নারী ফুটবল দলে জাপানি মায়ের কন্যা

প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শফিক কলিম

আগামী ৩ থেকে ১১ এপ্রিল হবে ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের ফুটবল বাছাইপর্ব। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের তিন প্রতিপক্ষ ইরান, মিয়ানমার ও মালদ্বীপ। তিন দেশের বিপক্ষেই অতীতে খেলেন লাল-সবুজ মেয়েরা। জাতীয় দল পর্যায়ে ইরানের বিপক্ষে দুই দেখায় দুটিতেই হার। ৫-০ গোলে, মিয়ানমারের কাছে ২-০। আর মালদ্বীপের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের প্রতিটিতেই জিতেছে গোলাম রব্বানী ছোটনের। সবশেষ গেল বছর সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডুতে মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ মিশন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। আর ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে বিধ্বস্ত করে প্রথমবারের মতো সাফে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।

দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জয়ের পর অলিম্পিক বাছাই মিশন। বাংলাদেশের গ্রুপের ভেন্যু এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। অলিম্পিকের জন্য সবশেষ সাফ খেলা জাতীয় দল থেকে গত শনিবার বাদ দেয়া হয় দুইজনকে, কোনো ম্যাচ না খেলা আনুচিং মগিনি ও সাজেদা খাতুনকে। সেদিনই খাগড়াছড়ির বাড়িতে চলে যান আনুচিং। ২০১৬ সালে বয়সভিত্তিক দল দিয়ে খেলা শুরু করা সাফজয়ী দলের ফুটবলার আনুচিং জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অভিমানে ফুটবল থেকেই অবসরের ঘোষণা দেন। জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ে নারী দলের এই ফরোয়ার্ডের কষ্টটা বেশি যে, বাদ পড়ার কারণটাও অজানা, ‘লিগ শেষে কিছু দিন জাতীয় দলের অনুশীলন হয়েছে। তারপর একদিন আমাকে ডেকে বাদ দেওয়ার কথা জানানো হলো। আমি কেন বাদ পড়েছি, এটা নিয়ে কেউ কিছু বলল না। আমার কথা হচ্ছে, বাদ পড়ার কারণগুলো জানাতে পারতো, কোন জায়গায় সমস্যা জানতে পারলে ভুল শোধরানো যেত। এখন যেহেতু দলে নেই, তাই ফেরার সুযোগও সেভাবে কম।’ বলেন কঠিন বাস্তবতার কথা বলেছেন ২০ বছর বয়সি, ‘বাংলাদেশ দলে থাকলে দাম আছে, না থাকলে নেই। ফেরার সুযোগ সেভাবে না থাকায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি অবসর নিয়ে নেব। ভালো দল না পেলে ঘরোয়া ফুটবলেও আর খেলবো না।’ বাফুফে ভবনে ক্যাম্প থেকে এভাবে চলে যাওয়া আনুচিং জাতীয় দলে ফেরার আশা দেখছেন না। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে হাল ছেড়ে দিয়েছেন এই ফরোয়ার্ড, ‘কারও নাম বলতে চাই না, কিন্তু সত্য হচ্ছে, যাদের ক্যাম্প ছাড়তে বলা হয়েছে, তাদের আর কখনও ফিরিয়ে আনা হয়নি। তাদের বেলায় যেটা হয়েছে, আমার বেলায়ও সেটাই হলো। তাই অবসর নিয়েছি।’

আনুচিং ফুটবল ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার একদিন পর ফুটবলকে বিদায় বলে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন আরেক সতীর্থ সাজেদা খাতুন। মাত্র ২০ বছরে বয়সে ফুটবলকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে ফেইসবুকে সাজেদা লেখেন, ‘বিদায় একদিন সবাইকে নিতে হবে ফুটবল ক্যারিয়ার থেকে। আজকের পর থেকে ফুটবল ক্যারিয়ারকে বিদায় দিলাম। নতুন করে জীবন শুরু করতে চাই।’ আনুচিং ও সাজেদার বাদ পড়া অবাক করার মতো কোনো বিষয় না। কেননা সবশেষ মহিলা ফুটবল লিগে আনুচিং বসুন্ধরা কিংসে ও সাজেদা বরিশাল ফুটবল একাডেমিতে খেললেও খেলার সুযোগ পেয়েছেন কম। আনুচিং প্রায় প্রতি ম্যাচে বদলি খেলতে নেমে দুটি হ্যাটট্রিক সহ ১০ গোল করেছেন। আনুচিং, সাজেদার ছেড়ে যাওয়া সিট পাওয়া দুজনের একজন মাতুসুশিমা সুমাইয়া। মূলত ফ্রিস্টাইল দিয়ে দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় সাড়া ফেলা এই কিশোরী সবশেষ দুই বছর খেলেছেন বসুন্ধরা কিংসে; জাতীয় দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের সাথে খেলেছেন মালদ্বীপে ফুটবলে। মাতসুশিমার বাবা বাংলাদেশি, মা জাপানি। জাপানে বেড়ে ওঠা এই নারী ফুটবলার হলেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলে প্রথম দ্বিজাতি ফুটবলার।