ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রসঙ্গ বিপিএল

বিসিবিকে চ্যালেঞ্জ দিলেন সাকিব

বিসিবিকে চ্যালেঞ্জ দিলেন সাকিব

দায়িত্ব পেলে এখনকার সবকিছু বদলে এক-দুই মাসের মধ্যে সব ঠিক করে দেবেন বলেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ‘বিপিএলের স্ট্যান্ডার্ড কোথায় আসলে?’ প্রশ্নটি শুনে মাথা নিচু করে হাসলেন সাকিব আল হাসান। এরপর উত্তর দিতে গিয়ে হেসে নিলেন আরেক দফায়। হাসতে হাসতেই বলেন, ‘আমার আইডিয়া নাই স্ট্যান্ডার্ড কোথায়।’ পরের কয়েক মিনিটে চলতে থাকল তার কথার ঝড়। যেগুলোর সারমর্ম, বিপিএল নিয়ে ভালো কিছু করার সদিচ্ছাই নেই বিসিবির। এটিকে ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করাতে তারা ব্যর্থ। দায়িত্ব পেলে এক-দুই মাসের মধ্যেই সব ঠিক করে দিতে পারবেন বলে জোর গলায় দাবি করলেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।

বিপিএল শুরুর পর ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ব ক্রিকেটে শক্ত কোনো অবস্থান তৈরি করতে পারেনি এই টুর্নামেন্ট। পেশাদারীত্বের ঘাটতি এখানে প্রবল, বছরের পর বছর অগোছাল আয়োজন ও অসংখ্য অব্যস্থাপনা এই টুর্নামেন্টের সঙ্গী। এবারও টুর্নামেন্ট শুরুর একদিন আগেও ঘোষণা করা হয়নি টাইটেল স্পন্সরের নাম। টুর্নামেন্টের শেষভাগের আগে ডিআরএস থাকবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে আগেই। সব মিলিয়ে জোড়াতালি দিয়ে আয়োজনের ছাপ চারপাশে। বিসিবি পরিচালক ও বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের কোচ খালেদ মাহমুদ মঙ্গলবার স্বীকার করেন, বিপিএলের পরে শুরু করেও অনেক লিগ এগিয়ে গেছে আরও অনেকটা। সাকিব এসব নিয়েই কথা বললেন ক্রিকেটের বাইরের একটি আয়োজনে। গালফ অয়েলের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে একদিনের জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহীর প্রতীকী দায়িত্ব পালন করছেন তিনি গতকাল বুধবার। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে প্রাসঙ্গিক নানা প্রশ্নের সঙ্গে উঠে এলো শুক্রবার শুরু হতে যাওয়া বিপিএলের প্রসঙ্গ।

এত বছরেও কেন বিপিএল উল্লেখযোগ্য কোনো জায়গায় যেতে পারেনি? এই প্রশ্ন শুনে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন সাকিব। উত্তরও মিশে থাকল তার কথায়, ‘পারেনি নাকি চায়নি? জানি না বলাটা কঠিন। চাইলে না পারার কোনো কারণ আমি দেখি না, বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা। আমার ধারণা, আমরা সৎ মনে কখনো চাইনি, ওরকম কিছু করতে। এ কারণেই হয়নি এখনো পর্যন্ত।’ অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দেশে, যেখানে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা তুমূল নয়, যেখানে ক্রিকেটের বাজার বাংলাদেশের তুলনায় অনেক ছোট, সেই দেশগুলোতেও তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ এখন আলাদা পরিচিতি গড়তে পেরেছে। বাংলাদেশে ক্রিকেটের এত জনপ্রিয়তার পরও বিপিএলকে আকর্ষণীয় করে তুলতে না পারার পেছনে বিসিবির বিপণন সক্ষমতার দুর্বলতা দেখেন সাকিব, ‘বিপিএলের বাজার নেই, কারণ বাজার তৈরি করতে পারিনি। যদি তৈরি করতে পারতাম, ভ্যালু অ্যাড করতে পারতাম, অবশ্যই এই বাজার অনেক বড় হওয়ার কথা ছিল। আপনি গ্রামেও এমন কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেখবেন না, যেখানে ক্রিকেট খেলাটা হচ্ছে না। একদম অজোপাড়াগাঁ চলে যান, সেখানেও মানুষ একটা ব্যাট, কোনো রকমে একটা বল, বা বল না পেলে অন্য কিছু দিয়ে বল বানিয়ে খেলছে ক্রিকেট। এমন তো নয়, এটার জনপ্রিয়তা নেই। ১৬-২০ কোটি মানুষের একটি দেশে যেখানে এটি এত পছন্দের খেলা, সেখানে বাজার থাকবে না, এটা খুবই দুঃখজনক। আমি অন্তত বিশ্বাস করি। সেই জায়গা থেকে আমি মনে করি, মার্কেটিংয়ের জায়গায় এটা বড় একটা ব্যর্থতা, যে কারণে আমরা বড় বাজার তৈরি করতে পারিনি।’

বিপিএলকে শক্ত ভিতে দাঁড় করানোর সদিচ্ছা দেশের ক্রিকেট কর্তাদের মধ্যে দেখেন না সাকিব। তার মতে, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের আয়োজনও তুলনামূলকভাবে আরও গোছানো ও পরিকল্পিত হয়। ‘সদিচ্ছা থাকলে কোনো কিছু থেমে থাকার কিছু আমি দেখি না। সদিচ্ছা থাকলে আমি তো কোনো কারণই দেখি না কেন ডিআরএস থাকবে না, তিন মাস আগে ড্রাফট কিংবা নিলাম হবে না, দলগুলো দুই মাস আগে থেকে ঠিক হবে না এবং ক্রিকেটারদের পাওয়া যাবে। এখন একজন ক্রিকেটার একদিন আসবে, দুই দিনে চলে যাবে, কে কখন আসবে-যাবে, কেউ জানে না। জার্সি পায় না এখনো ক্রিকেটাররা, নিউজে দেখলাম। মানে, যা-তা অবস্থা। এর চেয়ে আমাদের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগও আরও ভালোভাবে হয়। কারণ দলটা আগে থেকে গোছাতে পারে, আরও আগে থেকে জানে যে দলটা কী হতে পারে, সেভাবে কাজও হতে পারে। আমার ধারণা, যদি পরের প্রিমিয়ার লিগের কথা বলেন সবাই জানে কার কোন দল। বিপিএলে তো কোনো কিছুর ঠিক-ঠিকানা বুঝতে পারি না। ম্যাচ শুরু হওয়ার পর বিপিএল শুরু হয়।’

আয়োজনগত অদক্ষতা ও টিভি সম্প্রচারের নিম্নমানের কারণে বিপিএলে মাঠের ক্রিকেটেও কোনো মান দাঁড়ায়নি বলে মনে করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা এই অলরাউন্ডার, ‘আমার ধারণা, খুব বেশি দেশ বিপিএল দেখে না। যখন টিভিতে দেখায়, তখন হয়তো বলে যে এত এত দেশে টেলিকাস্ট হচ্ছে। কিন্তু আসলে কেউ সেভাবে ফোকাস করে না। অন্য দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের কোনো ক্রিকেটার, যে জাতীয় দলে খেলেনি আইপিএলকে হিসাবের বাইরে রাখলাম, বিগ ব্যাশ বলেন, এমনকি পিএসএল বলেন, সিপিএল, যখন এখানে ভালো করে, তারা দেখেন, তাদের জাতীয় দলে সুযোগ দিয়ে দেয়। বিপিএলে তো বাইরের দেশে কেউ দেখে না। এখানে যে প্যারামিটার সেট করবে, ‘বিপিএলের খেলাটা এরকম, প্রতিদ্বিন্দ্বতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট, এখানে যারা ভালো খেলছে, তাদের মধ্যে কোয়ালিটি আছে’, এরকম কিছু চিন্তাই করতে পারে না কেউ। তো, হতাশাজনক যে আমরা এই পর্যায়ে রয়ে গেছি। খুবই হতাশাজনক।’ আইসিসি টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ অলরাউন্ডার আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বললেন, তাকে বিপিএলের দায়িত্ব দেওয়া হলে সবকিছু ঠিকঠাক করতে দুই মাসও সময় লাগবে না, ‘আমাকে যদি বিপিএলের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব দেয়া হয়, বেশি দিন লাগবে না। খুব বেশি হলে সর্বোচ্চ এক থেকে দুই মাস লাগবে সবকিছু ঠিক করতে। দুই মাসও লাগার কথা নয়। দুই মাস অনেক দূরের কথা বলছি। নায়ক সিনেমা দেখছেন না? একদিনেও অনেক কিছু করা সম্ভব। যে করতে পারে, সে পারে সবসময়। এই সবকিছু বাদ দিয়ে নতুন করে আবার ড্রাফট হবে, অকশন হবে, ফ্রি সময়ে বিপিএল হবে, আধুনিক প্রযুক্তি থাকবে, ব্রডকাস্ট ভালো থাকবে, হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভেন্যু থাকবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত