ইতিহাস বদলের আশা

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিতব্য মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য শনিবার রাতে ১৫ জনের দল ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় নারী দলের ক্রিকেটাররা দক্ষিণ আফ্রিকাগামী বিমানে উঠলেও সকাল ছিল অফিশিয়াল ফটোসেশন। মিরপুর শেরেবাংলায় দেখা গেল মিডল অর্ডার ব্যাটার ফারজানা হক পিংকিকে, যার বিশ্বকাপ দলে না থাকা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছিল। বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত ১৫ সদস্যের দলে ছিলেন না ফারজানা। রাখা হয়েছিল স্ট্যান্ডবাই হিসেবেও। পরে জানা যায়, ফারজানাও যাচ্ছেন বিশ্বকাপে! গতকাল মিরপুরে নারী দলের কোচণ্ডনির্বাচক এবং অধিনায়কের সঙ্গে সভার পর জানানো হয় ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে হাজার রান করা দেশের একমাত্র ক্রিকেটারকে বিশ্বকাপ দলে নেওয়া হয়েছে। তাকে নিয়ে বাংলাদেশের স্কোয়াড হলো ১৬ সদস্যের। ১২ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হিসেবে আরো আছে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে টাইগ্রেসরা ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে।

ছেলেদের মতো মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের রেকর্ড বেশ বিবর্ণ। কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ মঞ্চে স্রেফ দুটি জয় আছে বাংলাদেশের মেয়েদের। সর্বশেষ জয়টিও ৯ বছর আগে, সেই ২০১৪ সালে। পরিসংখ্যানের পাতার এমন বেহাল দশা এবার বদলাতে চায় নিগার সুলতানা জ্যোতির দল।

২০১৬, ২০১৮, ২০২০- গত এই তিনটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে কোন ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সর্বশেষ জয় এসেছিল ২০১৪ সালে। ঘরের মাঠে সেবারই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেন সালমা খাতুনরা। সেই আসরে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এসেছিল দুই জয়। এরপর টানা ১২ ম্যাচ খেলে সবগুলোতেই হারতে হয়েছে টাইগ্রেসদের। অধিনায়ক জ্যোতি জানা আছে বিব্রতকর এই পরিসংখ্যান, যাওয়ার আগে জানালেন ছবিটা বদলাতে এবার উদ্রগিব বাংলাদেশ দল, ‘অনেক দিন আগে আমরা একটা ম্যাচ জিতেছি। সবারই ইচ্ছে এবার যেন আমরা রেকর্ডটা ব্রেক করি। আমার মোমেন্টাম যেটা অ্যাওয়েতে আছে, একটা মোমেন্টাম যদি ভালো পাই প্রথম ম্যাচে সেটা ক্যারি করতে পারলে (বদলে যাবে অবস্থা)।’ ১ নম্বর গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গে আছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা। সেমিফাইনালে যেতে হলে সেরা দুই দলের মধ্যে থাকতে হবে। পরের ধাপ না ভেবে বাংলাদেশের চাওয়া দুটির বেশি ম্যাচ জেতা, ‘যাদের সঙ্গে এবার খেলা, গ্রুপ পর্বে দুই তিনটা ম্যাচ বের করে নিয়ে আসা সম্ভব আমার মনে হয়। শুধু একটা মোমেন্টাম দরকার আমাদের।’

বিশ্বকাপে জাতীয় দলকে ভালো করার প্রেরণা দিতে পারে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাফল্য। প্রথমবার হতে যাওয়া বয়সভিত্তিক এই আসরে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দেয় বাংলাদেশের কিশোরীরা। গ্রুপ সেরা হয়ে সুপার সিক্স খেলতে থাকা সেই দলের চারজনকে মূল দলেও ডাকা হয়েছে।

জায়গা পেয়েছেন দিশা বিশ্বাস, দিলারা আক্তার, স্বর্ণা আক্তার ও মারুফা আক্তার। এরই মধ্যে আগ্রাসী ব্যাটিং দিয়ে এরই মধ্যে নজর কেড়েছেন স্বর্ণা। যুব বিশ্বকাপ শেষে করে সেখানেই দলের সঙ্গে যোগ দেবেন তারা। এ তরুণীরা দক্ষিণ আফ্রিকাতেই খেলার মধ্যে থাকায় আশার ছবি আঁকছেন জ্যোতি, ‘ওরা এরই মধ্যে ওখানে ম্যাচ খেলেছে। আমাদের চেয়ে ওরা ভালো ফ্লোতে আছে। তারা একটা ভালো মোমেন্টামের ভেতর আছে। মারুফাকে দেখেছি নিয়মিত ভালো বল করেছে, নিউজিল্যান্ডেও ভালো পারফর্ম করেছে। দিশা তো করছেই ভালো। সব মিলিয়ে যে তিনজনকে নেয়া হয়েছে...স্বর্ণা তো বরাবরই ভালো ব্যাট করছে, যেটা আমাদের দলের জন্যও লাভজনক হবে। যেহেতু তারা এরই মধ্যে ওখানে আছে, আমার কাছে মনে হয় একাদশে সুযোগ পেলে দলের জন্য সাহায্য করবে অনেক বেশি। আমার কাছে এটাও মনে হয় যেহেতু নাইন্টিন ভালো করছে তাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নেয়া অনেক ভালো হবে। ভালোর থেকে ভালো শেখা উচিত।’

কেপটাউনে ১২ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ। পোর্ট এলিজাবেথে ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিপক্ষ শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া। ১৭ ফেব্রুয়ারি কেপটাউনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপের তৃতীয় ম্যাচ। ২১ ফেব্রুয়ারি স্বাগতিকদের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল : নিগার সুলতানা (অধিনায়ক), মারুফা আক্তার, দিলারা আক্তার, ফাহিমা খাতুন, সালমা খাতুন, জাহানারা আলম, শামিমা সুলতানা, রুমানা আহমেদ, লতা মণ্ডল, স্বর্ণা আক্তার, নাহিদা আক্তার, ফারজানা হক পিংকি, মুর্শিদা খাতুন, রিতু মনি, দিশা বিশ্বাস, সোবহানা মুস্তারি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

বাংলাদেশের ম্যাচ

তারিখ: প্রতিপক্ষ

১২ ফেব্রুয়ারি: শ্রীলঙ্কা

১৪ ফেব্রুয়ারি: অস্ট্রেলিয়া

১৭ ফেব্রুয়ারি: নিউজিল্যান্ড

২১ ফেব্রুয়ারি: দক্ষিণ আফ্রিকা