ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব

গ্রুপিংয়ের থাবায় বাংলাদেশের ক্রিকেট!

গ্রুপিংয়ের থাবায় বাংলাদেশের ক্রিকেট!

রীতিমতো বোমা ফাটানোর মতোই খবর দিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে চলছে গ্রুপিং। যা নিয়ে বেশ ভীত বোর্ড প্রধান। পছন্দের খেলোয়াড় দলে নেয়া, বারবার সুযোগ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা, ভালো সম্পর্কের সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোচদের আস্থা অর্জন করার ঘটনা ঘটছে। অনেকদিন ধরেই এসব চলছে বলে দাবি বিসিবি সভাপতির। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি এসব জানতে পেরেছেন। ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েব সাইট ক্রিকবাজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাজমুল হাসান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা- এই গ্রুপিং এবং এটাই বাস্তবতা। আমার আর কিছুতে সমস্যা নেই। আমি শুধুমাত্র এই গ্রুপিং নিয়ে ভীত এবং আমি সম্প্রতি এ ব্যাপারে জানতে পেরেছি। বিশ্বকাপেও তাদের হোটেলে না থাকা সত্ত্বেও যা দেখেছি, শুনেছি আমি বিশ্বাস করতে পারছি না এটা কীভাবে সম্ভব। সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখতে হলে আমাদের এর অবসান ঘটাতে হবে, কারণ একটা জিনিস সবারই বোঝা দরকার তা হল গ্রুপিং করার সুযোগ নেই।’

সাকিব ও তামিমের এখন মাঠের ক্রিকেট ছাড়া খুব একটা দেখা হয় না। ফলে তাদের পারস্পরিক সর্ম্পকের অবনতি শুধুমাত্র দলের ক্রিকেটাররাই প্রকাশ্যে দেখে থাকেন। কিন্তু কয়েকদিন আগে একটি পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে দুই জনের দেখা হলেও কেউ কারও সঙ্গে ন্যুনতম হাই, হ্যালো পর্যন্ত করেননি! তারকা ক্রিকেটাররদের সাামজিক কোনো অনুষ্ঠানে দেখা হলেও ভক্তরা তাদের ঘিরে ভিড় করে থাকেন। সেলফি তোলার চেষ্টা করে থাকেন। সেখানে তাদের ন্যূনতম সৌজন্যতা দেখিয়ে কথা না বলাতে বিষয়টি উপস্থিত কারও নজর কাড়েনি। যারা জানতেন না, তারাও বিষয়টি সে দিন জেনে যান। দুইজনের এ সম্পর্ক মধুর করে তুলতে গিয়ে নিজের না পারার কথা উল্লেখ করে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘ড্রেসিং রুমের জন্য এটি কোনো ভালো খবর নয়। আমি তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছিল। কথা বলেছি দুই জনের সঙ্গেই। কথা বলার পর যা বুঝতে পেরেছি, তাতে করে মনে হয়েছে এই সমস্যা আপাতত সমাধান সম্ভব নয়।’ বিষয়টি সমাধান করতে না পারলেও বিসিবি সভাপতি দুই জনকেই কড়া বার্তা দিয়ে রেখেছেন, যাতে করে তাদের এই দ্বন্দ্বের প্রভাব কিছুতেই মাঠে না পড়ে। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের দুই জনকেই একটি বার্তা দিয়েছি। তাদেরকে জানিয়েছি দুই জনের মাঝে কী হয়েছে আমি জানি না। তার প্রভাব যেন খেলা চলাকালীন কিছুতেই প্রভাব না ফেলে। তারা আমাকে আস্বস্ত করেছে।’ দুই জনের সর্ম্পকের উন্নতি করকে না পারলেও তিনি কথা বলার পর সেখানে কিছুটা হলেও পরিবেশ উন্নতি হয়েছে বলে জানান নাজমুল হাসান পাপন। তিনি বলেন, ‘ খেলার মাঠে, ড্রেসিং রুমে দুই জনকেই কথা বলতে হয়। কিন্তু কথা না বলাতে ড্রেসিং রুমের পরিবেশ ভালো ছিল না। এখন কিছুটা হলেও সেখানে উন্নতি হয়েছে। এই রকম পরিবেশ আমি ইংল্যান্ডে বিপক্ষে সিরিজ থেকে চাই বলে জানিয়ে দিয়েছি। তাদের বাইরের কোনো কিছু নিয়ে আমার চিন্তা নেই।’

দলের দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের সর্ম্পকের অবনতি থেকে তা অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে। সৃষ্টি হয় গ্রুপিং। যা একটি দলের উন্নতির পথে খুব বেশি অন্তরায়। এ নিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটে বর্তমানে এই গ্রুপিং খুব বড় সমস্যা। এটাই নিমর্ম বাস্তবতা। এ ছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই।’ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময় ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপে আমি তাদের হোটেলে ছিলাম না। না থাকার পরও যা শুনেছি, তা বিশ্বাস করতে পারিনি। আগামীর পথ সুন্দর করতে হলে সুন্দর ভবিষ্যৎয়ের জন্য এ রকম সমস্যার অবসান ঘটাতেই হবে। কারণ, একটা বিষয় সবারই বোঝা প্রয়োজন, এখানে গ্রুপিং করার কোনো সুযোগ নেই।’

তবে এসব সমস্যার সমাধানের জন্য চন্ডিকা হাথুরুসিংহকে উপযুক্ত মনে করছেন নাজমুল হাসান। বিসিবি সভাপতির বিশ্বাস প্রধান কোচ নিজে এসবের সমাধান করতে পারবেন, ‘হাথুরুসিংহে আসার পর আমার মনে হচ্ছে নতুন কোনো একটা সমস্যা হতে পারে। আমি এখনই তা বলতে চাচ্ছি না। আমি আশা করবো সমস্যাটা যেন বড় না হয়। তবে সে ড্রেসিংরুমে কোনো কিছুর প্রশ্রয় দেবে না। এটাও একটা আবার সমস্যা। হয় সবাইকে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে, নয়তো সে চলে যাবে, কারণ সে এমনই। সে যে বাংলাদেশকে আগে পরিচালনা করেছিল এবং যে দলটি সে নিচ্ছে তার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি অধিনায়ক ও সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে বসে কথা বলবো। হাথুরুসিংহের সাথে আমার কথা হলেও অনেকদিন পর আসায় তার সাথে দীর্ঘ আলোচনা করতে চাইনি। তাকে পরিস্থিতি বোঝার জন্য আমি কিছুটা সময় দেই। এরপর আমরা তার মতামত নিতে পারি।’

হাথুরুসিংহে বেশ কঠোর হবেন বলে জানিয়ে রাখলেন নাজমুল হাসান, ‘কিন্তু সমস্যা আছে, কয়েকজন কোচের মধ্যে তাদের পছন্দের খেলোয়াড় বাছাই করার এবং তাকে দলে রাখার প্রবণতা রয়েছে কারণ তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা তাকে বাদ দিতে পারে না। হাথুরুসিংহে এটা মেনে নেবে না। সে সুযোগ দেবে এবং দেখবে, কিন্তু যদি কোনো খেলোয়াড় ভালো না করে তাহলে কোনো না কোনো সময়ে সে হস্তক্ষেপ করবে।’

দ্বিতীয় মেয়াদে জাতীয় দলের হয়ে কাজ শুরু করা লঙ্কান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের সর্ম্পক আগে ভালো ছিল না। এবার তার দ্বিতীয় মেয়াদে এটিকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখছিলেন। এ নিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘দলের সিনিয়র ক্রিকেটার যারা আছেন, তারা যদি পারফরম করতে না পারেন, কোচ তাদেরকে নিশ্চয় দলে রাখবেন না।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত