আন্তর্জাতিক ফুটবলে আর্জেন্টিনার কোটি কোটি সমর্থক বাংলাদেশে। গত কাতার বিশ্বকাপের পর এই সমর্থন রূপ নিয়েছে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্কে। শুধু মেসি বা মেসিদের কোচই নন, দেশটির অনেক ফুটবলার এবং সংগঠকও জানেন বাংলাদেশের নাম। কয়েক দিন আগে আর্জেন্টিনার একটি লিগ উদ্বোধনকালে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকাও উড়িয়েছিল তারা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলটিকে দ্বিতীয়বার বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণও জানিয়ে রেখেছে বাফুফে।
দুই দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া এই সুসম্পর্ককে ফুটবল উন্নয়নে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ। যে কারণে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আর্জেন্টিনা সরকারের সঙ্গে ৪ বছরের একটি চুক্তিতে যাওয়ার উদ্যোগও নিয়েছে। চুক্তিতে কী কী থাকছে, তার খসড়াও তৈরি হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি এই খসড়া চূড়ান্ত হলে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করবেন দুই দেশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। কী থাকবে বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার মধ্যকার এই চুক্তিতে? জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব পরিমল সিংহ বলেছেন, ‘চুক্তির একটা খসড়া এরই মধ্যে হয়ে গেছে। এই খসড়া চুক্তি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে একটা সভাও হয়েছে। সেখানে খসড়া চুক্তি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষে চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চুক্তিপত্র চূড়ান্ত হলে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মহোদয় দেখে অনুমোদন দিলেই দুই দেশের মধ্যে সেটা সম্পাদিত হবে। আমরা চুক্তিপত্রে আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপরই বেশি গুরুত্ব দেব। ওরা (আর্জেন্টিনা) ওদের সুবিধামতো করতে চাইবে। আমরা দেখবো আমাদের স্বার্থের বিষয়টি।’
তারপরও যে খসড়া চুক্তিনামা নিয়ে গত সোমবার বসছেন সেখানে কোন বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হয়েছে? ‘আমাদের ফুটবল উন্নয়নের বিষয়টিই বিভিন্নভাবে গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের ফুটবলাররা আর্জেন্টিনায় যাবে, তাদের ফুটবলার আসবে। কোচের মানোয়ন্ননে সেখানে পাঠানো হবে। এক কথায় আর্জেন্টিনার কাছ থেকে ফুটবল উন্নয়নে আমরা যতটা নিতে পারি তার চেষ্টা থাকবে চুক্তিতে’- বলছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব পরিমল সিংহ।
এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ফুটবল উন্নয়নের সম্পর্কটা আরো জোরদার হবে বলেই মনে করছেন ক্রীড়া প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এই চুক্তির মধ্যদিয়ে দুই দেশের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন, পেশাদার ক্লাব ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউশনগুলো তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবে। দুই দেশের ফুটবল কর্মকর্তারা অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে অনুশীলন কৌশল সম্পর্কে আরো দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।
এ বিষয়ে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগ বলেছেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে খসড়া চুক্তিপত্রের ওপর মতামত দিতে বলা হয়েছিল। এরই মধ্যে বাফুফের মতামত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।’ চার বছর মেয়াদের এই চুক্তিপত্র স্বাক্ষর হলে বাংলাদেশের ফুটবল কোন কোন সুবিধা পেতে পারে? বাফুফে সাধারণ সম্পাদকের জবাব, ‘একটা চুক্তিতে অনেক কিছুই থাকে। আমি মনে করি, এর মধ্যে থেকে আমরা যদি দুই দেশের বয়সভিত্তিক দলের মধ্যে ম্যাচ আয়োজন করতে পারি, কোচদের মানোন্নয়নে সেখানে পাঠাতে পারি, তাদের অভিজ্ঞ কোচ এনে আমাদের কোচদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারি, পুরুষ ও নারী জাতীয় দল ও বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলের সফর বিনিময় করতে পারি, তা থেকে আমাদের ফুটবল অবশ্যই উপকৃত হবে। এ পাশাপাশি আমরা স্পোর্টস মেডিসিন, রেফারির মান উন্নয়নের বিষয়টিও চুক্তিতে রাখার চেষ্টা করছি।’ প্রথমত চুক্তিটি হবে চার বছরের জন্য। চুক্তিপত্রে দুই দেশের স্বাক্ষরের পর চার বছর পর্যন্ত কার্যক্রম থাকবে। তবে কোন পক্ষের আপত্তি না থাকলে চুক্তিটি পরবর্তীতে সমান মেয়াদের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়তে থাকবে।