ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাথুরুর সামনে এবার অনেক চ্যালেঞ্জ

হাথুরুর সামনে এবার অনেক চ্যালেঞ্জ

২০১৭ সালে চুক্তির মাঝপথে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই যখন বাংলাদেশ জাতীয় দলের দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান, তখন চন্ডিকা হাথুরুসিংহের আচরণে কষ্ট পেয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কর্তারা। অনেকটা রূঢ়ভাবে বাংলাদেশকে বিদায় বলে চলে গিয়েছিলেন তিনি। স্পষ্ট জানিয়ে গিয়েছিলেন, এখানে আর দেওয়ার নেই কিছুই। সাড়ে পাঁচ বছর পর সেই একই ভূমিকায় আবার তার ফেরার অপেক্ষায় বাংলাদেশের ক্রিকেট। দুই বছরের জন্য তিন ফরম্যাটের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে গতকাল সোমবার রাত ৯টায় ঢাকায় নামার কথা দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেয়া হাথুরুসিংহে। আগের দফায় সেরা কিছু সাফল্য আনলেও বিতর্কও তৈরি করেছেন প্রবল, শেষটাও হয়নি সুন্দর। তবু তাকে ফিরিয়ে না আনা ছাড়া যেন উপায় দেখছিল না বিসিবি। আগামী ২ বছর বাংলাদেশের ক্রিকেট সাক্ষী হতে পারে বড় পালাবদলের। সেখানে মুখ্য ভূমিকায় দেখা যেতে পারে হাথুরুসিংহেকে। মাঠে ও মাঠের বাইরের উত্তাপ বেশ ভালোভাবেই টের পাওয়ার কথা তার। হয়ত এই সময়ে অনেক রকমের খবরের রসদও জোগাবেন তিনি ক্রিকেট বোর্ডের পূর্ণাঙ্গ আস্থা পেলেও লঙ্কান এই ‘কড়া হেডমাস্টার’কে সামলাতে হবে কঠিন কিছু চ্যালেঞ্জ।

নিশ্চিতভাবে তার প্রথম চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে দূরত্ব কমানো। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিন বছর দায়িত্ব পালন করার পর যখন হাথুরুসিংহে বাংলাদেশ ছাড়েন, তখন সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে একগাদা অভিযোগ করেছিলেন। ক্রিকেটারদের মানসিকতা ও নিবেদনের ঘাটতি নিয়ে বিরক্ত ছিলেন। বিশেষ করে দেশ ও দলের প্রতি সাকিবের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শ্রীলঙ্কান এ কোচ। তাকেই আবার বোর্ড ফিরিয়ে আনছে সাকিব, তামিম, মুশফিকদের ‘হেড মাস্টার’ বানিয়ে। গণমাধ্যমে হাথুরুসিংহের এসব বিরক্তি নিয়ে বলেছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। যদিও ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার কোচ হয়ে বাংলাদেশে আসার পর সেসব অস্বীকার করেছেন তিনি, ‘আসলে এটা সত্যি নয়। মিস্টার নাজমুল হাসান খুব চালাক, বুদ্ধিমান মানুষ। তিনি কিছু কারণে ওই মন্তব্য ব্যবহার করেছেন। হয়তো সাকিবকে ‘ফায়ার আপ’ করার জন্য কাজটা করতে পারেন। সাকিবকে এখন অধিনায়ক করা হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি সামলে নিতে তিনি বুদ্ধিমান।’

দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশকে বর্তমান অবস্থান থেকে আরো উঁচুতে নিয়ে যাওয়া। হাথুরুসিংহের প্রথম অধ?্যায়ে বাংলাদেশ বেশ কিছু বড় সাফল্য পেয়েছিল। ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল। ২০১৭ সালের চ?্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলেছিল সেমিফাইনাল। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ইংল?্যান্ডের মতো বড় দলের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল। তার হাত ধরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এখন বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম পরাশক্তি। তবে সময় বদলেছে। বেড়েছে প্রত্যাশা। সামনেই ২০২৩ বিশ্বকাপ, যা সাকিব, তামিমদের শেষ বিশ্বকাপ হতে পারে। তাদের নিয়ে ভালো কিছু করার চ্যালেঞ্জ হাথুরুসিংহের সামনে। বিসিবির পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন সেই কথাই বলছেন, ‘ওয়ানডেতে আমাদের পারফরম্যান্সটা এখনো ভালো আছে, ওয়ানডেতে নিশ্চিতভাবে আমি চাই সামনে বিশ্বকাপ আছে, আমরা আরো ভালো করি, আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হই।’ সঙ্গে অন্য দুই ফরম্যাট নিয়েও নিজের প্রত্যাশার কথা শুনিয়েছেন তিনি, ‘ভালোর তো কোনো সীমা পরিসীমা নেই, এখন আমরা যেখানে আছি, আমার মনে হয় কিছুদিন ধরে আমরা একটা জায়গাতে একটু আটকে আছি। টেস্ট ম্যাচে ভালো করছি না, টি-টোয়েন্টিতে ভালো করছি না। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে উন্নতিগুলো ওর হাত ধরে আসুক সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’

তৃতীয়ত, বাংলাদেশ ক্রিকেটে হাথুরুসিংহে মানেই ছিল একক আধিপত্য। শুধু মাঠের ক্রিকেটেই নয়, মাঠের বাইরে ক্রিকেটীয় প্রশাসনেও ছিল তার প্রভাব। বিসিবির অনেক সিদ্ধান্তকেই তিনি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রথম অধ্যায়ে। দল নির্বাচনে নিজের ছড়ি ঘুরাতেন। শোনা যায়, নির্বাচকরাও ছিলেন অসহায়। যখন যাকে চাইতেন তাকেই দলে নিতেন। মাঠে খেলোয়াড়রা পারফর্ম করায় তার সব ‘দোষ’ মাফ হয়ে যেত। তবে পুরোনো হাথুরুসিংহে এবার সেই বিশেষ ক্ষমতা পাবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। দল নির্বাচন ব্যবস্থা কেমন হবে তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা।

চতুর্থ চ্যালেঞ্জ বর্তমান তারকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার। হাথুরুসিংহের প্রথম অধ্যায়ে লিটন, মোস্তাফিজ, মিরাজ, তাসকিনরা ছিলেন একেবারেই নতুন। এখন তারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় নাম। সাফল্যের বড় স্তম্ভ। প্রথম অধ্যায়ে এই চার ক্রিকেটারসহ অনেককেই নতুনের মতো করে সামলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তাদের অনুশীলন, ইন ফিল্ড-অফ ফিল্ড সব কিছুতেই ছিল কোচের নেতৃত্ব। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় লিটন, তাসকিনরা নিজেদের অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছেন। তারাও বুঝতে পারেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পথচলার কৌশল। পুরোনো হাথুরুসিংহে আগের কড়া হেডমাস্টার চরিত্রে থাকলে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যক্তিত্বের সংঘাত হতে পারে এমনটাও ধারণা করছেন কেউ কেউ।

অধিনায়কের সঙ্গে তার রসায়ন পঞ্চম চ্যালেঞ্জ। হাথুরুসিংহের আমলে ওয়ানডেতে উন্নতির পথে সমান ভূমিকা রেখেছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ব্যক্তিত্বের সংঘাতে না গিয়ে দলের চিন্তায় মাশরাফি সব সময়ই ভালো সম্পর্ক রেখে কোচকে সামলে নিতেন। তবে নিজের পছন্দ, সিদ্ধান্তে আপোষ করতেন না। ঠিক উল্টো ছিল সাকিবের সঙ্গে তার রসায়ন। টেস্ট অধিনায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর হাথুরুসিংহের সঙ্গে তার বনিবনা হতো কম সময়ই। ব্যক্তিত্বের সংঘাত তো ছিলই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত