আজ আসছে হেড কোচ

হাথুরুসিংহেকে পেয়ে উপকৃত হবে বাংলাদেশ-হেরাথ

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

আগের অভিজ্ঞতা থেকে এবারও দলকে সাফল্য এনে দেবেন হাথুরুসিংহে, নিশ্চিত বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। প্রধান কোচের দায়িত্বে যখন পরিবর্তন আসে, কোচিং স্টাফের অন্যদের মনেও নানা ভাবনা খেলা করে। নতুন করে মানিয়ে নেয়ার চ্যালেঞ্জ তো থাকেই। তবে সেদিক থেকে অনেকটাই নির্ভার বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। চান্দিকা হাথুরুসিংহের ভেতর-বাহির যে তিনি খুব ভালো করেই জানেন! পুরনো দায়িত্বে নতুন দফায় হাথুরুসিংহে সফল হবে বলেও বিশ্বাস লঙ্কান স্পিন গ্রেটের। দ্বিতীয় দফায় সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের কোচ হিসেবে কাজ শুরু করতে আজ সোমবার রাতে বাংলাদেশে আসার কথা হাথুরুসিংহের। আনুষ্ঠানিকভাবে তার মেয়াদ যদিও শুরু হয়ে গেছে এই মাসের শুরু থেকেই। তবে বিপিএলের কারণে জাতীয় দলের ব্যস্ততা ছিল না। বিপিএল শেষে এখন বাংলাদেশ দলকে প্রস্তুত করবেন তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সীমিত ওভারের সিরিজের জন্য।

হেরাথ অবশ্য ছুটি শেষে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বিসিবি একাডেমি মাঠে উঠতি ও সম্ভাবনাময় স্পিনারদের বিশেষ ক্যাম্প পরিচালনা করছেন তিনি শনিবার থেকে। ক্যাম্পের ফাঁকেই তিনি রোববার মুখোমুখি হলেন সংবাদ মাধ্যমের। স্পিনারদের নিয়ে কথার পাশাপাশি সেখানে থাকল হাথুরুসিংহের প্রসঙ্গও। স্বদেশি কোচকে নিয়ে উচ্ছ্বাসও ফুটে উঠল হেরাথের কণ্ঠে। ‘চান্দিকার ক্ষেত্রে ব্যাপারটি হলো, সে আগেও বাংলাদেশে কাজ করেছে। ওই সময় ভালো করেছে। তার সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা আছে আমার। পরে তার কোচিংয়েও খেলেছি আমি। এদিক থেকে তার ব্যাপারে আমার মূল্যায়ন ইতিবাচক। তার ওপর আমার বিশ্বাস আছে। আমি নিশ্চিত, তাকে পেয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট উপকৃত হবে।’ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগামী ১ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া সিরিজের জন্য হাথুরুসিংহের সঙ্গে পরিকল্পনা সাজানোর কাজটিও শুরু করে ফেলেছেন বলে জানালেন হেরাথ। ২০১৪ সালের জুনে প্রথমবার প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ দলে যোগ দেন হাথুরুসিংহে। ৩ বছরের বেশি সময় কাজ করার পর ২০১৭ সালে অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে থাকাকালেই পদত্যাগপত্র জমা দেন লঙ্কান কোচ। তার কোচিংয়ে তিন সংস্করণে ১০২ ম্যাচ খেলে ৪১টি জেতে বাংলাদেশ, হারে ৫১ ম্যাচে। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ওঠার মতো স্মরণীয় সাফল্যগুলো এসেছে হাথুরুসিংহের আমলেই। এছাড়া ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট জয়, পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সাফল্যও ছিল হাথুরুসিংহের প্রথম দফার দায়িত্বে।

তবে আসন্ন ইংল্যান্ড সিরিজের দলে নাসুম আহমেদকে বাদ দিয়ে তাইজুলকে নেয়ার সিদ্ধান্ত একান্তই নির্বাচকদের বলে জানালেন রঙ্গনা হেরাথ। দলে ফেরার মতো কিছু না করেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের স্কোয়াডে তাইজুল ইসলামের ডাক পাওয়ায় অবাক অনেকে। তবে নির্বাচকদের এই সিদ্ধান্তে কোনো সমস্যা দেখছেন না বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ একাদশের নিয়মিত মুখ হলেও সাদা বলে এখনও পায়ের তলায় শক্ত মাটি খুঁজে পাননি তাইজুল। প্রায় ৮ বছরের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলেছেন স্রেফ ১৪টি। তবে এক দিনের ক্রিকেটে ভালো করার সামর্থ্য আছে তাইজুলের, এমনটাই মনে করেন হেরাথ। ভারতের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডে সিরিজের দলে ছিলেন না তাইজুল। রঙিন পোশাকে সবশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন তিনি গত বছরের অগাস্টে, জিম্বাবুয়ে সফরে। তাইজুলকে দলে নিতে বাদ দেওয়া হয়েছে আরেক বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে। দুজনের জায়গা বদলের ব্যাপারে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু জানান, স্পিন কোচের চাহিদার কথা। সে অনুযায়ী টিম ম্যানেজম্যান্টের সঙ্গে আলোচনা করেই নেয়া হয় তাইজুলকে। তবে হেরাথ পরিষ্কার করেছেন, নাসুমের জায়গায় তাইজুলকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত তার ছিল না। বিসিবি একাডেমিতে চলমান স্পিন ক্যাম্পের ফাঁকে গতকাল রোববার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এই কথা বলেন তিনি।

‘(নাসুমকে বাদ দিয়ে তাইজুলকে নেয়ার সিদ্ধান্ত) পুরোপুরি নির্বাচকদের এবং অধিনায়ক-কোচও ছিলেন। আমি না। তাদের (নির্বাচক প্যানেল) যদি কোনো পরামর্শ বা তথ্য প্রয়োজন হয় পারফরম্যান্সের ব্যাপারে, আমি সবসময় সাহায্য করতে প্রস্তুত।’ অবশ্য তাইজুলের প্রতি নিজের ভালো লাগার বিষয়টিও গোপন রাখেননি হেরাথ। এখন পর্যন্ত সাফল্য না পেলেও, ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩১ বছর বয়সি স্পিনারের অনেক সম্ভাবনা দেখেন লঙ্কান কোচ। “আমি সবসময় তাইজুলকে পছন্দ করেছি। যেমনটা বললাম, সে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভালো করেছে। আমি তাইজুলের মধ্যে ওয়ানডে ক্রিকেটেও ভালো করার মতো প্রতিভা দেখতে পাই।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সবশেষ যে ম্যাচটি খেলেছে, তাইজুল সেটায় ভালো বোলিং (২৮ রানে ৫ উইকেট) করেছে। তো আমি তাইজুলকে এমন একজন হিসেবেই দেখি, যে ওয়ানডে ক্রিকেটেও ভালো বোলিং করতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের ওই ম্যাচের পর জিম্বাবুয়েতে দুটি ওয়ানডে খেলেছেন তাইজুল। যেখানে তার শিকার ৩ উইকেট। এরপর ভারতের বিপক্ষে সিরিজে জায়গা ধরে রাখতে পারেননি তিনি। বাদ পড়ার পর তেমনভাবে দলে ফেরার দাবিও জানাতে পারেননি তিনি। গত নভেম্বরে ৫০ ওভারের ম্যাচের সংস্করণে বিসিএলে প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেট নিলেও পরের দুই ম্যাচে থাকেন উইকেটশূন্য। এবারের বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে স্রেফ তিনটি ম্যাচে সুযোগ পান অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার। উইকেট পান কেবল ১টি। যে কারণে নাসুমকে বাদ দিয়ে তাকে দলে ফেরানো নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই উঠেছে অনেক প্রশ্ন। নাসুমের জায়গায় তাইজুলকে নেওয়ার সিদ্ধান্তে ভূমিকা না থাকলেও, এই সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন হেরাথ। সবকিছু আসলে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। সাকিব থাকলে আরও দুজন বাঁহাতি স্পিনারের প্রয়োজন নেই। মিরাজও আছে। তো নির্বাচকদের তাইজুল বা নাসুমের মধ্যে একজনকে নিতে হবে। দুজনের পারফরম্যান্সও এক। তাই আমার মতে নির্বাচকরা সেরাকেই বেছে নিয়েছে। তাইজুল-নাসুমদের নতুন চ্যালেঞ্জ জানাতে এগিয়ে আসছেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলাম। বিপিএলে ১৭ উইকেট নিয়ে তিনি ছিলেন সবার ওপরে। গত আসরেও নেন ১৬ উইকেট। এছাড়া ওয়ানডে সংস্করণের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও সবশেষ দুই আসরে আলো ছড়িয়েছেন ২৬ বছর বয়সী স্পিনার। এরই মধ্যে এইচপি ও ‘এ’ দলে খেলা তানভির যোগ দিয়েছেন হেরাথের স্পিন ক্যাম্পেও। এই বাঁহাতি স্পিনারের সঙ্গে কাজ করে ইতিবাচক মূল্যায়ন করেছেন হেরাথ। তানভিরকে দেখে আমি খুবই খুশি হয়েছি। ও বিপিএলে সবচেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছে। এর আগের টুর্নামেন্টগুলোতেও ভালো করেছে। এদিক থেকে বলব, এমন স্পিনার পাওয়া পুরো দলের জন্যই ভালো। কারণ তাইজুল-নাসুম এমনকি সাকিবেরও কিছু হলে, তাদের পেছনে আরও ক্রিকেটার তৈরি থাকবে। আমি খুব খুশি হয়েছি, তানভির এই অনুশীলনে যোগ দিয়েছে।