কোটি টাকা খরচ করে দল কী পাচ্ছে
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্পোর্টস রিপোর্টার
লভ্যাংশ ভাগাভাগিসহ আর্থিক কাঠামোয় পরিবর্তন না আনলে দলগুলোর আগ্রহ থাকবে না- বলছেন বিসিবির এই পরিচালক। প্রসঙ্গটি পুরোনো। আলোচনাটিও নতুন কিছু নয়। তবে সবসময়ই প্রাসঙ্গিক। এবার তা উঠে এলো খালেদ মাহমুদের কণ্ঠে। যিনি বিপিএলের একটি দলের কোচ যেমন, তেমনি বিসিবির একজন পরিচালকও। তার মতে, লভ্যাংশ ভাগাভাগিসহ বিপিএলের আর্থিক কাঠামো আইপিএলের মতোই কিছু একটা করতে হবে। নইলে বছরের পর বছর আর্থিক ক্ষতি সয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর আগ্রহ টিকে থাকবে না।
বিপিএলের নবম আসর শুরু হতে যাচ্ছে আগামী শুক্রবার থেকে। ২০১২ সালে শুরু হওয়া টুর্নামেন্টে সুনির্দিষ্টি কোনো আর্থিক কাঠামো এখনও পর্যন্ত দাঁড় করাতে পারেনি বিসিবি। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর আয়ের কোনো নিশ্চিত বা সম্ভাব্য পথ তৈরি করা হয়নি। আইপিএলসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে লভ্যাংশের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পেয়ে থাকে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। বাংলাদেশে তা কখনোই দেয়া হয়নি। এই প্রসঙ্গ উঠলেই বিসিবি তা উড়িয়ে দিয়ে আসছে বরাবরই। টুর্নামেন্টের প্রাইজমানিও খুব আকর্ষণীয় কিছু থাকে না। সব মিলিয়ে দলগুলোর খরচের খাত প্রচুর থাকলেও আয়ের সুযোগ সামান্য। এতগুলো বছরে কোনো পেশাদারীত্বই এখনও পর্যন্ত দাঁড় করানো যায়নি এই টুর্নামেন্টে। ৯ আসরের প্রতিটিতেই ছিল, এমন কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই নেই বিপিএলে। দেশের অনেক বড় প্রতিষ্ঠান আগ্রহ নিয়ে আসার পর ক্রমে সরে গেছে এখান থেকে। ধারাবাহিকতা ও পেশাদারিত্ব না থাকায় একসময় দারুণ সম্ভাবনা থাকলেও এখন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের লড়াইয়ে বিপিএল পড়ে গেছে অনেক পেছনে। আইপিএল তো বটেই, বিগ ব্যাশ, পিএসএল, সিপিএল এখন যোজন যোজন এগিয়ে বিপিএলের চেয়ে। এমনকি এই বছর থেকে শুরু হতে যাওয়া দুবাইয়ের আইএল টি-টোয়েন্টি, দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ টি-টোয়েন্টির সঙ্গেও তুলনায় আসার মতো জায়গায় নেই বিপিএল। সেসব বাস্তবতাই ফুটে উঠল খালেদ মাহমুদের কণ্ঠে। এবারের বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের কোচের দায়িত্ব পালন করবেন এই বিসিবি পরিচালক। ‘একসময় সত্যি বলতে, আইপিএলের পর আমরা ছিলাম। তবে সবাই হয়তো ছাড়িয়ে গেছে আমাদের। অনেকেই আরও ভালো করছে। এটাও সত্য কথা যে, আমাদের ফ্রাঞ্চাইজি যারা আসছে এবার, ড্রাফট থেকে খুব ভালো খেলোয়াড় আমরা পাইনি, যেহেতু দুবাই ও দক্ষিণ আফ্রিকা টুর্নামেন্ট করছে। যারা ওখানে খেলছে তারা কিন্তু আইপিএলভিত্তিক দলই। তাদের জন্য মুখ্য ভূমিকা থাকে আইপিএল খেলার। খেলোয়াড়রাও দিনশেষে চায়- ওই সব টুর্নামেন্ট খেলে যেন আইপিএলের নজর কাড়তে পারে।‘
‘আমার মনে হয়, আমরা ভারতের মার্কেটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছি না। আমাদের ফ্রাঞ্চাইজি মালিকারাও যে খুব বড় বাজেটের দল করছেন, তা নয়। ৩ থেকে ৪ বছর আগেও, তিন-চারটি টিম বড় বাজেটের দল থাকত। সেটা এখনও কমে গেছে। সামনে তাকিয়ে (টিকতে হলে) টুর্নামেন্টে স্থিতিশীলতা আনতে হবে। ফ্রাঞ্চাইজির স্থিতিশীলতা আনতে হবে, যেন লম্বা সময়ের জন্য আসে।’ অনেক দিনের অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর এবার থেকে অবশেষে ৩ বছরের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি দেয়া হয়েছে। তবে আগেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। এছাড়া, ৩ বছর সময়ও আসলে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বাজারে তেমন কেনো সময়ই নয়। তাদের জন্য আয়ের কোনো সুযোগও রাখা হয়নি। খালেদ মাহমুদের মতে, আয়ের খাত তৈরি করা না হলে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই টিকবে না। ‘এখানে লভ্যাংশ ভাগাভাগির ব্যাপারও আসে। ব্যবসায়ীরা এখানে এসে ১০ তেকে ১৫ কোটি টাকা খরচ করছে, বিনিময়ে কী নিয়ে যাচ্ছে? হয়তো কিছু স্পন্সর পাচ্ছে। কিন্তু দেশের বর্তমান অবস্থায় স্পন্সর থেকে যে বিশাল অঙ্কের টাকা তুলতে পারছে, তাও নয়। একটা দল (ফ্র্যাঞ্চাইজি) আসে, এক-দুই-তিন বছর থাকে। তখন ৩ কোটি টাকা লস করে। তিন বছর পর এই লসটা কিন্তু করবে না কেউ!‘ ‘কিন্তু যদি এমন হয়, আপনি ৮ বছরের জন্য দল নিলেন, প্রথম ৩ বছর লস করবেন, তারপর একটা ব্রেক ইভেনে যাবেন, তারপর লাভ করা শুরু করবেন। ওরকম না হলে কিন্তু সবাই আসতে চাইবে না। দিনশেষে, তারা সবাই ব্যবসায়ী। তারা ব্যবসাটাই বুঝবে।’ দেশের সাবেক এই অধিনায়কের মতে, আইপিএলের মতো একটা আর্থিক কাঠামো গড়তে হবে, যেখানে বিসিবি ও ফ্র্যাঞ্চাইজি, উভয়পক্ষ লাভবান হয়।
‘আপনি যদি আইপিএলের ফরম্যাটে যান আমাদেরকে কিছুটা হলেও ওভাবে চিন্তা করতে হবে। যেন ফ্রাঞ্চাইজি ও বিসিবি ‘উইন উইন’ পরিস্থিতিতে থাকে। বিসিবি এখান থেকে সামান্য টাকা আয় করে। সেটা দলগুলোর জন্যও হতে হবে। ‘উইন উইন’ পরিস্থিতিটা কীভাবে আনা যায়, ‘বিজনেস মডিউল’ কীভাবে করা যায়, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সেভাবেই চিন্তা করতে হবে।’ আর্থিক ভিত যদি শক্ত হয়, ফ্র্যাঞ্চাইজিরা যদি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সুযোগ পায়, তখনই বিপিএল থেকে দেশের ক্রিকেটের সামগ্রিক উন্নতি হবে বলে বিশ্বাস খালেদ মাহমুদের। ‘আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজিগুলো যেটা করে, ওরা সারা বছর প্রতিভা অন্বেষণ করে। সারা বছর কাজ করে। এক-দুই মাস আইপিএল খেলেই শেষ, তেমনটা নয়। সারা বছর কিছু না কিছু করে। এরকম যখন বিপিএল ফ্রাঞ্চাইজিরা করবে, তখন বিসিবির কাজটাও সহজ হয়ে যাবে। বিসিবির পাশাপাশি তারাও যদি কাজ করে, প্রতিভা খুঁজে বের করে, তাদের যদি একাডেমি থাকে, তাহলে দেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো। তাহলে পাইপলাইন থেকে আমরা আরও ভালো কিছু পাব।’
২০০ টাকায় বিপিএল
বিপিএলের সাধারণ গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতে হলে প্রতিদিন টিকিট পিছু গুনতে হবে ২০০ টাকা করে। এক টিকিটেই দেখা যাবে দিনের দুটি ম্যাচ। বিপিএলে পূর্ব দিকের গ্যালারির প্রবেশ মূল্য ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের টিকিটের মূল্য সবচেয়ে বেশি- ১ হাজার ৫০০ টাকা। ভিআইপি স্ট্যান্ড ১ হাজার টাকা, ক্লাব হাউজ ৫০০ টাকা, স্টেডিয়ামের উত্তর ও দক্ষিণ স্ট্যান্ড ৩০০ টাকা, পশ্চিম স্ট্যান্ডের টিকিট ২০০ টাকায় পাওয়া যাবে। আজ থেকে মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়াম ও শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ১ নম্বর গেটের বুথে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি হবে।