকিস্তানের সেনা শাসক আইয়ুব খান কাশ্মীরের বদলে পূর্ব পাকিস্তানকে ভারতের কাছে ছেড়ে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। আমাদের নেতাদের মনে ভয় ছিল, যুদ্ধের ডামাঢোলের মধ্যে পাকিস্তান হয়তো ১৯৭১ সালে সে অভিপ্রায় কার্যকর করে ফেলবে। আমাদের হয়তো আরো মতলব ছিল, আর মতলব ছাড়া যেখানে কোনো কাজ হয় না, সেখানে আন্তর্জাতিক কোনো চুক্তির পেছনে নিশ্চয়ই বলিষ্ঠ যুক্তি ও মতলব ছিলই। আন্তর্জাতিক বা জাতীয় পর্যায়ে ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী ও সহযোগিতার চুক্তির কতটা সমালোচনা হয়েছিল বা তাকে কেউ গোলামি চুক্তি বলেছিল কি না, তা আমার জানা নেই। তাহলে এদেশে কেউ কেউ তার অনুরূপ চুক্তিকে গোলামি চুক্তি বলছি কেনো?
পূর্বেই উল্লেখ করেছি, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ও সহযোগিতার চুক্তির প্রেক্ষাপট ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। ভারত সোভিয়েতের সঙ্গে এই চুক্তি করেছিল একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে বাংলাদেশকে নৈতিক ও বৈষয়িক সাহায্য দানের জন্য। এই চুক্তি না হলে ভেটোর আঘাতে কিংবা চীন-মার্কিন-পাকিস্তানের যৌথ আঘাতে পর্যুদস্ত ভারত বাংলাদেশকে সাহায্য দূরে থাক, ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থান গ্রহণ করতে বাধ্য হতো। বন্ধু খুঁজতে ও সহযোগিতা পেতে যে চুক্তি সেদিন হয়েছিল বা যে চুক্তি পরবর্তীকালে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পাদিত হলো, তাকে গোলামি চুক্তি বলে আখ্যায়িত করলে নিশ্চয় ভারত ভাববে ‘যার ঘরে চুরি করি সে বলে চোর, যার তরে চুরি করি সে বলে তস্কর।’ এই অনুভূতিই হয়তো ইন্দিরা প্রতিপক্ষকে বলতে বাধ্য করেছিল যে, ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালে একটির বদলে দুটি পাকিস্তান সৃষ্টি করেছে, একটি ভারতের পশ্চিমে আর একটি ভারতের পূর্বে। পাকিস্তান বলতে ছিল; খোদ বাংলাদেশ থেকে চুক্তিটিকে গোলামি চুক্তি বললে ভারতের দুঃখ পাওয়ারই কথা। বাংলাদেশে চুক্তিটিকে যারা গোলামি চুক্তি প্রথম বলতে শুরু করে, তারা কমিউনিস্ট। আঁতকে উঠলেও বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশে সে ধরনের কমিউনিস্ট আছে যারা সাম্রাজ্যবাদ, নব্য সাম্রাজ্যবাদ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ও স্পষ্ট উচ্চারণ সংবলিত চুক্তিকে গোলামি চুক্তি বলতে শুরু করে। এই চুক্তি সাম্রাজ্যবাদ ও শোষণবাদের বড় মোড়লকে আঘাত দিয়েছে এবং বিভিন্ন সামরিক চুক্তিকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে বলে সাম্রাজ্যবাদের দেশীয় দালালরা চুক্তিটির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর আমলেই সোচ্চার হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের পর থেকে সাম্রাজ্যবাদের পুরোনো মিত্র মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি তার স্বরে কমিউনিস্টদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে চুক্তিটিকে গোলামি চুক্তি বলে আসছিল। তাদের আরেকটি মতলব স্পষ্ট ছিল- এই চুক্তি বলবত থাকলে ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করলে ‘ইসলামী উম্মাহ ও ইসলামী ভ্রাতৃবোধের’ পুরোনো ভেলকিবাজি দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে পাকিস্তানকে সমর্থনের সুযোগ ছিল না। এ কারণে এই চুক্তি পাকিস্তানপন্থি ধর্ম ব্যবসায়ীদের গাত্রদাহের উদ্রেক করেছিল। তারা আরো জেনেছিল যে, ভারতের সঙ্গে মৈত্রীর সম্পর্ক স্থানীয় শিখন্ডী ও ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। এছাড়া আছে আরেক দল লোক, যাদের করে কুলিয়ে খাওয়ার সঙ্গতি নেই। এরা ইস্যুর ব্যবসা করে এবং ইস্যু তুলে সরকারকে বিব্রত করে এবং ইস্যুভিত্তিক মিছিল নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনে যায়। দুষ্ট লোকেরা বলে, তারা পেছনের দরজা দিয়ে হৃষ্টচিত্তে ফিরে আসে। গোলামি চুক্তির ধোঁয়াটি ছিল তাদের একটি স্থায়ী ইস্যু, একটা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ইস্যু। আরেকটি গোষ্ঠী আছে, যারা এই ইস্যুটা দিয়ে এক ধরনের উগ্র ভারত বিরোধিতার জন্ম দিয়েছিল এবং কৌশলে ক্ষমতায় আরোহন করেছিল।
এটা ছিল তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার অন্যতম অস্ত্র। ক্ষমতাপ্রত্যাশীরা চুক্তিটাকে বলেছিল- গোলামি চুক্তি আর ক্ষমতায় গিয়ে তা বাতিল তো দূরের কথা তাকে মৈত্রী ও সহযোগিতার চুক্তিই বলেছিল। নিরপেক্ষ মানুষের দৃষ্টিতে চুক্তিটি মৈত্রী ও সহযোগিতার চুক্তিই ছিল। এই চুক্তিটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রয়োজনেই করা হয়েছিল। একে গোলামি চুক্তি বলা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রতি ছিল ক্ষমাহীন কটাক্ষ। যারা এমন কটাক্ষ করেছিল, তারা বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করেন বলে মনে হয় না। তৎকালে তথ্যপ্রযুক্তি এত উন্নত ও বিস্তৃত ছিল না বলে কিছু মানুষকে সাময়িক বিভ্রান্ত করা সম্ভব হয়েছিল। তবে আজকের তথ্য প্রযুক্তির রমরমা অবস্থায় বিশেষত, সামাজিক মিডিয়ার কারণে আমরা কি চিলে কান নিয়ে গেছে শুনে, চিলের পেছনে দৌড়ে বেড়াব?
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও উপাচার্য ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।