অধিনায়ক সাকিবের ভুলে ডুবল বরিশাল

প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

বিপিএলের এলিমিনেটর ম্যাচের আগে একাদশে বড় চমক। দু’দলের বিদেশিদের তালিকা প্রায় পুরোটাই পরিবর্তিত, বড় চমক রংপুরের। ম্যাচের আগে তারা নিয়ে আসে মুজিব উর রেহমান, ডোয়াইন ব্রাভো, নিকোলাস পুরান ও দাসুন শানাকাকে, সবাই মাঠেও নেমে গেলেন। ওদিকে সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশালে এলেন ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস, ভানুকা রাজাপাক্সে, আন্দ্রে ফ্লেচাররা। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের নায়ক ও পার্শ্বনায়ক দু’জনই বাংলাদেশের, প্রথমে মেহেদী হাসান মিরাজের (৪৮ বলে ৬৯ রান) ব্যাটে বরিশালে (১৭০/৩) পেল লড়াই করার সংগ্রহ। পরে সেটা আড়াল করে শামীম পাটোয়ারী (৫১ বলে ৭১ রান) খেললেন তার চেয়েও দারুণ এক ইনিংস। তাতেই ৪ উইকেটে জিতে সাকিবের বরিশালকে বিদায় করে দিল রংপুর রাইডার্স। সেই সঙ্গে বিপিএলে ফাইনালে ওঠার আরও একটা সুযোগ পাবে রংপুর।

সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন তারকাবহুল দলটি দারুণ শুরু করেও কাঙ্খিত স্কোর গড়তে পারেনি, ৩ উইকেটে ১৭০ রানের পুঁজি নিয়ে রংপুর রাইডার্সের মতো দলকে আটকানো কঠিনই বটে। কিন্তু কেন এমন হলো? রংপুর-বরিশাল ম্যাচ শেষ হতেই আলোচনায় চলে এসেছে অধিনায়ক সাকিবের কিছু সিদ্ধান্ত। বরিশাল কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমও মনে করেন, সিদ্ধান্তগুলো এরকম না হলেও চলত।

মেহেদি মিরাজ আর মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে অমন দারুণ ভিত তৈরির পরও সাকিব ব্যাটিংয়েই নামেননি! অথচ টুর্নামেন্টজুড়ে তিনি বিধ্বংসী ব্যাটিং করে গেছেন। তার বদলে দুই বিদেশি করিম জানাত ও ভানুকা রাজাপাক্ষে দলের চাহিদা মেটাতে পারেননি। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, ‘রানটা আরও বেশি করার সুযোগ ছিল। যেভাবে শুরু করেছিলাম এবং যে ভিত্তিটা ছিল সেটাকে এক অর্থে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছি। কিছু ওভার গেছে যেগুলোতে ৫ থেকে ৬ রান করে নিয়েছি। টি-টোয়েন্টিতে এই রেটে রান করলে আমার মনে হয় না এমন একটা স্কোর করা সম্ভব যেটা প্রতিপক্ষকে খুব চাপে ফেলবে।’ সাকিবের ব্যাটিংয়ে না নামার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এত ভালো একটা প্ল্যাটফর্ম হওয়ার পরও হয়তো ওর মাথায় কাজ করেছিল যে, রাজাপাক্ষে (ভানুকা) কিংবা করিমকে (জানাত) আগে পাঠিয়ে ওদের ফ্রি করে দেয়া। ফ্রি থেকে ওরা যত ওরা যদি ভালো স্ট্রাইকরেটে কিছু রান করে, সেটা দলের কাজে আসবে। পরে ও শেষে গিয়ে নিজের কাজটা করবে। কিন্তু মনে হয়নি এই পরিকল্পনাটা কাজে লেগেছে। কারণ করিম বা রাজাপাক্ষে তাদের কাজটা করতে পারেনি। সেটা উইকেটের কারণে হোক বা ভালো বোলিংয়ের কারণে হোক বা নিজেদের ইনটেন্টের অভাবে হোক। এখানে আমরা পিছিয়ে গেছি। আমাদের সুযোগ ছিল ১৯০ বা তার বেশি করার। কিন্তু আমাদের ব্যাটিং শক্তিটা আমরা ব্যবহার করতে পারিনি।’

নিজে না নেমে দুই বিদেশিকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্তটা সাকিবেরই ছিল বলে জানান নাজমুল, ‘এটা ক্যাপ্টেন কল ছিল, অবশ্যই আমাকে জিজ্ঞেস করে নিয়েছে। এই চিন্তাটায় ও (সাকিব) কমফোর্ট ফিল করছিল যে, ওরা ভালো ব্যাটসম্যান যদি ওই সময়ে গিয়ে দুই-এক ওভারে চমকপ্রদ কিছু করতে পারে.. সেরকম একটা অবস্থান ছিল। কিন্তু তারা সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনি।’ দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাকিবকে রেখে অন্যদের ব্যাটিংয়ে পাঠানো জুয়া কিনা- এই প্রশ্ন একমত নাজমুল, ‘আমারও সেই ধারণা। সাকিব এখন যেভাবে ব্যাটিং করছে এই উইকেটে এই পরিস্থিতিতে, সাকিবের চেয়ে ভালো কোনো অপশন দলে আছে বলে মনে হয় না। খুব ভালো হতো যদি সে নিজে খেলত এবং নিজের মতো করে খেলত। এখন হয়তো এই উপলব্ধি সাকিবের হচ্ছে। যেটা হয়ে গেছে সেটা ফেরানো যাবে না। এটা একটা শিক্ষা।’ শুধু ব্যাটিং নয়, সাকিবের বোলিং পরিকল্পনা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নিজেই বোলিং উদ্বোধন করে নাঈম শেখের উইকেটসহ মেডেন নেন সাকিব, ফিরতি ওভারেও বোলিং করেন। ১১ ওভারের মধ্যে নিজের কোটা শেষ করেন! সাকিবের মতো বোলার এত আগে কেন নিজের বোলিং শেষ করবেন- প্রশ্নে নাজমুলের জবাব, ‘একটা চিন্তা ছিল যে পাওয়ারপ্লেতে বেশি রান দেব না। প্রথম ২ ওভারে ও খুব কম রান দিয়েছে, এটাই হয়তো ওকে উৎসাহ দিয়েছে যে পাওয়ারপ্লেতে যেন বেশি রান না দেই। আরেকটা ব্যাপার হলো, একজন বোলার যদি বারবার বোলিং করতে থাকে তবে সেটা প্রতিপক্ষ ব্যাটারের জন্য সহজ হয়ে যায়। যে কারণে ও কিন্তু নিজের শেষ ওভারে যথেষ্ট রান দিয়েছে। আজ আমাদের আরেকজন বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ছিল, তাই হয়তো সাকিব নিজের ওভার আগেই শেষ করে ফেলেছে।’