ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঢাকা পৌঁছেই মাঠে হাথুরুসিংহে

ঢাকা পৌঁছেই মাঠে হাথুরুসিংহে

২০১৭ সালে বাংলাদেশের চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর একবার এসেছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে হেড কোচ হয়ে নিজ দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ওই সফরে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দুটি টেস্টও খেলেছিল। এবার হাথুরুসিংহের আসাটা আবার ভিন্ন। বাংলাদেশ ক্রিকেটে দ্বিতীয় দফায় কোচ হয়ে ফিরেছেন। তার প্রথম অধ্যায়ে বাংলাদেশ বেশ কিছু বড় সাফল্য পেয়েছিল। ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে, ২০১৫ সালে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলেছিল সেমিফাইনাল। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের মতো বড় দলের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল। তার হাত ধরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এখন বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম পরাশক্তি। তবে সময় বদলেছে, বেড়েছে প্রত্যাশা। সামনেই ২০২৩ বিশ্বকাপ। যা সাকিব, তামিমদের শেষ বিশ্বকাপ হতে পারে। তাদের নিয়ে ভালো কিছু করার চ্যালেঞ্জ হাথুরুসিংহের সামনে। ক্রিকেটার কাজী নুরুল হাসান সোহানও গতকাল জানালেন, পরিকল্পনা নিয়েই হাথুরুসিংহে দায়িত্ব গ্রহণ করতে এসেছেন। সেসব পরিকল্পনা কি তা নিয়ে কোনো ধারণা দিতে পারলেন না।

পুরোনো দায়িত্বে নতুন করে ফেরা কোচ হাথুরুসিংহে বাংলাদেশে আসার পর ১২ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে চলে আসেন মাঠে। তবে সবার আগে এলেও হাথুরুসিংহে মাঠে ঢোকেন ১১টার একটু পর। সাদা টিশার্ট ও শর্টসের সঙ্গে ক্যাপ পরা এই শ্রীলঙ্কানকে দূর থেকে চেনা যাচ্ছিল। হালকা গা গরম করছিলেন ক্রিকেটাররা। বিসিবির হেড অব প্রোগ্রাম ডেভিড মুরের সঙ্গে মাঠে পা রেখে শুরুতে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে দেখা হয় হাথুরুসিংহের। নতুন মেয়াদে আসা পুরোনো কোচকে দেখে একে একে এগিয়ে আসতে থাকেন ক্রিকেটাররা। ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল কথা বলেন হাথুরুসিংহের সঙ্গে। ইবাদত হোসেন এগিয়ে আসতেই স্যালুট ঠুকে দেন প্রধান কোচ, বোঝা গেল, এই পেসারের উইকেট শিকারের উদযাপন তার নজর কেড়েছে ভালোভাবেই! ঐচ্ছিক অনুশীলনে থাকা নুরুল হাসান সোহান পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথোপকথনে বলেন, ক্রিকেটারদের সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়েই এসেছেন হাথুরুসিংহে, ‘আমার কাছে যেটুকু মনে হয়, পরিকল্পনার দিক থেকে ও (হাথুরুসিংহে) খুব ভালো এবং টেকনিক্যাল যে জিনিসগুলো আছে, ও সেভাবে হোমওয়ার্ক করে এসেছে। এই জিনিসটা আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছুই হবে।’ নাসুম আহমেদের জায়গায় ওয়ানডে দলে ফেরা তাইজুল ইসলামের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ আলাদাভাবে কথা বলতে দেখা যায় হাথুরুসিংহেকে। এরপর ধীর পায়ে সেন্টার উইকেটের দিকে এগিয়ে যান তিনি। তার সঙ্গী হন অধিনায়ক তামিমও। শের-ই বাংলার প্রধান কিউরেটর গামিনি সিলভার সঙ্গে লম্বা সময় কথা বলতে দেখা যায় হাথুরুসিংহেকে। তামিমকেও তখন কিছু একটা বলতে দেখা যায়।

তাদের কথোপকথন চলার সময়ই মাঠে আসেন বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ। হাথুরুসিংহেকে দেখে উইকেটের কাছে দেখে এগিয়ে যান তিনি। হাসিমুখে আলিঙ্গন করেন দুজন। একপর্যায়ে গামিনির সঙ্গে কথায় বিরতি টেনে ইনডোরের পথে পা বাড়ান জাতীয় দলের প্রধান কোচ। ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সের সঙ্গে ইনডোরের বাইরের উইকেটে আগে থেকে অনুশীলন করছিলেন আফিফ হোসেন, মাহমুদুল হাসান জয়, নুরুল হাসান সোহান, তৌহিদ হৃদয়রা।

ইনডোরে ঢুকে স্বদেশী রঙ্গনা হেরাথের সাক্ষাৎ পান হাথুরুসিংহে। তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে দূর থেকেই ব্যাটিং অনুশীলন দেখেন তিনি। মূল মাঠে ফেরার পথে ঢু মারেন সংস্কারাধীন ইনডোরেও। এরপর মূল মাঠে ঢুকে আবারও বেশ কিছুক্ষণ গামিনির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরে ঢুকে যান ড্রেসিংরুমে। প্রায় ঘণ্টাখানেকের এই কুশল বিনিময় ও হালকা কথাবার্তার পর্বের পুরোটা সময় হাথুরুসিংহের সঙ্গে ছিলেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির ডেপুটি ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফীস। ড্রেসিং রুমে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করে দুপুর ২টার আশপাশে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান হাথুরুসিংহে। ড্রেসিং রুমে থাকার সময় ক্রিকেটারদের সঙ্গে তার তেমন বিশেষ কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান সোহান।

ইংল্যান্ড সিরিজের আগে জাতীয় দলের আনুষ্ঠানিক অনুশীলন শুরু আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে। তার আগেই ঐচ্ছিক অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন অনেকে। ব্যক্তিগত কারণে ছুটিতে থাকায় এদিন ছিলেন না সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান ও লিটন দাস। প্রথম দুই ওয়ানডের জন্য ঘোষিত স্কোয়াডে না থাকলেও অনুশীলনে ছিলেন জয়-সোহানসহ ইয়াসির আলি চৌধুরি, নাসুম, শরিফুল ইসলাম ও রেজাউর রহমান রাজারা।

২০১৪ সালের জুনে প্রথমবার প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ দলে যোগ দেন হাথুরুসিংহে। তিন বছরের বেশি সময় কাজ করার পর ২০১৭ সালে অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে থাকাকালেই পদত্যাগপত্র জমা দেন লঙ্কান কোচ। তার কোচিংয়ে তিন সংস্করণে ১০২ ম্যাচ খেলে ৪১টি জেতে বাংলাদেশ, হারে ৫১ ম্যাচে।

২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ওঠার মতো স্মরণীয় সাফল্যগুলো এসেছে হাথুরুসিংহের সময়েই। এছাড়া ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট জয়, পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সাফল্যও ছিল হাথুরুসিংহের প্রথম দফার দায়িত্বে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত