জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসংখ্যবার কক্সবাজার এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৫৮ সালের ১৬ জানুয়ারি আবকাশ যাপনে কক্সবাজারের ইনানী বনবিভাগের রেস্ট হাউসে এসেছিলেন। যেখানে তিনি দুইদিন অবস্থান করেন। বনবিভাগের পরিদর্শন বইয়ে জাতির পিতার স্বাক্ষর তাই প্রমাণ করে। ১৯৭৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জীবনের শেষবার তিনি কক্সবাজার যখন এসেছিলেন, তখনই কক্সবাজারের পর্যটনের সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ শহর রক্ষার জন্যই ঝাউগাছের বনায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়। নানা তথ্য বলছে, বঙ্গবন্ধু অন্তত ১৫ বার তিনি কক্সবাজারে আসনে। কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু বইয়ের লেখক গবেষক কালাম আজাদ জানিয়েছেন, প্রাপ্ত তথ্যউপাত্ত অনুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক জীবনে প্রথম কক্সবাজার সফর করেন ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের নির্বাচনি প্রচারণা কার্যক্রমে। এরপর ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩-৪ জুন, ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড দপ্তর মন্ত্রী, ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে কক্সবাজার আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশে অংশগ্রহণ, জেল জীবনের গ্লানি টানতে কক্সবাজারের বেড়াতে আসা এবং সামরিক শাসনে বিপর্যন্ত আওয়ামী লীগ কর্মীদের রাজনৈতিকভাবে চাঙা এবং নির্বাচন উপলক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জানাতে কক্সবাজারে আসেন ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ নভেম্বর। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে এনডিএফ গঠন ও আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে। ১৯৬৩ সালের ৩ মার্চ কক্সবাজারে এসেছিলেন শেখ মুজিব। ওই সময় তিনি কক্সবাজার শহরস্থ জালাল আহদম চৌধুরী মালিকানাধীন হোটেল কক্সীতে অবস্থান করেন এবং পরদিন পরিবারের সদস্য নিয়ে মহেশখালীতে যান এবং মহেশখালীর তীর্থস্থান পরিদর্শন করে কক্সবাজারে ফেরত আসেন। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ও ২৯ মে সংগঠিত তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, মহেশখালীসহ উপকূলীয় এলাকা বিধ্বস্ত হয়। শেখ মুজিব ২ জুন উপদ্রুত এলাকার ধ্বংসলীলা পরিদর্শনে চট্টগ্রামে আসেন। পতেঙ্গা হালিশহর কুমিড়া, সীতাকুন্ড প্রভৃতি এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি ২ ও ৩ জুন কক্সবাজারের ডুলহাজারা ও অন্যান্য এলাকা পরিদর্শন করেন।
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন উপলক্ষ্যে কমিটি গঠনের জন্য। এরপর ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ এবং ১৫ ডিসেম্বর সংঘটিত প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন তিনি। আসেন ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফার প্রচারণার কার্যক্রমে। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে কক্সবাজারে নাগরিক সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ থেকে ২৭ এপ্রিল ’৭০-এর নির্বাচনি প্রচারণার কাজ চালাতেও আসেন তিনি। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে নির্বাচনি প্রচারণার অংশ এবং কক্সবাজারকে একটি সমৃদ্ধশালী পর্যটন শহর গঠন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন। সবশেষে বাকশাল পদ্ধতি চালুর পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১০ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এসেছিলেন। এই সফরে শেখ মুজিবুর রহমান কক্সবাজারের জন্য অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অনেকটা বাস্তবায়নও করেছেন। তবে যেসব জায়গায় বঙ্গবন্ধু গিয়েছিলেন তার কোথাও দৃশ্যমান স্মৃতিফলক নেই।