কিংস ও দরিয়েলতনের দাপট

প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শফিক কলিম

২০২২-২৩ প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বের খেলা শেষ হলো গতকাল। টানা চতুর্থ লিগ শিরোপা জয়ের মিশনে নামা বসুন্ধরা কিংসের দুর্বার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। প্রথম লেগের সবগুলো ম্যাচ জিতে ১০ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে এককভাবে শীর্ষে আছে অস্কার ব্রুসনের দল। দেশের ফুটবলের ঐতিহ্যবাহী দুই দলের মধ্যে আবাহনী মোটামুটি উজ্জ্বল, মোহামেডান বড়ই বিবর্ণ। হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন কিংসের সঙ্গে পেশাদার লিগের সবচেয়ে সফল দল ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর ব্যবধান ৯ পয়েন্টের, ২১ পয়েন্ট নিয়ে আছে দুইয়ে। প্রথম পর্বে অপরাজিত থেকে ছুটছিল কেবল কিংস ও আবাহনী। দুই দল মুখোমুখি হয় দশম রাউন্ডে। আবাহনীকে প্রথম হারের তেতো স্বাদ দিয়ে কিংস তুলে নেয় শতভাগ সাফল্য। তিনটি করে জয় ও ড্র এবং চার ম্যাচে হারা মোহামেডান (১২, ১৫/১২) গোলগড়ে নবাগত ফর্টিস এফসিকে (১২, ৯/১০) টপকে আছে ছয়ে।

প্রথম পর্বের শেষটায় ২০১১২-১৩ মৌসুমের ট্রেবলজয়ী শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সঙ্গী হলো হারের হতাশা। দারুণ জয়ের উচ্ছ্বাসে ভেসেছে দুইবারের রানার্সআপ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। মুন্সীগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে গতকাল শনিবার সবশেষ ২০১৪-১৫ মৌসুমে শীর্ষ দুইয়ে থাকা শেখ রাসেলকে (রানার্সআপ) ১-০ গোলে হারায় মুক্তিযোদ্ধা। এই জয়ের পর ১০ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে আটে থেকে প্রথম পর্ব শেষ করেছে অলরেডরা। রেলিগেশন শঙ্কায় থাকা চট্টগ্রাম আবাহনীর সাথে ১-১ গোলে ড্র করে শেখ রাসেলকে (১৪) টপকে তিন নম্বরে থেকে প্রথম পর্ব শেষ করেছে পুলিশ এফসি (১৫)। তিনবারের চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল (১৪, ১৬/১৭) গোলগড়ে আছে শেখ রাসেলের (১৫/১৩) পেছনে, পাঁচ নম্বরে। নবাগত উত্তরা এফসি (২) আছে তলানিতে। রেলিগেশন অঞ্চলে রয়েছে পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ (৯) ও চট্টগ্রাম আবাহনী (৭)।

মুক্তিযোদ্ধার রক্ষণে চিড় ধরল, কিন্তু সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলেন না এমফন উদোহ, ইব্রাহিমরা। পাল্টা আক্রমণে গোলের আশা জাগালেন সজীব-বকররা, কিন্তু পূর্ণতা দিতে পারলেন না তারাও। ফলে গোলশূন্য থাকল প্রথমার্ধ। শুরুর দিকে উদোহ বক্সে বল পেয়ে দেরি করে শট নিতে পারেননি। এমপিয়া মাপুকুর হেডও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। শেখ রাসেলের আক্রমণ সামলে ওঠা মুক্তিযোদ্ধা ২৬ মিনিটে ভালো সুযোগ পায়। কিন্তু আবু বকর বল নিয়ে বক্সে গোলরক্ষকে ফাঁকায় পেয়েও পারেননি। ওয়ান-অন-ওয়ানে তার শট আটকে শেখ রাসেলের ত্রাতা আশরাফুল রানা। ৪০ মিনিটে চলন্ত বলে আমিনুর রহমান সজীব জোরালো শট আটকে শেখ রাসেলকে স্বস্তিতে রাখেন রানা। বিরতির বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে উদোহ লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে হতাশা বাড়ান। তবে পরের বার আর কোনো প্রতিরোধ গড়ার সুযোগই পেলেন না রানা। ফ্রি কিক আটকাতে পোস্ট ছেড়ে একটু বেরিয়ে এসেছিলেন শেখ রাসেল গোলরক্ষক। নিখুঁত হেডে তার মাথার উপর দিয়ে জালে বল জড়িয়ে ম্যাচের ডেডলক খোলেন সজীব। পরের মিনিটেই এই ফরোয়ার্ডের দূরপাল্লার শট পোস্ট কাঁপিয়ে ফিরে। বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা উদোহকে আটকাতে কাছের পোস্টে অবস্থান নিয়েছিলেন গোলরক্ষক মেহেদি হাসান শ্রাবন। তাতে পোস্ট হয়ে গিয়েছিল উন্মুক্ত। উদোহর কাট ব্যাকে বল পেয়ে অবিশ্বাস্যভাবে ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন ইব্রাহিম। প্রথম পাঁচ ম্যাচে হারের পর প্রথম জয়ের স্বাদ পেয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা। এক ড্রয়ের পর ফের জিতেছিল তারা। কিন্তু এরপর টানা দুই ম্যাচ হেরে বসে দলটি। সজীবের গোল আগলে রেখে জয়ের ফেরার সঙ্গে দ্বিতীয় পর্ব শুরুর আত্মবিশ্বাসও সঞ্চয় করে নিল তারা।

দরিয়েলতন-স্টুয়ার্টের লড়াই

সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার লড়াই অবশ্য জমে উঠেছে। এ লড়াই মূলত চলছে কিংসের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড দোরিয়েলতন গোমেস নাসিমেন্তো ও শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্টের মধ্যে। দুজনের গোল ৯টি করে। ৭টি করে গোল আছে আবাহনীর এলিটা কিংসলে ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের এমফন উদোহর।

গোলদাতার পাতায় নাইজেরিয়ান থেকে বাংলাদেশি হয়ে যাওয়া কিংসলে সবচেয়ে উজ্জ্বল। বসুন্ধরা কিংসে থাকাকালীন সেরা একাদশে ছিলেন অনিয়মিত। আবাহনীতে এসে হয়েছেন নিয়মিত। প্রতিদানও দিয়েছেন এরই মধ্যে ৭ গোল করে। স্থানীয়দের মধ্যে উল্লেখ করার মতো তেমন কেউ নেয়। উত্তরা এফসির জালে সবশেষ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ও নাবিব নেওয়াজ জীবনের গোল ৩টি করে।