শুরু থেকে ডিআরএস সিস্টেম না থাকায় প্রকাশ্যে বিপিএল ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করেছে খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে বিপিএল কর্তৃপক্ষের কঠোর সমালোচনা করেছেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, ‘বিপিএলের ক্ষতি হয়েছে এবং এসব সব সমস্যা সমাধানে ম্যানেজমেন্টের ইচ্ছার অভাব রয়েছে। শুরু থেকে ডিআরএস না থাকার জন্য বোর্ডের অনিচ্ছার কথা জানান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। এক যুগেও মানোন্নয়ন না হওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুর্জা। এসব সমস্যার মধ্যেই সিলেট স্ট্রাইকার্স-চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ম্যাচ দিয়ে আজ শুরু হবে বিপিএল। মিরপুর স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে দুপুর আড়াইটায়। দ্বিতীয় ম্যাচে সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় লড়বে রংপুর রাইডার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
বল উইকেটে পড়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে বিপিএলের মান, অনিয়ম, আকর্ষণ ও জৌলুস নিয়ে কথা বলে হইচই ফেলে দেয়া সাকিব আরও একবার আলোচনায়। বিপিএলের ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে যথারীতি অনুপস্থিত বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। নিজেই যখন মার্কেটিং ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলে পরদিনই আইকনিক ছবি, যেটা দিয়ে মার্কেটিং করা সম্ভব, সেখানে বরাবরের মতো নিজেই অনুপস্থিত! তবে মিরপুর স্টেডিয়ামে গতকাল বিকালে বিপিএলে ট্রফি উন্মোচন পর্বে ফরচুন বরিশাল অধিনায়ক সাকিব ছাড়া বাকি ৬ অধিনায়কই উপস্থিত ছিলেন। সাকিবের পরিবর্তে ট্রফি হাতে ক্যামেরার সামনে পোজ দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। সিলেট স্ট্রাইকার্সের মাশরাফি, রংপুর রাইডার্সের নুরুল হাসান সোহান, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ইমরুল কায়েস, ঢাকা ডমিনেটর্সের অধিনায়ক নাসির হোসেন, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের শুভাগত হোম ও খুলনা টাইগার্সের ইয়াসির আলী রাব্বি অধিনায়ক হিসেবে বিপিএল ট্রফি হাতে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। তামিম ইকবাল দলে থাকতে ইয়াসির আলী রাব্বি কেন অধিনায়কদের ফটোশুটে? তবে কী তামিম অধিনায়ক নন? সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেলো, ‘তামিম নন, ইয়াসির আলী রাব্বিই নেতৃত্ব দেবেন খুলনার। চট্টগ্রামের এ তরুণ মিডল অর্ডারের নেতৃত্বেই বিপিএলে খেলবে এবার খুলনা টাইগার্স।’
সাকিব কেন ছিলেন না অধিনায়কদের মিলন মেলায়? তিনি নিজের ক্রিকেট একাডেমি মাস্কোয় গিয়েছিলেন। প্রথম দিনের মতো অনুশীলন করেছেন দলের সাথে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিপিএলের ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে অধিনায়কদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল না। একাধিক দলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিপিএল কর্তৃপক্ষ সাত দলের কাছে যে চিঠি দিয়েছিল, তাতে অধিনায়কদেরই শুধু থাকতে বলা হয়নি। বিপিএল কর্তৃপক্ষ সাত দলকে জানায়- অধিনায়ক বা একজন সিনিয়র ক্রিকেটারকে ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রেরণের জন্য।
বিপিএলের সোনালি ট্রফিকে মাঝে রেখে প্রত্যেকেই হাসিমুখে পোজ দিয়েছেন। সঙ্গে বিপিএলকে ঘিরে নিজেদের প্রত্যাশার কথা শুনিয়েছেন।
ইমরুল কায়েস, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ‘কুমিল্লা সবসময় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল করে। এ বছরও একই পরিকল্পনা। চেষ্টা করবো এ বছরও শিরোপা ধরে রাখার জন্য। মাঠে ভালো খেলতে হবে। কাগজে কলমে যত শক্তিশালীই হন না কেন মাঠে খেলতে না পারলে লাভ হবে না।’
মেহেদী হাসান মিরাজ , ফরচুন বরিশাল : ‘আমি তো একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। দুইবার ফাইনাল খেলেছি। অবশ্যই শিরোপা জেতার লক্ষ্য থাকবে। চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে তো অবশ্যই ভালো লাগবে।’
শুভাগত হোম, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ‘সবার যে লক্ষ্য আমারও সেই লক্ষ্য। আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই মাঠে নামব। আমাদের স্ট্রেন্থ হলো টিম স্পিরিট। দল ভারসাম্যপূর্ণ। সেই হিসেবে আমরা আশা করতেই পারি।’
নুরুল হাসান সোহান, রংপুর রাইডার্স : অবশ্যই আশা থাকবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। ট্রফি এখনও ধরিনি। যদি চ্যাম্পিয়ন হই তাহলেই ধরব। আমাদের দল তরুণ, প্রাণশক্তিতে ভরপুর। দলে অনেক অলরাউন্ডার আছে। মাঠে একশ ভাগ দিলে ইনশাআল্লাহ ভালো কিছু হবে। অনুশীলন তো আমাদের জন্য ভালো সুযোগ। সময়সীমা ছিল না, ইচ্ছামতো নিজেদের মাঠে অনুশীলন করতে পেরেছি। কিন্তু ম্যাচ মিরপুরে। এখানে নিজেদের শতভাগ দিতে হবে।
নাসির হোসেন, ঢাকা ডমিনেটর্স : সবার মতো আমরাও চাইব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। আমরা আশাবাদী, খুব ভালো কিছু করবো। এর আগেও আমি অধিনায়কত্ব করেছি। প্রত্যেক টুর্নামেন্টেই সবার চ্যালেঞ্জ থাকে। এটা আমাদের জন্য একটা সুযোগ। এখানে ভালো করলে সামনের ক্যারিয়ারেও ভালো হবে। এটাতেই মনোযোগ থাকবে, সাথে দল যেন ভালো ফল করে।
ইয়াসির আলী, খুলনা টাইগার্স : নার্ভাস নই, এক্সাইটেড আসলে। জীবনের নতুন একটা জিনিস, তাও বিপিএলের মতো আসরে। চেষ্টা করবো দলের জন্য ভালো কিছু করার। তামিম ভাইয়ের সাথে দল গঠনের পর থেকেই কথা হচ্ছে। অধিনায়ক হওয়ার পর তেমন কথা হয়নি। শুধু বলেছেন- ‘আমাকে যখন তোর প্রয়োজন হবে আমি পাশে আছি। তোর কোনো কিছু লাগলে আমাকে বলিস। অবশ্যই হেল্প করবো।’
মাশরাফি বিন মুর্তজা, সিলেট স্ট্রাইকার্স : ‘শুরু হওয়ার পর বোঝা যাবে (বিপিএলের উত্তাপ)। তবে প্রত্যেকবারই খেলা শুরু হওয়ার পর তো খেলাটা ভালোই হয়। প্রতিযোগিতা থাকে। সবাই সবার দল নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আশা করি, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলকই হবে। ফ্র্যাঞ্চাইজি চায় ভালো কিছু করতে। সব দলই চায় চ্যাম্পিয়ন হতে। আমরাও অবশ্য তার ব্যতিক্রম কিছু না। এটা তো আর বলে কয়ে হবে না। মাঠে ভালো করতে হবে। ওয়ান বাই ওয়ান ম্যাচ...। কাল যদি ভালো করতে পারি, এটা তো মোমেন্টামের খেলা। শেষের দিকে না তাকিয়ে আমরা শুরু থেকে ভালো করার চেষ্টা করবো।
গত দুই আসর ধরে বিপিএলে ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) নিয়ে বিসিবি নানা অজুহাত দেখাচ্ছে। এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ব্যস্ত সূচির অজুহাত দিলো বিসিবি। গতকাল বিপিএলের টাইটেল স্পন্সর হিসেবে ইম্পাহানির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বিপিএলের নানা অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেন প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন। অন্য সব আসরের চেয়ে বিপিএল আয়োজনের অনেক সময় পেয়েছিল বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্রডকাস্টিং পার্টনার, টাইটেল স্পন্সর জোগাড় করতে পারেনি। নানা চেষ্টার পর ইস্পাহানিকে টাইটেল স্পন্সর ঘোষণা করেছে। বিপিএল সম্প্রচার করবে নাগরিক টেলিভিশন। ব্রডকাস্টিং পার্টনার ঠিক সময়ে ডিআরএস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি বলেই কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীর কথা থেকেই জানা গেছে, ‘দুই-তিন মাস আগেই আমাদের প্রোডাকশন টিম বিষয়টি জানিয়েছে।