আবারো বাংলাদেশের হেড কোচ হাথুরুসিংহে

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

ঊাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচের ঝামেলা মিটে গেছে। আগামী দুই বছরের চুক্তিতে ২০ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কাজ শুরু করবেন শ্রীলঙ্কান হাথুরুসিংহে । ২০১৭ সালে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া চন্দিকা হাথুরুসিংহে আবার ফিরছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে। এই শ্রীলঙ্কানকেই জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব দিয়েছে বিসিবি। দুই বছরের চুক্তিতে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে তার ৫৪ বছর বয়সী দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হবে ফেব্রুয়ারি থেকেই। গত মাসে রাসেল ডমিঙ্গো দায়িত্ব ছাড়ার পর হাথুরুসিংহের কোচ হয়ে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে গুঞ্জন চলছিল দেশের ক্রিকেটে। মঙ্গলবার ক্রিকেট নিউ সাউথ ওয়েলস বিবৃতিতে জানায়, তাদের সহকারী কোচের পদ ছেড়ে দিয়েছেন লঙ্কান এই কোচ। তাতেই চিত্র পরিষ্কার হয়ে যায় অনেকটা। সন্ধ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি জানায় আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।

বিসিবি প্রধান নাজমুল হোসেন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানান, তিন সংস্করণের জন্যই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হাথুরুসিংহেকে। তাতে সংস্করণ ভেদে আলাদা কোচের আগের ঘোষণা থেকে সরে এলো বিসিবি।

হাথুরুসিংহের সহকারী কোচ হওয়ার জন্য বিসিবি ৫ জনের তালিকা করেছে বলেও জানান বিসিবি সভাপতি। সামনে তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।

নিউ সাউথ ওয়েলসের সহকারী কোচের দায়িত্ব ছেড়েই ২০১৪ সালে বাংলাদেশের প্রধান কোচ হয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তার কোচিংয়ে অভাবনীয় কিছু সাফল্যও পায় দল। তবে একটা সময় ক্রিকেটারদের অনেকের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল বলে শোনা গিয়েছিল সেসময়। ২০১৭ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাঝপথেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

পরে সেই বছরের ডিসেম্বরে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান বলেছিলেন, ক্রিকেটারদের মানসিকতা ও নিবেদনের ঘাটতি নিয়ে বিরক্ত ছিলেন হাথুরুসিংহে। দেশ ও দলের প্রতি সাকিব আল হাসানের দায়িত্ববোধ নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন বলেও সেসময় জানিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি। সাকিব এখন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।

সেবার বাংলাদেশের দায়িত্ব ছাড়ার কদিন পরই শ্রীলঙ্কার প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন। তবে নিজ দেশেও তিন বছরের মেয়াদের অর্ধেকও তিনি পার করতে পারেননি। ২০১৯ সালে তাতে বরখাস্ত করা হয়। এরপর চুক্তি আর্থিক ব্যাপার নিয়ে লঙ্কান বোর্ডের সঙ্গে তার আইনী লড়াইও চলে অনেক দিন। এরপর তিনি আবার ফিরে যান সিডনিতে, যেখানে পরিবার নিয়ে তিনি থাকেন। ২০২০ সালে দায়িত্ব নেন নিউ সাউথ ওয়েলসের সহকারী কোচের। এবার সেখান থেকেই আবার ফিরলেন বাংলাদেশে।

বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরির বিশ্বাস, আগের দফার দায়িত্ব হাথুরুসিংহের নতুন অধ্যায়ে ইতিবাচক হয়ে কাজ করবে।

‘বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে চান্দিকার অভিজ্ঞতা ও ধারণা তার জন্য বাড়তি সুবিধা হবে এবং ক্রিকেটারদেরও কাজে লাগবে। তিনি পরীক্ষিত একজন ট্যাকটিশিয়ান এবং তার প্রথম দফার দায়িত্বেই জাতীয় দলের ওপর তার প্রভাব আমরা দেখেছি।’

গত বছর বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট করে আনা হয়েছিল শ্রীধরন শ্রীরামকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে তার মেয়াদ শেষ হলেও তাকে আবার ফিরিয়ে আনার ইচ্ছের কথা বিসিবি কর্তারা বলেছিলেন বেশ কবার। গত মাসে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস অনেকটাই নিশ্চিত করে দিয়েছিলেন, শ্রীরাম ফিরছেন। এখন হাথুরুসিংহেকে তিন সংস্করণেই দায়িত্ব দেওয়ায় নিশ্চিত হয়ে গেল, শ্রীরামের ফেরা হচ্ছে না।

হাথুরুসিংহের নতুন মেয়াদের প্রথম সিরিজটি হতে যাচ্ছে ভীষণ কঠিন। মার্চের শুরুতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের সঙ্গে দেশের মাঠে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি টাইগারদের কোচের দায়িত্বে ছিলেন। তার অধীনে তিন ফরম্যাটে ১০১ ম্যাচ খেলে ৪১টি ম্যাচ জিতেছিল টাইগাররা। প্রথমবার কোচ হয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটটাই বদলে দিয়েছিলেন হাথরুসিংহে। তার অধীনে ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলিছিলে মাশরাফীরা। এছাড়া ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের সঙ্গে সিরিজ জয়। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে টেস্টে হারানো এবং শ্রীলঙ্কার মাটিতে শততম টেস্টে জয়ও ছিল তার অধীনেই।

দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ক্রিকইনফোর প্রতিবেদনের শিরোনাম, বাংলাদেশের টেস্ট ও ওয়ানডে দলের প্রধান কোচ হিসেবে ফিরছেন হাথুরুসিংহে। ওই প্রতিবেদনে এটাও স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, সুখকর স্মৃতি নিয়ে নয়, বরং অস্ট্রেলিয়ার ক্লাবে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশে ফিরছেন শ্রীলঙ্কান এই কোচ। নিউ সাউথ ওয়েলসে হাথুরুর দ্বিতীয় অভিযান মোটেও সুখকর ছিল না। প্রথম দফায় ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কাউন্টি ক্লাবটিতে ছিলেন তিনি। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ছিলেন। তার কোচিংয়ে ওয়ানডেতে বদলে যায় টাইগারদের ভাগ্য। প্রথম দফায় সাফল্যের ছাপ ফেলে ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেন হাথুরু। কয়েক মাস পর বাংলাদেশে ফেরত এসেছিলেন শ্রীলঙ্কার কোচ হয়ে। এরপর স্টিড রোডস ও রাসেল ডমিঙ্গোকে পরখ করে ফের হাথুরুর মতো কঠোর একজন কোচের খোঁজে নামে বিসিবি।

গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে ডমিঙ্গো যুগের অবসান ঘটে। এরপরই কঠোর ও আক্রমণাত্মক কোচের খোঁজে নামে পাপনের বোর্ড। তাই শুরু থেকেই গুঞ্জনে ছিল হাথুরুর নাম। মজার বিষয় হলো, এবারও নিউ সাউথ ওয়েলসে ছেড়ে বাংলাদেশ আসছেন তিনি। কিন্তু এ যাত্রায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে কাউন্টি ক্লাব ছাড়তে হচ্ছে তাকে। বাজে একটি মৌসুমই পার করছে নিউ সাউথ ওয়েলস। শিফিল্ড শিল্ড ও মার্শ কাপ, দুই টুর্নামেন্টেই টেবিলের তলানিতে অবস্থান করছে ক্লাবটি। তাতে ইতোমধ্যে ধাক্কা লেগেছে তাদের কোচিং প্যানেলে। দুঃসময়ে টাইগারদের কোচ হওয়ার সুযোগ! যা লুফে নিয়েছেন হাথুরু। ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকে’র মাধ্যমে বিদায় নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্লাব থেকে। সহকারী কোচকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিউ সাউথ ওয়েলস পুরুষ ক্রিকেটের প্রধান মাইকেল ক্লিঙ্গার। তিনি বলেছেন, ‘চন্ডিকা গত কয়েক বছরে ক্রিকেট নিউ সাউথ ওয়েলস, দ্য ব্লুজ এবং সিডনি থান্ডারে চমৎকার অবদান রেখেছেন এবং তাকে যেতে দেখে আমরা ব্যথিত। আন্তর্জাতিকভাবে কোচিংয়ের ভূমিকা নেওয়ার তার যে ইচ্ছা, সেটা বুঝতে পারছি। তাই তার কোচিং ক্যারিয়ারের পরবর্তী অধ্যায়ে তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আমরা।’