ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি

চুক্তি টেস্টে ব্যস্ততা টি-টোয়েন্টিতে

চুক্তি টেস্টে ব্যস্ততা টি-টোয়েন্টিতে

শুরু হয়েছে নতুন বছর, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও প্রস্তুত হচ্ছে ক্রিকেটারদের নতুন বছরের জন্য কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নিতে। নির্বাচকদের নিজেদের ভেতর আলাপ-আলোচনা অনেকটাই শেষ, তারা নাম জমা দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি)। পরবর্তী বোর্ড সভাতেই চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে ২০২৩ সালের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের নামের তালিকা। আসতে পারে বেশকিছু পরিবর্তন, দেখা যেতে পারে নতুন কাউকে। বিশ্বের অন্য দেশের ক্রিকেট বোর্ডগুলো কেন্দ্রীয় চুক্তিতে সাধারণত সেই ক্রিকেটারদেরই নেয়, যারা দলে নিয়মিত ও পারফরমার। এক অর্থে বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি একধরনের স্বীকৃতিও। যে খেলোয়াড় যে সংস্করণে ভালো, সাধারণত তাকে সেই সংস্করণের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রাখা হয়। কিন্তু ২০২২ সালে বিসিবি যে ক্রিকেটারদের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নিয়েছিল, তারা বছরজুড়ে ব্যস্ত ছিলেন ভিন্ন সংস্করণে! টেস্টের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটার বেশি ব্যস্ত ছিলেন টি-টোয়েন্টিতে, আবার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা খেলোয়াড়দের অনেকেই বছরজুড়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেননি। তাই এই বছর তাদের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।

২০২২ সালের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নাজমুল হোসেন শান্তকে বিসিবি রেখেছিল শুধু টেস্টে। তবে শান্ত বছরজুড়ে ব্যস্ত ছিলেন তিন সংস্করণেই। ১০ টেস্টের পাশাপাশি শান্ত গেল বছর খেলেছেন ১১টি টি-টোয়েন্টি ও ৭টি ওয়ানডে। একই অবস্থা ইয়াসির আলি রাব্বির বেলাতেও। তার সঙ্গে চুক্তি ছিল শুধু টেস্টে, তবে অন্য দুই সংস্করণেই তার ব্যস্ততা ছিল বেশি। খেলেছেন ৫ টেস্ট, ৭ ওয়ানডে আর ১০টি-টোয়েন্টি। নুরুল হাসান সোহান ছিলেন শুধু টি-টোয়েন্টির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে। ২০২২ সালে ৫ টেস্টও খেলেছেন সোহান, এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারে ৯টা টেস্ট খেলা সোহান তার ক্যারিয়ারের অর্ধেক টেস্ট খেলেছেন ২০২২ সালেই, অথচ নির্বাচকরা তার টেস্ট-প্রতিভার কথা বোধ হয় আগাম আন্দাজ করতে পারেননি! ৬ ওয়ানডের ক্যারিয়ারের ৩টিই ২০২২ সালে, অথচ ওয়ানডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতেও নেই সোহান।

এবাদত হোসেনের গায়ে একসময় টেস্ট বোলার তকমা লেগে গেলেও আগস্টে জিম্বাবুয়ে সফরে ওয়ানডে অভিষেক আর সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়ে গেছে সাবেক বিমানসেনার। পারফরম্যান্স একেবারে খারাপ নয় সাদা বলে, টি-টোয়েন্টিতে ৪ ম্যাচে ৭ উইকেট আর ৪ ওয়ানডেতে ১১ উইকেট। ২০২৩ সালের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে তিন সংস্করণেই থাকতে পারেন এবাদত। ২০২২ সালের চুক্তিতে তিন সংস্করণেই ছিলেন দুই পেসার, তাসকিন আহমেদ আর শরিফুল ইসলাম। শরিফুলের পারফরম্যান্স অতটা ভালো ছিল না গত বছর। টি-টোয়েন্টিতে ১২ ম্যাচে ১০ উইকেট, ওয়ানডেতে ১০ ম্যাচে ১২ উইকেট আর ৪ টেস্টে ৭ উইকেট। তাই এবাদত হয়তো নেবেন শরিফুলের জায়গাটা।

মেহেদী হাসান মিরাজ গত বছর চুক্তিতে ছিলেন শুধু টেস্ট আর ওয়ানডেতে। এই দুই ফরম্যাটে স্বপ্নের মতো বছর পার করেছেন মিরাজ, ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটা তো একাই জেতালেন! ৬ টি-টোয়েন্টিতে ১২২ রান ও ৪ উইকেট আছে ২০২২ সালে, যদিও মিরাজ নেই কেন্দ্রীয় চুক্তিতে। এই বছর মিরাজ তিন সংস্করণেই চুক্তিতে থাকার অন্যতম দাবিদার নিঃসন্দেহে। মুশফিকুর রহিম আনুষ্ঠানিকভাবেই টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন। এশিয়া কাপের পর নির্বাচকরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহকে না নেয়ার মাধ্যমে একটা বার্তা দিয়েছেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকেও। অবসর নেয়ায় ২০২৩ সালের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে নিশ্চিতভাবেই থাকছেন না মুশফিক। মাহমুদউল্লাহ টেস্ট থেকে অবসর নেয়ায় ছিলেন ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে, এবার হয়তো টি-টোয়েন্টি সংস্করণের চুক্তি থেকেও বাদ পড়বেন। চুক্তি থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় আছেন নাঈম শেখও। ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টিতে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ছিলেন নাঈম, বছরের শুরুতে আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজে ২ ম্যাচ খেলে ১৫ রান করেছিলেন এই বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। এরপর এশিয়া কাপের একটি ম্যাচে খেলে করেছেন ৬ রান। কোনোরকম সংস্করণেই কেন্দ্রীয় চুক্তিতে না থেকেও নিয়মিতই খেলেছেন মোসাদ্দেক হোসেন, এমনকি এক ম্যাচে নেতৃত্বও দিয়েছেন বাংলাদেশকে। ২০২২ সালে ১৭টা টি-টোয়েন্টি, ৩ ওয়ানডে ও ১টি টেস্ট খেলেছেন চুক্তির বাইরে থাকা মোসাদ্দেক, নুরুল হাসানের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে।

নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন, চুক্তিকে এক সংস্করণে থাকলে যে অন্য সংস্করণে বেশি খেলাটা ব্যতিক্রম কিছু নয়, ‘গত বছর আমাদের টি-টোয়েন্টি বেশি ছিল, বিশ্বকাপের জন্য। আমাদের কেন্দ্রীয় চুক্তির পরিকল্পনাটা এরকম থাকে যে, যে ক্রিকেটারের যেটা স্পেশালিটি, সেটার জন্য স্পেশালি তাকে নেয়া হয়। এটার মানে কিন্তু এটা নয় যে, আমি যাকে টেস্টের চুক্তিতে নিলাম সে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি খেলবে না।’ এ বছর বেশকিছু পরিবর্তন যে আসছে সেটা জানালেন রাজ্জাক, তবে খোলাসা করলেন না। ‘কী কী পরিবর্তন সেটা দেখতে পাবেন। আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন করা, খুব বেশি হলে আমরা গ্রেডের ব্যাপারে কথা বলি। শেষ পর্যন্ত কারা চুক্তিতে থাকবে সেই কাজটা হচ্ছে ক্রিকেট বোর্ডের, কোন ক্যাটাগরি বা কয়টা সংস্করণে খেলবে এটা ক্রিকেট বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। বোর্ড আমাদের যা জানাবে আমরা সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।’ জানান সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনার। আভাস দিয়েছেন নতুন চুক্তিতে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় তালিকায় দেখা যেতে পারে টেস্ট অভিষেকেই ভারতের বিপক্ষে শতরান করা জাকির হাসান, রেজাউর রহমান রাজার নাম। গত বছর মাত্র ৩ টেস্ট খেলে ২২ রান করা সাদমান ইসলাম সেক্ষেত্রে বাদ যেতে পারেন কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে। রাজ্জাক জানিয়েছেন, বিসিবির পরবর্তী বোর্ড সভাতেই চূড়ান্ত হতে পারে নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের নাম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত