এবার এএফসি মিশন চ্যাম্পিয়ন কন্যাদের

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

জাতীয় দল, অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৮, অনূর্ধ্ব-১৯, অনূর্ধ্ব-২০- মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলে সাতবার ফাইনালে উঠে চারবার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েরা। এর মধ্যে জাতীয় দল পর্যায়ে দুইবার ফাইনাল খেলে শিরোপা জিতেছে একটি। চার টুর্নামেন্টের বাকি তিনবার শিরোপা নির্ধারণ হয়েছে গ্রুপ পদ্ধতিতে। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার কমলাপুর স্টেডিয়ামে নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-২০ সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন শামসুন্নাহার, শাহেদা, রুপনারা। টানা খেলে ক্লান্ত মেয়েরা বাফুফে ভবনে আপাতত বিশ্রামে রয়েছে, আগামী বুধবার থেকে চ্যাম্পিয়ন মেয়েরা অনুশীলনে ফিরবেন, এবার তাদের মিশন এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব। ৮ থেকে ১২ মার্চ কমলাপুর স্টেডিয়ামে হবে এই পর্ব, ‘এইচ’ গ্রুপে স্বাগতিকদের প্রতিপক্ষ ইরান ও তুর্কমেনিস্তান। শিরোপা উদযাপন ও এএফসি মিশন নিয়ে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘মেয়েরা বৃহস্পতিবার রাতে শিরোপা নিয়ে মাঠেই উৎসব করেছে। আপাতত সবাই বাফুফে ভবনে ক্যাম্পে বিশ্রামে রয়েছে। এর পরই রয়েছে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি।

স্বপ্ন, পরিশ্রম ও সাফল্যের মিশেলে ছিল আট দিন। ৩ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি সাফ অনূর্ধ্ব-২০ মেয়েদের শিরোপা জয়ের মিশনে দুর্দান্ত সব নৈপুণ্য আর কঠিন পরিশ্রমের ফসল পেয়েছেন শামসুন্নাহাররা। সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) প্রথমবার প্রবর্তিত এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে বাংলাদেশ।

২০১৫ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক নারী ফুটবলের শিরোপা দিয়ে শুরু। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে সব ট্রফি ছুঁয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সেরাদের তালিকায় এখন লাল-সবুজ দলের মেয়েরা। সাফে সিনিয়রদের পাশাপাশি বয়সভিত্তিক আসরগুলোর ট্রফিও নিজেদের ঝুলিতে এসেছে। সবশেষ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি জিতে নিজেদের আরও উঁচুতে নিয়ে গেছে মেয়েরা। নারী ফুটবল দলের এই অগ্রযাত্রার নেপথ্যে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। টাঙ্গাইলের এই সাবেক ফুটবলারের হাত ধরেই সব ট্রফি শোকেসে শোভা পাচ্ছে।

অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশের ফুটবলে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মেয়েরা আসছেন। যারা ভালো করছেন টিকে যাচ্ছেন। তবে এর পেছনে কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলা কিংবা নিয়মিত অনুশীলনের পাশাপাশি আরও একটি বিষয়ও রয়েছে। তা হলো তাদের মাঝে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের বীজ বপন করে দেয়া; ভালো করতে পারলে সুযোগ মিলবে এগিয়ে যাওয়ার। সেজন্য প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা অবলম্বন করাকে মূল পাথেয় মনে করছেন গোলাম রব্বানী ছোটন, ‘এই সাফল্যের অন্যতম কারণ স্বচ্ছতা। খেলোয়াড়রা জানে, এখানে টিকে থাকতে হলে নিজেকে নিংড়ে দিতে হবে। কঠোর অনুশীলনের সঙ্গে পারফরম্যান্সটাও ঠিকমতো দেখাতে হবে। উন্নতি করতে না পারলে কিছু করা সম্ভব নয়। যে ভালো করবে দলে থাকবে। তা না হলে টিকে থাকা যাবে না। কেন না, জাতীয় দলে আবেগ নয়, চ্যালেঞ্জ নিয়েই খেলতে হয়।’

ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ফুটবলে সাফল্য বেশি হলেও তাদের লিগ অতটা শক্তিশালী নয়। জাতীয় পর্যায়েও নিয়মিত খেলা হয় না। তবু স্বল্প পরিসরেও মেধাবী খেলোয়াড় উঠে আসছে। ফলে সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় বেছে নিতে সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি ছোটনের। যাদের বাছাই করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে ভালো করার তাগিদ তৈরিতেও ভূমিকা রাখা হচ্ছে। ছোটন বলছিলেন, ‘এখানে বাফুফে ভবনের অ্যাকাডেমিতে চ্যালেঞ্জের আবহ তৈরি করা হয়েছে- প্রতিদিন মানসিকভাবে উন্নতি করতে হবে, টিকে থাকতে হবে, সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সিনিয়র থেকে নতুন যারা সবার জন্যই একই বার্তা। তাতে মেয়েরা সেভাবেই বেড়ে উঠছে, ভালো করছে।’

বাংলাদেশ শুধু সাফ অঞ্চলেই ভালো করছে। এশিয়ার অন্য পর্যায়ে ভালো করার সুযোগ মিলছে না। সেজন্য পরিকল্পনার প্রসার ঘটানোর দিকে দৃষ্টি দিতে চাইছেন ছোটন, ‘সাফের বাইরে গিয়ে সাফল্য পাওয়া কঠিন কিছু নয়, সম্ভব। আগে বলত বয়সভিত্তিক আসরে সাফল্য আসছে, সিনিয়রে আসছে না। একই খেলোয়াড় বারবার খেলছে। অন্য খেলোয়াড় আসছে না। এখন তো অনূর্ধ্ব-১৪ থেকে শুরু করে সিনিয়র আসরেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। ভারত ও নেপালের মতো শক্তিশালী দলগুলোকে হারিয়েছি। এখন পরিকল্পনা বাড়াতে হবে। এখানে (বাফুফে ভবনে) ৭০ জনের বেশি মেয়েকে রেখে অনুশীলন সম্ভব নয়। যাদের সঙ্গে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি তাদের পর্যাপ্ত অ্যাকাডেমি আছে, আমাদের নেই। অ্যাকাডেমি আরও বাড়াতে হবে।’ বিশেষ করে তৃণমূল থেকে যারা উঠে আসছেন, তাদের পেছনে আলাদা করে যত্ন নিতে জোর দিচ্ছেন তিনি,। ‘এখানে জাতীয় দলের বিভিন্ন স্তরে খেলোয়াড় আসছে তৃণমূল থেকে। এসে মানসিক ও কঠোর পরিশ্রম করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। ওখানেই যদি অ্যাকাডেমির মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে আসতে পারে তাহলে ভালো হয়। খেলার পাশাপাশি মানসিকভাবেও তৈরি হবে। তখন তাদের নিয়ে কাজ করতে সহজ হবে। না হলে খেলোয়াড়দের হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসে সবকিছু মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়। আর বাফুফে ভবনে ইচ্ছে করলেই তো অনেক খেলোয়াড় নিয়ে আবাসিক অনুশীলন সম্ভব নয়। জায়গা তো নেই।’ কিছুদিন আগে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন আনুচিং মগিনী ও সাজেদা খাতুন। পারফরম্যান্স ঠিকমতো যাচাই না করেই তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। কোচ বলছেন অন্য কথা, ‘এখানে সবকিছু স্বচ্ছ। পারফরম্যান্স করতে পারবেন তো টিকে থাকবেন। না হলে পারবেন না।’ উদাহরণ টেনে বললেন, ‘এই যে আইরিন খাতুন। সরাসরি নারী লিগ থেকে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ পর্যায়ে খেলছে। আগে কখনও বয়সভিত্তিক দলে খেলেনি। ওকে আগে চিনতাম না। খেলা দেখেই দলে নেয়া হয়েছে। যারা বাদ পড়েছে তাদের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। আমি এখানে বসে থাকার কিছু দেখছি না। বাদ দিলেও নতুন পথ খুঁজে নিতে হবে।