ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মিরপুরের ‘অচেনা’ উইকেটেরই প্রশংসা

মিরপুরের ‘অচেনা’ উইকেটেরই প্রশংসা

গেল বছর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের পর মিরপুরের উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, ‘এমন উইকেটে ১০ থেকে ১৫টা ম্যাচ খেললে ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে।’ আর এবার বিপিএলে সেই উইকেটেরই প্রশংসায় সাকিব, সিলেট অধিনায়ক মাশরাফিও করলেন প্রশংসা। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। আন্তর্জাতিক থেকে শুরু করে ঘরোয়া ক্রিকেট, সবচেয়ে বেশি ম্যাচ এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ম্যাচ হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন, নিরস। মন্থর উইকেটে ব্যাটসম্যানরা রান তুলতে সংগ্রাম করেন, বোলারদের আসল সামর্থ্য বোঝা সম্ভব হয় না। যে কারণে বাংলাদেশেরই অনেক ক্রিকেটারকে আগে বলতে দেখা গেছে, ‘এখানকার উইকেট আমরাও বুঝি না।’

অচেনা উইকেটেই এবার ভিন্ন লড়াই দেখা যাচ্ছে, এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দারুণ কিছু ম্যাচ হয়েছে মিরপুরের উইকেটে। কিছু ম্যাচে দেখা যাচ্ছে রান বন্যাও। মিরপুর স্টেডিয়ামে এমন উইকেট দেখে অনেকের মতো ক্রিকেটাররাও অবাক। এটা তাদের কাছে রীতিমতো অপ্রত্যাশিত। এমন উইকেট পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা, করলেন প্রশংসাও। এবারও অবশ্য শুরুতে মনে হয়েছিল মন্থর উইকেটই হবে। উদ্বোধনী ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে মাত্র ৮৯ রানে গুটিয়ে যায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। পরের দিন খুলনা টাইগার্স আগে ব্যাটিং করে তোলে ১১৩ রান। পরে বোঝা গেছে, শৈত্যপ্রবাহ ও ভেজা আবহাওয়ার কারণে মূলত উইকেট এমন ছিল। আবহাওয়ার পরিবর্তনের পর কুমিল্লার দেয়া ১৪৯ রান তাড়া করে জেতে সিলেট। রংপুর রাইডার্সের দেয়া ১৫৮ রান তাড়ায় জেতে বরিশাল। এমনকি ১৭৮ ও ১৯৪ রানও তাড়া করে জিতেছে চট্টগ্রাম ও সিলেট।

নানা কারণে বিপিএলের শুরু থেকে বিতর্কের নায়কে পরিণত হওয়া ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব গত পরশু বুধবার তেজগাঁওয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে মিরপুরের উইকেট নিয়ে বলেন, ‘এ বছর পিচটা অনেক ভালো। এটা খুবই অপ্রত্যাশিত যে মিরপুরে এতো ভালো পিচ পাই। তো কিউরেটরকে ক্রেডিট দিতেই হয়, সে কারণে এতো বেশি রান হচ্ছে এবং মাঠের খেলাটাও অনেক বেশি ভালো হচ্ছে, এক্সসাইটিং হচ্ছে।’

সিলেট স্ট্রাইকার্সের নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয়, জাকির হাসানসহ স্থানীয় ক্রিকেটাররা রান পাচ্ছেন। দলগুলোর জয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন দেশি ক্রিকেটাররা। উইকেটের কারণে এটা সম্ভব হচ্ছে জানিয়ে সাকিব আরও বলেন, ‘অনেকে ভালো খেলছে, ধারাবাহিকভাবে যদি দেখেন শান্ত, জাকির, হৃদয় খুবই ভালো খেলছে এবং অন্যান্য দলের খেলোয়াড়রাও ভালো করছে। সব থেকে ভালো দিক হচ্ছে স্থানীয় ব্যাটাসম্যানরা এবার ভালো রান করছে, যেটা আমাদের জন্য খুবই ভালো। অনেক ক্রেডিট দিতে হয় পিচকে, কারণ পিচগুলো ভালো পাওয়া যাচ্ছে, এ কারণে আমার মনে হয় দেশীয় ব্যাটসম্যানদের রান করার সুযোগটা বাড়ছে এবং তারা সেটাকে কাজে লাগাচ্ছে। সে দিক থেকে অবশ্যই ভালো একটা দিক’- যোগ করেন সাকিব।

স্থানীয় ব্যাটসম্যানরা আগে ৩০ থেকে ৪০ রান করেই থামতেন, এবার সীমানাটা বেড়েছে। তবে এমন উইকেটে ভালো বোলিং করার পথটা দেশীয় বোলারদের চিনতে হবে বলে মনে করেন সাকিব। তার ভাষায়, ‘আগে ৩০ থেকে ৪০ হতো এখন ৭০ হচ্ছে, এরপর ওটাও শিখে যাবে কীভাবে ১০০ করতে হয়। দেশীয় ব্যাটসম্যানরা রান করছে, এটা একটা ভালো দিক। কিন্তু আমাদের দেশীয় বোলাররা ও রকম ভালো বোলিং করছে না, এ রকম পিচে কীভাবে ভালো বোলিং করতে হয়, ওটা শিখতে হবে।’

টানা চতুর্থ জয় তুলে নেওয়ার পর মাশরাফিও একই ধরনের মন্তব্য করেন উইকেট নিয়ে। সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক বলেন, ‘উইকেট ভালো হলে ওদের জন্য খেলা সহজ হয়। এমনিতে উইকেট তো চট্টগ্রামে গেলেই শুধু ভালো পাওয়া যায়। এ রকম উইকেট তো পাওয়া যায় না (মিরপুরে)। গত তিন দিন যে উইকেট আমরা দেখলাম, দারুণ উইকেট। এ রকম উইকেট হলে কিছু ক্রিকেটার আমরা তৈরি করতে পারব। এটা খুব ভালো দিক যে এত সমালোচনার মধ্যেও মাঠের খেলাটা ঠিক আছে, উইকেট ভালো। এই উইকেটে এবার ব্যাটসম্যানরা ভালো ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, বোলারদের জন্য ভালো হচ্ছে। এ রকম উইকেটে খেলা হলে বোলারদেরও সামর্থ্য বাড়তে থাকে যে, এখানে জায়গা দিলে (ব্যাটসম্যানকে), স্কিল না থাকলে সমস্যা হবে। এ রকম উইকেটে খেলা হলে ভালো হবে। এবার হাজার কথার ভেতরেও এই একটা ব্যাপার যে অন্তত উইকেট ভালো, খেলাটা ভালো হচ্ছে।’ যোগ করেন মাশরাফি। নানা বিতর্ক বরাবরের মতো এবার সঙ্গী বিপিএলের। বিশেষ করে ডিআরএস না থাকা ও এডিআরএস নামক প্রশ্নবিদ্ধ প্রযুক্তির ব্যবহারের সমস্যাগুলো প্রকট হয়ে উঠেছে শুরুতে। আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে নিয়মিত। ভুল সিদ্ধান্ত হচ্ছে হরহামেশাই। ক্রিকেটাররা সেসবের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন দৃষ্টিকটুভাবে। মাশরাফি মানছেন এসবও। ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে বললেন, আম্পায়ারিং আরও ভালো করে তুলতে দায়িত্বটা আম্পায়ারদেরই নিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত