ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া

ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খেলোয়াড়ি সত্তার প্রতি সম্মান জানিয়ে জাতির পিতার জন্ম শতবর্ষে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো ‘ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা’ আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করে বলে জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। মেয়র বলেন, প্রথম আয়োজনের সাফল্যের পর ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবারও আয়োজন করি এবং সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত করতে সমর্থ হই। আমাদের ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সম্মানিত সভাপতি মো. মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদসহ কমিটির সব সদস্য এবং আমাদের সব সম্মানিত কাউন্সিলরের ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও উন্মাদনাকে পুঁজি করে ঢাকাবাসীর প্রাণোচ্ছল অংশগ্রহণের ওপর ভর করে এবং গণমাধ্যমের আন্তরিক সহযোগিতার ফসল হিসেবে আমরা দুটি সফল আয়োজন সম্পন্ন করতে পেরেছি। সেজন্য আমি ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সব সম্মানিত সদস্য, কাউন্সিলর, আমার প্রাণপ্রিয় ঢাকাবাসী ও গণমাধ্যমের প্রিয় বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। গণমাধ্যমের বন্ধুগণ, বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী খেলা ‘ফুটবল’ এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ‘ক্রিকেট’ নিয়েই আমরা ২০২১ ও ২০২২ সালে এই ক্রীড়া উৎসবের আয়োজন করেছি। বিগত দুইবারের ন্যায় এবারের আয়োজনেও আমরা করপোরেশনের আওতাধীন ৭৫টি ওয়ার্ডকে সম্পৃক্ত করছি। কিন্তু এবারকার আয়োজনের পরিসর ও ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফুটবল ও ক্রিকেটের পাশাপাশি তৃতীয় ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আমরা ব্যাডমিন্টন খেলাকে সম্পৃক্ত করেছি।

তিনি আরো বলেন, এবারের ক্রীড়া উৎসবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশেনের ৭৫টি ওয়ার্ড হতে ৬৪টি দল ফুটবল খেলায়, ৫১টি দল ক্রিকেট খেলায় এবং ৬৪টি দল ব্যাডমিন্টন খেলায় অংশগ্রহণ করবে। আয়োজনে উত্তেজনার পারদ চড়িয়ে রাখেতে পুরো প্রতিযোগিতাটি ‘নক আউট’ পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হবে। আগামী ০৫ জানুয়ারি কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে তৃতীয় ‘ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০২৩’র খেলা শুরু হবে। আগামী ১৩ জানুয়ারি গোলাপবাগ মাঠে ক্রিকেট খেলার এবং বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের ইনডোর স্ট্যাডিয়ামে ব্যাডমিন্টন খেলার শুরু হবে। এবার মোট ৯টি মাঠে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার সকল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের ইনডোর স্টেডিয়ামে ও পাঁটি ওয়ার্ডের উন্মুক্ত স্থানে ব্যাডমিন্টন খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। ক্রিকেট এবং ফুটবল, উভয় ক্ষেত্রেই বিজয়ী দলের জন্যা ৭ লাখ টাকা এবং বিজিত (রানার-আপ) দলের জন্য ৫ লাখ টাকা করে অর্থ পুরস্কার দেয়া হবে। একইসাথে ব্যাডমিন্টনে বিজয়ী দলকে ৩ লাখ টাকা এবং রানার-আপ দলকে ২ লাখ টাকা পুরস্কার প্রদান করা হবে। গতবারের ন্যায় এবারও টেপ টেনিস বলের বদলে ‘কাঠের বলে’ ক্রিকেট ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বরাবরের মতোই আতশবাজির বর্ণিল প্রদর্শনী থাকছে। বর্ণিল আলোকচ্ছটার আবহে মন মাতাতে থাকছে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ফাতেমা তোজ জোহরা, ঐশী ও ডি রকস্টার খ্যাত গায়ক শুভ’র মনোমুগ্ধকর সঙ্গীত পরিবেশনা। একসময় ঢাকার তরুণ-যুবকরা শহরের মাঠে-ময়দানে, অলিগলিতে খেলাধুলা করে এদেশের ফুটবল-ক্রিকেট খেলাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে সেই চিত্র অনেকটাই ফ্যাকাসে। এর অন্যতম কারণ, ঢাকা শহরে খেলাধুলা করার জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠের অভাব। আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন, প্রতিটি ওয়ার্ডেই ন্যূনতম একটি করে খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠায় আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি এবং আমাদের সেই উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। আমরা যেখানেই প্রয়োজনীয় জমির হদিস পাচ্ছি সেখানেই খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছি। আমরা খেলাধুলায় ঢাকার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্নক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিগত ২ বছরে আমরা স্বার্থান্বেষী মহলের বহুমাত্রিক পাঁয়তারায় দীর্ঘদিন ধরে দখলে ৪টি জমি উদ্ধার করেছি। বিগত ২ বছরে আমরা ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে লক্ষ্মীবাজার খেলার মাঠ, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে আলমগঞ্জ খেলার মাঠ, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বকশীবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে টিকাটুলি খেলার মাঠের উন্নয়ন করেছি এবং ইতোমধ্যে সেসব মাঠ সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে আমরা একটি জায়গা উদ্ধার করেছি এবং সেখানে চন্দনকোঠা খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠায় লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত মেগা প্রকল্পের আওতায় আমরা ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে বাংলাদেশ মাঠ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে মেয়র সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠের উন্নয়ন করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বাসাবো সবুজ বলয় (বাসাবো বালুর মাঠ) ও ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে ধুপখোলা খেলার মাঠের উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে এবং ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে মেন্দিপুর খেলার মাঠ এবং ২ নম্বর ওয়ার্ডে বাসাবো ভূঁইয়ার মাঠের উন্নয়নে আমাদের কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে আপনাদের অবগত করতে চাই যে, ইতোমধ্যে ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের সুফল পেতে শুরু করেছি। বিগত দুটি আয়োজনে অংশ নেয়া খেলোয়াড়দের মধ্যে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের খেলোয়াড় আকাশ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের খেলোয়াড় রাজন অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলে এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ফরচুন বরিশালে অলরাউন্ডার হিসেবে খেলবে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের খেলোয়াড় কাজী অনিক। ফলে ‘ঢাকার ছেলেমেয়েদের এখন আর ফুটবল ও ক্রিকেটের জাতীয় দলে পাওয়া যায় না’- এমন আক্ষেপ ঘোচানোর যে মহতী উদ্যোগ আমরা শুরু করেছিলাম, সে যাত্রার পালে হাওয়া লেগেছে বলা যায়। আমরা চায়, ঢাকার আগামী প্রজন্ম আবারও এদেশের ফুটবল-ক্রিকেট-ব্যাডমিন্টন খেলায় নেতৃত্ব দিক। এবারের আয়োজনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে), বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন (বিবিএফ) সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাফফে রেফারি, বিসিবি আম্পায়ার ও বিবিএফ জাজ দিয়ে আমাদের আয়োজনকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। এই প্রতিযোগিতায় মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড, ওরিয়ন গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, লাবিব গ্রুপ ইন্ডাস্ট্রিজসহ যারা আমাদের আয়োজনকে পৃষ্টপোষকতা করছেন, আমি সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। খেলাধুলা শুধু চিত্ত-বিনোদনের মাধ্যমই নয়, বরং, তা নেতৃত্ব-শৃঙ্খলা-ধৈর্য-একতা-নৈতিকতা সমুন্নত রাখারও অন্যতম হাতিয়ার। শুধু তাই নয়, শিশু-কিশোরসহ সব বয়সি মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করার প্রমাণিত অদ্বিতীয় মাধ্যমও খেলাধুলা। নিয়মিত খেলাধুলা তরুণ ও যুব সম্প্রদায়কে নানা ধরনের ক্ষতিকর মাদকের হাতছানি হতে শুধু দূরেই রাখে না, অধিকন্তু তাদের মাঝ হতে জঙ্গিবাদী ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব দূর করে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে শেখায়। মেয়র বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি রূপকল্প-২০৪১ ঘোষণা করেছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে যে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন তিনি আমাদের দেখিয়ে চলেছেন, সেই স্বপ্নের লালন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ঢাকা মহানগরীকে উন্নত বাংলাদেশের একটি উন্নত রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে চলেছি। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের অন্যতম উপাদান শারীরিক ও মানসিক শক্তিতে ভরপুর উদ্যমী তারুণ্য। আর, স্ফুরিত তারুণ্যের বিকাশ ও উন্নয়নে খেলাধুলার বিকল্প নেই। তাই আমরা বিশ্বাস করি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এই উদ্যোগের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া ফুটবল ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ ঘটবে, সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গন, জোয়ার আসবে বাংলাদেশের ব্যাডমিন্টন খেলায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বসবাসকারী মেধাবী ও সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করতে এবং এদেশের জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিতে ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনন্য ভূমিকা পালন করবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী যে, বরাবরের মতোই আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতায় আরেকটি সফল ক্রীড়া উৎসব ঢাকাবাসীকে উপহার দিতে পারবো।’ গতকালে সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, করপোরেশনের ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদ, বাফুফে, বিসিবি ও বিবিএফের প্রতিনিধিরা, করপোরেশনের কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত