‘গ্রিন হাউজ’ বসছে বিসিবি একাডেমিতে

প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

মরুভূমি কিংবা শীতপ্রধান দেশে কৃষিকাজের জন্য গ্রিন হাউজের ব্যবহার হয়ে আসছে বহু দিন ধরে। এটিকে প্রথম ক্রিকেটে এনেছে নিউজিল্যান্ড। তাদের দেখাদেখি শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়াও। এবার ‘গ্রিন হাউজ’ বসতে চলেছে মিরপুরে বিসিবির একাডেমি মাঠে। বর্ষার সময়েও নির্বিঘ্ন অনুশীলনের জন্য একাডেমিতে গ্রিন হাউজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি। গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বুধবার খবর জানিয়েছেন বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুব আনাম।

মিরপুরে বিসিবি একাডেমি মাঠের এক প্রান্তে ৩০ মিটার প্রশস্ত ও ৭৫ মিটার লম্বা জায়গাজুড়ে এই গ্রিন হাউজ স্থাপন করা হবে। বৃষ্টির মৌসুমে চারপাশে বিশেষ পর্দা টেনে দিয়ে ভেতরে অনুশীলন করা যাবে। গ্রীষ্মকালে অনুশীলনের সময় গরম থেকে বাঁচতে এই পর্দা সরিয়ে নেয়া যাবে, ‘আমরা (বিসিবি) একাডেমিতে গ্রিন-হাউজ এফেক্টের যে অনুশীলন সুবিধা, যেটা নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াতে আছে, সেরকম স্থাপন করতে যাচ্ছি। উত্তর-দক্ষিণ দিক মিলিয়ে আমরা ২০টি উইকেট এর মধ্যে আনব। এই ২০টি উইকেটে ভরা বর্ষায়ও স্বাভাবিকভাবে খেলা যাবে। এটি জুনের মধ্যেই স্থাপিত হয়ে যাবে। এটি একপ্রকার ইনডোর সুবিধা বলা যায়। তবে বর্ষাহীন সময়ে পর্দা খুলে নেয়া যাবে। আর বর্ষায় পর্দা টেনে অনুশীলন করা যাবে। বর্ষার সময় আমাদের ইনডোর ছাড়া আর খুব একটা অনুশীলনের জায়গা থাকে না। আগামী এক বছরের মধ্যে এটাকে একটা সুন্দর পরিকল্পনায় আনতে চাচ্ছি।’

প্রস্তাবিত এই গ্রিন হাউজের এখনও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। মাহবুব আনামের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন তারা ক্রয় প্রক্রিয়ায় মধ্যে আছেন। মে মাসের মধ্যে এটির কাজ শেষ হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি, প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো মার্চের শেষ দিক থেকে এপ্রিলের মধ্যে চলে আসবে। পরে স্থাপনের জন্য মে মাস... হয়তো জুনের মধ্যে আমরা এটা ব্যবহার করতে পারব। আশা করি এই বর্ষায় এটি ব্যবহার করা যাবে। ব্যবহার করলেই আমরা বুঝতে পারব কতটা উপকার পাওয়া যাচ্ছে।’

অনুশীলনের জন্য আধুনিক এই গ্রিন হাউজ স্থাপনে ঠিক কত টাকা খরচ হবে তা স্পষ্ট করে জানাননি গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান। তবে আনুমানিক ধারণা দিলেন তিনি, ‘বাজেটের বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে। কিছু জিনিস আছে এটার ক্রয় প্রক্রিয়া। তবে এটার জন্য সব মিলিয়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা লাগতে পারে। একটা ইনডোর বানাতে এখন ৫-৬ কোটি টাকাতেও হয় না। এটার সুফলটা হচ্ছে ঘোর বর্ষায়ও আমরা এটা ব্যবহার করতে পারব।’ অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক হিসেবে একাডেমিতে এই গ্রিন হাউজ বসানো হচ্ছে জানালেন মাহবুব আনাম, ‘আমরা এটিকে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে নিচ্ছি। যদি এখানে সফল হই তাহলে অন্যান্য যে অনুশীলন সুবিধা তৈরি করছি, সেখানেও হয়তো ব্যবহার করতে পারব।’

জাতীয় দলের ব্যস্ত সূচিতে অনুশীলন নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় নারী দল বা অনূর্ধ্ব-১৯ পুরুষ দলকে। তাদের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করছে বিসিবি। প্রায় সারা বছরই ঠাসা সূচিতে ব্যস্ত থাকে শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। জাতীয় দল ও এর আশপাশের কার্যক্রমের কারণে অন্যান্য দলগুলোর অনুশীলন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। তাই কখনও বিকেএসপি, কখনও মিরপুর একাডেমিতে অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সারতে হয় অনুশীলন। এই সমস্যা দূর করতে স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটছে বিসিবি। জাতীয় নারী দল ও ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের জন্য ঢাকার বাইরে করা হচ্ছে অনুশীলনের স্থায়ী ব্যবস্থা। এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুব আনাম।

বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটেই হয় দেশের বেশিরভাগ ক্রিকেট। দেশের ক্রিকেটের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই তিন শহরের বাইরে রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালের মাঠ নিয়েও কাজ শুরু করেছে বিসিবি। বুধবার সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এই কথা জানান মাহবুব আনাম। ‘আগে শুধু জাতীয় দল ও অনূর্ধ্ব-১৯ দল অনুশীলন করত। এখন অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দল হয়েছে, জাতীয় নারী দলের এফটিপি হয়েছে। তাই মাঠ যেমন প্রয়োজন, অনুশীলনের সুবিধাও প্রয়োজন। আগে বলেছিলাম, একেকটা সেন্টার ধরে কাজে হাত দেব। আমি রাজশাহী ঘুরে এসেছি। আমরা এরই মধ্যে সেখানে কাজে হাত দিয়েছি। রাজশাহীতে ইনডোর সুবিধাটি পুনর্গঠন করা হচ্ছে। ওটার মেরামতের কাজে হাত দিয়েছি। চট্টগ্রাম ও সিলেটে আমরা যেভাবে অনুশীলন সুবিধা তৈরি করেছি, একইভাবে আমরা রাজশাহীতে কাজটা করব।’

খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে জানুয়ারিতে ক্যাম্প করেছে ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৯ দল। তবে তাদের অনুশীলনের জন্য খুলনা নয় বরং রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান স্টেডিয়াম দেয়া হবে জানান মাহবুব আনাম। পাশাপাশি নারী দলের জন্যও অনুশীলনের স্থায়ী ব্যবস্থা করছে বিসিবি, ‘আশা করছি এই বর্ষার মধ্যেই রাজশাহীর অনুশীলন সুবিধা প্রস্তুত করব এবং অনূর্ধ্ব-১৯ ছেলেদের জন্য একটা স্থায়ী অনুশীলনের ব্যবস্থা করব। একইভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে খুলনাকে আমরা নারী দলের অনুশীলনের জন্য তৈরি করব। আমাদের সার্ভেয়াররা এখন রাজশাহীতে কাজ করছে। রাজশাহীর কাজ শেষ করে তারা খুলনার কাজটা ধরবে।’ খুলনা-রাজশাহীর বাইরে বরিশালের মাঠ নিয়েও আশাবাদী বিসিবি কর্তার। ‘তৃতীয়ত আমরা বরিশালের কাজ ধরব। এনএসসি বরিশালের মাঠের উন্নয়ন কাজ করেছে। আমরা একইসাথে মাঠের বাইরে অনুশীলনের জন্য বাকি যে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেগুলোর কাজ শুরু করব। এ তিনটা মাঠের কাজই আমরা এই মৌসুমে শুরু করব। আশা করছি এই বছরের মধ্যেই এই তিনটা সুবিধা তিনটা গ্রুপের অনুশীলনের জন্য তৈরি হয়ে যাবে।’ অনুশীলনের উন্নত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করলেও আন্তর্জাতিক কিংবা বিপিএল মানের টুর্নামেন্টের ম্যাচ আয়োজন সম্ভব নয় বলে মনে করেন মাহবুব আনাম। তাই আগে অন্যান্য পর্যায়ের ক্রিকেট রাজশাহীতে ফেরাতে চান তিনি। (ম্যাচ দেওয়ার জন্য) কিছু বাড়তি সুযোগ-সুবিধা লাগে। প্রোডাকশন সুবিধা লাগে। রাজশাহীতে আমরা দেখেছি মিডিয়া সেন্টার ও প্রোডাকশনের জায়গা নেই। যেহেতু এটা ফ্যাসিলিটিজ (ডিপার্টমেন্টের) আন্ডারে, আমি হাত দিতে চাচ্ছি না। তবে রাজশাহীতে হোটেল হয়েছে। আমরা শিগগির চেষ্টা করব অনূর্ধ্ব-১৯, ‘এ’ দলের খেলাগুলো রাজশাহীতে ফেরত নিতে।’ এছাড়া যে কোনো আবহাওয়ায় নিবিড় অনুশীলনের জন্য মিরপুরের একাডেমি মাঠে গ্রিন হাউজ টার্ফ স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি।